Beta
মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ, ২০২৫
Beta
মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ, ২০২৫

আবু সাঈদ হত্যা মামলায় সেই কিশোর শিক্ষার্থীর জামিন

পুলিশের সামনে বুক চিতিয়ে দাঁড়ানো আবু সাঈদের ছবি এখন ব্যাপক আলোচিত।
পুলিশের সামনে বুক চিতিয়ে দাঁড়ানো আবু সাঈদের ছবি এখন ব্যাপক আলোচিত।
[publishpress_authors_box]

রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যা মামলায় আটক কিশোর শিক্ষার্থীকে (১৬) জামিন দিয়েছে আদালত।

বৃহস্পতিবার দুপুরে রংপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক মোস্তফা কামাল শুনানি শেষে ১০০ টাকার বন্ডে তার জামিন মঞ্জুর করেন।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কিশোরের পক্ষের আইনজীবী জোবায়দুল ইসলাম। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “মামলাটি মেট্রোপলিটন তাজহাট থানায় ছিল। মামলাটির শুনানির দিন ৪ আগস্ট ধার্য থাকলেও আমরা আজ নতুন করে শুনানির জন্য আবেদন করেছি। আদালত শুনানি গ্রহণ করে জামিন মঞ্জুর করেছেন।”

রংপুর পুলিশ লাইন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী ওই কিশোরকে আবু সাঈদ হত্যা মামলায় গত ১৯ জুলাই কারাগারে পাঠায় আদালত।

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে আন্দোলন চলাকালে গত ১৬ জুলাই রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে পার্ক মোড়ে পুলিশ ও ছাত্রলীগ-যু্বলীগের সঙ্গে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ হয়। ওই সংঘর্ষের মধ্যে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন আবু সাঈদ।

এ ঘটনায় ১৭ জুলাই নগরের তাজহাট থানায় হত্যা মামলা করা হয়। মামলার বাদী ওই থানার উপপরিদর্শক ও বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ বিভূতি ভূষণ রায়।

মামলার সংক্ষিপ্ত এজাহারে উল্লেখ করা হয়, “বেলা ২টা ১৫ মিনিটের দিকে ছাত্র নামধারী সুবিধাভোগী রাষ্ট্রবিরোধী আন্দোলনরত দুর্বৃত্তগণ বিভিন্ন দিক থেকে বৃষ্টির মতো ইটপাটকেল ও তাদের নিকটে থাকা আগ্নেয়াস্ত্র হতে এলোপাতাড়ি গুলি শুরু করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার লক্ষ্যে তাদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশের এপিসি গাড়ির মধ্য হতে কং/ ১১৮৬ সোহেল তার নামীয় সরকারি ইস্যুকৃত শটগান হইতে ১৬৯ রাউন্ড রাবার বুলেট ফায়ার করে। পুরো বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।”

সাঈদের মৃত্যুর বিষয়ে এজাহারে বলা হয়, “বিভিন্ন দিক থেকে আন্দোলনকারীদের ছোড়া গোলাগুলি ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের এক পর্যায়ে একজন শিক্ষার্থীকে রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। সহপাঠীরা ধরাধরি করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় অজ্ঞাতনামা ২ থেকে ৩ হাজার ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে।”

এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয় ওই কিশোর শিক্ষার্থীকে। তাকে গ্রেপ্তার ও কারাগারে আটকের ঘটনা নিয়ে তার বোন ফেইসবুকে স্ট্যাটাস দিলে বিষয়টি আলোচনায় আসে।

একমাত্র ছোট ভাইয়ের খোঁজ না পেয়ে বুধবার ফেইসবুকে দেওয়া স্ট্যাটাসে তিনি লেখেন, “গত ১৮ জুলাই আমার ভাই কলেজের উদ্দেশ্যে বের হলে জানতে পারে পরীক্ষা স্থগিত। তখন বন্ধুদের সাথে মিছিলের মাঝে জড়িয়ে পড়ে। এবং পুলিশের টিয়ারশেলে বন্ধুদের থেকে আলাদা হয়ে যায়। পরবর্তীতে আমরা ১৮ তারিখ আনুমানিক বিকেল ৪টায় ওর বন্ধুদের থেকে জানতে পারি, তার পায়ে রাবার বুলেট লেগেছে। সেখানকার স্থানীয় লোকজন কোনো হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছে।”

স্ট্যাটাসে ‌তিনি লেখেন, “রাত ১০টা পর্যন্ত সব হসপিটাল-ক্লিনিক খুঁজেও যখন পাচ্ছিলাম না– তখন বাবার কাছে একটা কল আসে। তারা জানায়, আপনার ছেলে আমাদের হেফাজতে আছে। জানাজানি করবেন না। তাতে ছেলের ক্ষতি হবে। তাকে আগামীকাল (১৯ জুলাই) সকালে ছেড়ে দেয়া হবে। চিন্তার কিছু নেই। কিন্তু, পরের দিন ১৯ জুলাই সকালে আমরা খোঁজ নিলে তারা অস্বীকার করে বলে, তাদের কাছে এই নামে কেউ নেই। এরপর সেদিনই আনুমানিক বিকেল সাড়ে ৪টায় কোর্ট থেকে কল আসে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

“আমরা কোর্ট থেকে নথিপত্র নিয়ে জানলাম, তাকে আবু সাঈদ ভাইয়ের হত্যা মামলা দেয়া হয়েছে। সেদিন থেকে বারবার কারাগারের দরজা থেকে ফিরে এসেছি। একটাবার দেখা তো দূর, তার কণ্ঠও শুনতে দেয়নি কেউ। মেট্রোপলিটন কোর্ট তার মামলা কিছুতেই শিশু আদালতে (জুভেনাইল কোর্ট) দিতে চায়নি। অনেক চেষ্টা করে গত ৩০ জুলাই শিশু কোর্টে নেয়া হলে ডেট দেয় আগামী ৪ আগস্ট। ৪ তারিখ কি রায় দিবে আমার জানা নেই। তবে আমি আমার ভাইকে ফিরে চাই। বেকসুর খালাস দেওয়া হোক এটা চাই।”

স্ট্যাটাসে ওই কিশোরের বোন আরও লেখেন, “যে ছেলেটা লিগ্যাল ডকুমেন্টস অনুযায়ী শিশু; তাকে তারা কোন হিসাবে এভাবে হ্যারাস (হয়রানি) করাচ্ছে? সব থেকে বড় কথা তার গায়ে কলেজ ড্রেস ছিল। আইডি ছিল। সে পুলিশদের ইনস্টিটিউটেরই ছাত্র। এক্ষেত্রে কি তার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষক, সহপাঠী, আইনজীবী কারও কিছুই করার নাই? আমার ভাইকে কোন লজিকে তারা আটকে রেখেছে? দেখাও করতে দিচ্ছে না!”

কিশোরকে যে মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে তার তদন্ত কর্মকর্তা তাজহাট থানার উপপরিদর্শক (এসআই) জিল্লুর রহমান।

তিনি বলেন, “ওইদিন (১৭ জুলাই) আমাদের তাজহাট থানায় যখন আগুন দেয়, তখন সে পিকেটিং করছিল। ওই সময় ঘটনাস্থলে আমাদের পুলিশের পাশাপাশি র‍্যাব, বিজিবির টিম ছিল। ওই সময় সে বিজিবির হাতে ধরা পড়ে।”

জিল্লুর রহমান বলেন, “ঘটনার দিন তো পুরো রংপুর উত্তপ্ত। পরে সে আমাদের হেফাজতে ছিল। পরদিন সকালে তাকে এই মামলায় আদালতে চালান দেওয়া হয়। কিন্তু পরের দিনেও উত্তপ্ত ছিল রংপুর। এ কারণে ওই সময় তার বয়স যাচাই করা সম্ভব হয়নি। মানে তার সম্পর্কে এত যাচাই করা সম্ভব হয়নি। কিন্তু, আইন অনুযায়ী তো তাকে ২৪ ঘণ্টার বেশি আমরা রাখতেও পারি না। এই কারণে তাড়াহুড়ো করে তাকে চালান দেওয়া হয়।

“যাই হোক আজকে তার বাবা-মাকে পুলিশ কমিশনার স্যার ডেকে আশ্বস্ত করলেন, তার বয়স কম। তার জামিন হয়েছে। তাকে চার্জশিট থেকেও অব্যাহতি দেওয়ার কথা বলেছেন স্যার।”

কিশোরের বাবার সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা হলে তিনি বলেন, “পুলিশ কমিশনার আমাকে ডেকেছিলেন। আমার মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলাম। আমার ছেলের সঙ্গে কারাগার থেকে কথা বলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু সম্ভব হয়নি। তবে পুলিশ কমিশনার আমাদের আশ্বস্ত করেছেন ছেলেকে ছেড়ে দেওয়া হবে।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত