কারিগরি ত্রুটি সারানোর পর ভালোভাবেই উৎপাদনে ফিরেছে কক্সবাজারের মাতারবাড়ীর কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি। তবে বাঁশখালীর এসএস পাওয়ারের উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। এতে দেশের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
মাতারবাড়ীর কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটির দুটি ইউনিট গত ১০ আগস্ট থেকে বন্ধ হয়ে যায়। ত্রুটি সারিয়ে ১৯ আগস্ট থেকে উৎপাদনে ফেরে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি। ১২০০ মেগাওয়াট সক্ষমতার দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকেই বৃহস্পতিবার বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে ১১৫০ মেগাওয়াট; অর্থাৎ সক্ষমতার প্রায় পুরোটাই সরবরাহ দিচ্ছে কেন্দ্রটি। জাপানের আর্থিক সহায়তায় নির্মিত এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি উৎপাদনে আসায় চট্টগ্রাম থেকে মোট বিদ্যুৎ সরবরাহও বাড়ে।
তবে বাঁশখালী এলাকার কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র এসএস পাওয়ারের দুটি ইউনিট এখন বন্ধ আছে। দেশের আলোচিত প্রতিষ্ঠান এস আলম গ্রুপ ও চীনের প্রতিষ্ঠান সেপকো থ্রি-এর যৌথ মালিকানায় নির্মিত এসএস পাওয়ার প্লান্টের দুটি ইউনিটের উৎপাদন সক্ষমতা ১২২৪ মেগাওয়াট। কেবল একটি ইউনিট থেকে সর্বশেষ ২০ আগস্ট ৪৫০ মেগাওয়াট সরবরাহ করা হয়েছিল। এরপর থেকে দুটি ইউনিটই মেরামতের কথা বলে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে। এসএস পাওয়ারের কেন্দ্র বন্ধ থাকায় চট্টগ্রাম থেকে মোট বিদ্যুৎ সরবরাহও কমেছে।
কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (পরিচালন) মুহাম্মদ মনোয়ার হোসেন মজুমদার সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “মাতারবাড়ী কেন্দ্র থেকে এখন পুরোদমে বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। আর আপাতত কয়লার সংকট নেই। ফলে আমরা আশা করছি ভালোভাবেই সরবরাহ দিতে পারব।”
এসএস পাওয়ার বন্ধ কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এটি বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং এস আলমের কর্মকর্তারাই ভালো বলতে পারবেন। তাদের সাথে আমার অফিসের কোনও যোগ নেই।”
পরে কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কালাম আজাদকে ফোন দিলে তিনি সাড়া দেননি। ফলে এসএস পাওয়ার বন্ধ থাকার সঠিক কারণ জানা যায়নি।
পাওয়ার গ্রিড কোম্পানির হিসাবে, গত ২০ আগস্ট চট্টগ্রামের সব বিদ্যুৎকেন্দ্রের সক্ষমতা ছিল ৪৩৮২ মেগাওয়াট। এর বিপরীতে উৎপাদন হয়েছে ২২৪৮ মেগাওয়াট। এর মধ্যে কয়লাচালিত কেন্দ্র থেকেই বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে ১৬০৪ মেগাওয়াট। বাকি বিদ্যুৎ জ্বালানি তেল, গ্যাস, পানি চালিত কেন্দ্র থেকে এসেছে। কিছুটা এসেছে সোলার ও বায়ু বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে। ফলে চট্টগ্রামে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ওপর নির্ভরতা বেড়েছিল।
কিন্তু এসএস পাওয়ারের কেন্দ্র বন্ধ থাকায় চট্টগ্রাম থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমার তথ্য দিচ্ছে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি। সর্বশেষ হিসাবে, ২২ আগস্ট চট্টগ্রাম থেকে পিক আওয়ারে বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে ২১৬৬ মেগাওয়াট; ২০ আগস্টের তুলনায় উৎপাদন কমেছে ৮২ মেগাওয়াট। মাতারবাড়ী কেন্দ্র যদি পুরোদমে উৎপাদনে না যেত তাহলে ঘাটতি হতো অনেক বেশি।
পাওয়ার গ্রিড কোম্পানির তথ্য বলছে, বৃষ্টি ও বন্যার কারণে এখন দেশে মোট বিদ্যুতের চাহিদা কমেছে। আগে ১৫ হাজার মেগাওয়াট চাহিদা থাকলে ২২ আগস্ট তা কমে ১৩ হাজার মেগাওয়াটে নেমেছে। ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যয়বহুল জ্বালানি তেলের ওপর চাপ কমেছে।
২২ আগস্ট দেশের মোট সরবরাহকৃত বিদ্যুতের মধ্যে ঢাকা দিয়েছে ২২৪৯ মেগাওয়াট। চট্টগ্রাম দিয়েছে ২১৬৬ মেগাওয়াট। বরিশাল থেকে এসেছে ১৮৫৭ মেগাওয়াট। কুমিল্লা দিয়েছে ১৬১৯ মেগাওয়াট। রাজশাহী ১৫৬৩ মেগাওয়াট। সিলেট দিয়েছে ১২৭২ মেগাওয়াট। খুলনা থেকে এসেছে ১১৭১ মেগাওয়াট। বাকি বিদ্যুৎ এসেছে রংপুর, ময়মনসিংহ এলাকার বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে।