বিসিবির গত কমিটি দীর্ঘ অপেক্ষার পর বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থা করার উদ্যোগ নিয়েছিল। এতে নিজেদের ক্রিকেট উন্নয়ন বা সব ধরনের কার্যক্রম নিজেরাই পরিচালনা করতে পারতো দেশের বিভিন্ন বিভাগগুলো।
এই রকম উদ্যোগ থামানোর পাশাপাশি ঢাকার ও ঢাকার বাইরের ক্লাব কাউন্সিলর কমানো এবং আরও কিছু নীতিমালায় পরিবর্তন এনে গঠনতন্ত্র সশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে বিসিবি। গঠনতন্ত্র সংশোধন বিষয়ক কমিটির প্রাথমিক প্রস্তাবনায় ঢাকার ক্লাবগুলোর পরিচালক ও কাউন্সিলর সংখ্যা ব্যাপক হারে কমানো হয়েছে।
গঠনতন্ত্র সংশোধন কমিটির এই প্রস্তাবনা সংবাদ মাধ্যম ও ক্রিকেট সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রে জানতে পেরেছে ঢাকার ক্লাবগুলো। যা মেনে নিতে পারেনি তারা। ৩ দিনের মধ্যে এই প্রস্তাবনা বাতিল না করলে কোন ক্লাবই বিসিবির অধীনে না খেলার সিদ্ধান্ত জানিয়েছে। মঙ্গলবার এক মতবিনিময় সভার মাধ্যমে এমন সিদ্ধান্তের জোড় প্রতিবাদ জানিয়েছেন ক্লাব প্রতিনিধিরা।
তবে এসব সংশোধনের কোন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি বলে সকাল সন্ধ্যাকে জানিয়েছে বিসিবি। সংশোধন কমিটির সদস্য নাজমুল আবেদীন ফাহিম ব্যাপারগুলোকে প্রাথমিক আলোচনা বলেছেন।
আলোচনা যে অবস্থাতেই থাকুক, ক্লাব প্রতিনিধিরা তা গ্রহণ করবেন না বলে জানিয়েছেন। মঙ্গলবার এক মতবিনিময় সভা করে ৬৭ ক্লাবের প্রতিনিধিরা এমন সংশোধন বাতিল করার দাবি তোলেন।
সেই মতবিনিময় সভা শেষে বিশিষ্ট ক্রীড়া সংগঠক এবং ক্লাব সংগঠনের সভাপতি রফিকুল ইসলাম বাবু বলেন, ‘গঠনতন্ত্র সংশোধন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ক্রিকেটকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করা হচ্ছে। আমরা ঢাকার সকল ক্লাবের পক্ষ থেকে বিসিবিকে ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিলাম। এই সময়ের মধ্যে তারা যদি এই সংশোধনের প্রক্রিয়া নিয়ে কোনো পদক্ষেপ না নেয় তাহলে আমরা শনিবার বোর্ড সভাপতির সঙ্গে বসব। সেখানেও কোনো সমাধান না হলে ঢাকার ক্লাবগুলো খেলায় অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকব।’
মোহামেডান ক্লাবের সিনিয়র কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম টিটু ক্রিকেটের মানুষ। মোহামেডান ক্রিকেট দল নিয়েই তার সময় কাটে। বিসিবির সশোধনী প্রস্তাবনা ক্লাব ক্রিকেটের জন্য খুবই ক্ষতিকর বলে মনে করছেন তিনি।
সকাল সন্ধ্যাকে জানিয়েছেন, “ক্রিকেট সংগঠকরা ক্লাব ক্রিকেটের প্রাণ। তারা যেভাবে ক্রিকেটকে ভালোবাসে তা সংগঠক ছিলেন না এমন কারো পক্ষে বোঝা কষ্টকর। দীর্ঘদিন ধরে যারা ক্লাব ক্রিকেটের সঙ্গে ছিলেন তাদের সরিয়ে বিসিবিতে উড়ে এসে জুড়ে বসা লোকদের আধিপত্য ক্রিকেটের জন্যই ক্ষতিকর। আমরা আমাদের দাবি জানিয়েছি। সময় মতো পদক্ষেপ না নেওয়া হলে আমরা কোন ক্লাবই কোন ক্রিকেটারের সঙ্গে দলবদলের জন্য যাব না।”
বিসিবির গঠনতন্ত্র সংশোধনী কমিটিতে আছেন নাজমুল আবেদীন ফাহিম। এছাড়া বিসিবির আইনগত বিষয় দেখভাল করা তিনজন আইনজীবী এবং জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের একজন সদস্য আছেন।
গঠনতন্ত্রের প্রস্তাবনা বিষয়গুলো এখনই কার্যকর করা হয়নি বলে জানিয়েছেন পরিচালক ফাহিম, “সংশোধনের যে বিষয়গুলো এসেছে, ওগুলো আমরা কেবল আলোচনা করেছি। প্রস্তাব আকারেও বিসিবিতে যায়নি। যাওয়ার পরে সেগুলো নিয়ে আলোচনা হবে, গৃহীত হলে এরপর মেনে নেওয়া বা না নেওয়ার কথা উঠবে।”
ফাহিম যোগ করেন, “এখন যেটা হয়েছে, হয়তো আমরা কমিটিতে যে আলোচনা করেছি সেই বিষয়গুলো কোনোভাবে বাইরে ছড়িয়েছে। সেখানে ক্লাব কর্মকর্তাদের স্বার্থের যে জায়গাটা (বিসিবির কাউন্সিলর কমে যাওয়া) সেটা তাদের চোখে লেগেছে। এনিয়ে তারা নিজেদের মতো আলোচনা করেছে।”
বিসিবির বর্তমান গঠনতন্ত্র অনুযায়ী পরিচালক সংখ্যা ২৫। ঢাকার ক্লাবগুলো থেকে ১২ জন, জেলা-বিভাগীয় পর্যায় থেকে ১০, সাবেক ক্রিকেটার কোটা থেকে এক ও জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ থেকে ২ জন মিলে গঠিত হয় পরিচালনা পর্ষদ।
গঠনতন্ত্র সংশোধনের প্রাথমিক খসড়ায় ঢাকার ক্লাবগুলোর মধ্যে পরিচালক সংখ্যা ১২ থেকে চার এবং কাউন্সিলর সংখ্যা ৭৬ থেকে কমিয়ে মাত্র ৩০ (প্রিমিয়ার ১২, প্রথম বিভাগ ৮, দ্বিতীয় বিভাগ ৬ ও তৃতীয় বিভাগ ৪ ) করা হয়েছে।