২০২৩-২৪ অর্থ বছরের বাজেটে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের জন্য বরাদ্দ ১ হাজার ৩০৩ কোটি টাকা। শুধু ক্রীড়ার বাজেট ৫০০ থেকে ৬০০ কোটি টাকার মতো। অথচ একজন ফুটবল কোচ এই অর্থের দ্বিগুণ কামিয়ে নিয়েছেন ছয়বার বরখাস্ত হয়েই! তিনি হোসে মরিনহো। চাকরি হারিয়ে ক্ষতিপূরণ থেকে তার আয় দাঁড়িয়েছে ৮০ মিলিয়ন পাউন্ড, বাংলাদেশি মুদ্রায় ১ হাজার ১১২ কোটি টাকা!
আজ (মঙ্গলবার) ইতালিয়ান ক্লাব রোমা থেকে বরখাস্ত হয়েছেন মরিনহো। অথচ চলতি মৌসুমেই চুক্তির মেয়াদ শেষ হতে যাওয়া এই কোচ অপেক্ষায় ছিলেন নতুন চুক্তির। কিন্তু চলতি চুক্তির মেয়াদই শেষ করতে পারলেন না তিনি। এ নিয়ে কোচিং ক্যারিয়ারে ষষ্ঠবার ছাঁটাই হয়ে ক্লাব ছাড়লেন ৬০ বছর বয়সী কোচ। চলতি মৌসুমে রোমার বাজে পারফরম্যান্স তার চাকরি হারানোর মূল কারণ।
২০০৪ সালে পোর্তোকে চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতে হইচই ফেলে দিয়েছিলেন মরিনহো। কোচিংয়ে তার খ্যাতি ও উত্থান তখন থেকেই। এরপর পরিণত হন বিশ্বের সবচেয়ে দামি কোচে। কিন্তু ক্যারিয়ারে শুধু সফলই হয়েছেন, তা নয়। বড় বড় ক্লাবকে যেমন ট্রফি দিয়েছেন তেমনি ক্লাবগুলো থেকে ফিরতেও হয়েছে ব্যর্থতার দায় নিয়ে। তার ঠোঁটকাটা স্বভাবও চাকরি হারানোর অন্যতম কারণ। যেমন রোমার ডাগ আউটে দাঁড়িয়ে রেফারির সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করে কয়েকবার লাল কার্ড দেখেছেন।
তবে চাকরি হারিয়ে মরিনহো যে পরিমাণ অর্থ যোগ করেছেন অ্যাকাউন্টে, তাতে বরখাস্ত হওয়াও মন্দ নয়। ষষ্ঠবার চাকরি হারানোর পর সব মিলিয়ে ক্ষতিপূরণের অঙ্কটা বাংলাদেশের চলতি ক্রীড়া বাজেটের দ্বিগুণ। এই পর্তুগিজ কোচের ক্যারিয়ার কিন্তু এখানেই শেষ নয়। আরও চাকরি হারাবেন, আরও আয় হবে। সুবাদে অঙ্কটা আরও বড় হবে বৈকি।
Thanks for everything on behalf of everyone at AS Roma, José! #ASRoma pic.twitter.com/yYkKgF7Rhh
— AS Roma English (@ASRomaEN) January 16, 2024
চেলসি থেকে বরখাস্ত হয়ে মরিনহোর অ্যাকাউন্টে জমা হয় ২৬ মিলিয়ন পাউন্ড। দুই দফা ব্লুদের সঙ্গে বিচ্ছেদ হয়েছে চাকরি হারিয়ে। ২০০৭ সালে প্রথম দফায় ছাঁটাই হয়ে ক্ষতিপূরণ পেয়েছিলেন ১৮ মিলিয়ন পাউন্ড। এরপর দ্বিতীয় দফায় চাকরি হারিয়ে পেয়েছিলেন ৮.৩ মিলিয়ন পাউন্ড।
পরে আরও ১৭ মিলিয়ন পাউন্ড যোগ হয় রিয়াল মাদ্রিদের চাকরি হারিয়ে। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড থেকে বরখাস্ত হন মরিনহো। এর মাত্র কয়েক মাস আগে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত নতুন চুক্তি করেছিলেন তিনি। কিন্তু ম্যানচেস্টারের ক্লাব তার ওপর আস্থা রাখতে না পেরে ২০ মিলিয়ন পাউন্ডের রফাদফায় বিদায় করে দেয় তাকে।
এরপর দাঁড়ান টটেনহামের ডাগ আউটে। ইংলিশ ক্লাবটির সঙ্গে ১৭ মাসের সম্পর্ক ছিন্ন হয় চাকরি হরিয়ে। অথচ তখনও দুই বছরের চুক্তি বাকি ছিল মরিনহোর। শেষমেশ ১৫ মিলিয়ন পাউন্ডের ক্ষতিপূরণ নিয়ে লন্ডনের ক্লাব ছাড়েন তিনি।
আর সবশেষ রোমায় বরখাস্ত হয়ে মরিনহো পাচ্ছেন ৩ মিলিয়ন পাউন্ড। আগের ক্ষতিপূরণগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কম। কারণটা চুক্তির মেয়াদ চলতি মৌসুমেই শেষ হতো বলে। সব মিলিয়ে ‘ক্ষতিপূরণ কিং’ মরিনহো। চাকরি হারিয়েই তার আয় ৮০ মিলিয়ন পাউন্ড। চাকরি হারানো কোচদের মধ্যে সর্বোচ্চ আয়।
মরিনহোর পর চাকরি হারিয়ে সবচেয়ে বেশি আয় করেছেন আন্তোনিও কন্তে। ইতালিয়ান কোচ ক্ষতিপূরণ বাবদ ক্লাব থেকে পেয়েছেন ৩৭ মিলিয়ন পাউন্ড। এর মধ্যে ২০১৮ সালে চেলসির চাকরি হারিয়েই পেয়েছিলেন ২৬ মিলিয়ন পাউন্ড।
২০২১ সালের মে মাসে আড়াই বছরের চুক্তিতে রোমাতে যোগ দিয়েছিলেন মরিনহো। তার ক্ষুরধার মস্তিষ্কে ইতালিয়ান ক্লাবটি ২০২২ সালে জেতে উয়েফা কনফারেন্স লিগের শিরোপা। তাতে ১৯৬১ সালের পর প্রথমবার ইউরোপিয়ান ট্রফি ফেরে রোমার ঘরে।
গত বছরও রোমাকে তুলছিলেন ইউরোপা লিগের ফাইনালে। সেভিয়ার কাছে পেনাল্টিতে হেরে শিরোপা খোয়ায়। তবে চলতি মৌসুম ভালো যাচ্ছিল না। সিরি ‘আ’-তে নেমে গেছে ৯ নম্বরে। তারপরও ভাবা হচ্ছিল, মৌসুম শেষে নতুন চুক্তিতে স্বাক্ষর করবেন মরিনহো। কিন্তু চলমান চুক্তিই শেষ করতে পারলেন না ‘স্পেশাল ওয়ান’।