দীর্ঘদিন ধরে ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করছিলেনন কমনওয়েলথ গেমসে প্রথম সোনাজয়ী শুটার আতিকুর রহমান। ক্যান্সারের ধারাবাহিক চিকিৎসার অংশ হিসেবে গত সপ্তাহে কলকাতায় গিয়েছিলেন। এরপর ঢাকায় মিরপুরে নিজের বাসাতেই ছিলেন। বুধবার সকাল থেকেই তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। অবস্থা বেশি খারাপ হওয়ার পর রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
আতিকুর রহমানের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে বাংলাদেশ শুটিং স্পোর্ট ফেডারেশনের মহাসচিব ইন্তেখাবুল হামিদ বলেন, “দীর্ঘদিন ধরেই উনি ক্যান্সারে ভুগছিলেন। তার চিকিৎসার জন্য আমরা প্রধানমন্ত্রীর অনুদানের ব্যবস্থাও করেছিলাম। কিন্তু আজ সকালে অবস্থা খারাপ হলে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। যদিও উনার পরিবার থেকে জানতে পেরেছি, হাসপাতালে আনার আগেই মারা গেছেন।”
আতিকুর রহমানের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছে শুটিং ফেডারেশন। শুরুতে তার লাশ গুলশানের শুটিং ফেডারেশনে আনার পরিকল্পনা থাকলেও দেশের চলমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে সেই সিদ্ধান্ত বাতিল করা হয়েছে। তবে বিকেলে গায়েবানা জানাযা, দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করবে ফেডারেশন।
মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৫৯ বছর। আতিকুর রহমান ১ ছেলে, ১ মেয়ে ও স্ত্রীকে রেখে গেছেন। ঢাকা থেকে আজ বিকেলেই তাকে চট্টগ্রামে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানেই তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে।
১৯৯০ সালের জানুয়ারি মাসে নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ডে কমনওয়েলথ গেমসে প্রথমে ফ্রি পিস্তল পেয়ার্সে আবদুস সাত্তার নিনি ও আতিকুর রহমান জেতেন ব্রোঞ্জ। পেয়ার্সে সাত্তার ৫৪২ ও আতিক ৫৩৬ স্কোর করলে মোট সংগ্রহ দাঁড়ায় ১০৭৮। এই স্কোরেই কমনওয়েলথ গেমসে দেশের পক্ষে প্রথম পদক নিশ্চিত হয়। অথচ এটা তাঁদের ইভেন্ট ছিল না। তাই পদক পাওয়ার কোনো আশাই ছিল না। এই পদক পেয়ে দুই শুটারের মনোবল অনেকখানি বেড়ে যায়। পরের দিনই এই জুটি জেতেন সোনা।
সাফ গেমসের মতো আঞ্চলিক প্রতিযোগিতায় সোনার পদক জয়ের অভিজ্ঞতা থাকলেও কমনওয়েলথের মতো বৈশ্বিক আসরে প্রথম জাতীয় সংগীত বাজার গৌরব বয়ে আনেন আতিকুর রহমান।
এরপর তিনি দেশকে আরও সাফল্য উপহার দিয়েছেন। ১৯৯৩ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত ষষ্ঠ সাফ গেমসে জেতেন ব্যক্তিগত ও দলগত পদক। ১৯৯৩ সালে ঢাকায় শুটিংয়ের এয়ার পিস্তলে জেতেন সোনা। ৬০ শটে তার স্কোর ছিল ৫৬৯। এপর দলগত ইভেন্টে আতিকুর রহমান, আসিফ হোসেন ও আবদুস সাত্তার নিনি জেতেন সোনার পদক। এরপর ১৯৯৫ মাদ্রাজ সাফ গেমসে ফ্রি পিস্তল ইভেন্টে দলগত ব্রোঞ্জ জেতেন।
আতিকুর রহমান ১৯৯১ সালে বাংলাদেশ ক্রীড়া লেখক সমিতির বর্ষসেরা ক্রীড়াবিদের পুরস্কার জেতেন। এরপর ১৯৯৪ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার ও ২০১০ সালে জাতীয় ক্রীড়া পুরষ্কার পান।
চট্টগ্রাম থেকে অনেক শুটার পেয়েছে বাংলাদেশ। বর্তমান সময়ের উদীয়মান শুটার শায়েরা আরেফিনের প্রথম কোচ ছিলেন আতিকুর রহমান। এই কৃতি শুটারের মৃত্যুতে শোকে মুহ্যমান শায়েরা, “খবরটা শুনে খুবই খারাপ লাগছে। আমার এতটুকু উঠে আসার পেছনে উনার অবদান সবচেয়ে বেশি। শুটিংয়ে আমার বেসিকগুলো স্যারের কাছ থেকেই শেখা। সবাই তার জন্য দোয়া করবেন।”