Beta
সোমবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২৫
Beta
সোমবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২৫

পুলিশ দিয়ে বাজার ঠিক করা যায় না : বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী‌

বাজার
আসন্ন রমজানে নিত্যপণ্যের দাম সহনশীল রাখতে চায় সরকার। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
[publishpress_authors_box]

পুলিশ ব্যবহার করে অভিযান চালিয়ে বাজার ব্যবস্থা ভালো করা সম্ভব না বলে মনে করেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু। তার মতে, বাজার ব্যবস্থা ভালো করতে চাইলে সরবরাহ চেইনের প্রতিনিধিসহ আমদানীকারক বা উৎপাদক থেকে শুরু করে ভোক্তা পর্যন্ত প্রতিটি জায়গা শক্তিশালী করতে হবে।

বৃহস্পতিবার পুরান ঢাকার মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাকক্ষে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর আয়োজিত এক মতবিনিময়ে এসব কথা বলেন প্রতিমন্ত্রী

আসন্ন রমজান উপলক্ষে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে এ মতবিনিময়ের আয়োজন করা হয়। এতে ৪৪টি ব্যবসায়ী সমিতির প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

উপস্থিত ব্যবসায়ী নেতাদের উদ্দেশে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, “একদিকে যেমন ন্যায্য ব্যবসা করার অধিকার আদায়ের কাজ আপনাদের করতে হবে, তেমনি সততার সঙ্গে ব্যবসা করার জন্য আপনাদের সচেষ্ট থাকতে হবে। আপনারা নিজেরা যতটা সচেষ্ট থাকবেন, প্রশাসন ততটা আপনাদের সহায়তা করবে।

“আমি গত এক মাস সব জায়গায় বলেছি, পুলিশ দিয়ে অভিযান চালিয়ে বাজার ব্যবস্থা ভালো করা সম্ভব না।”

ব্যবসায়ী প্রতিনিধি ছাড়া ভোক্তা অধিদপ্তর থেকে কোনও অভিযান পরিচালনা করা হবে না জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “এই প্রতিনিধি থাকলে কোনও ব্যবসায়ীকে দোকানের দরজা বন্ধ করতে হবে না। কিন্তু সাধারণ মানুষ যাতে প্রতারিত না হয়, ন্যায্য মূল্যে পণ্য পায়, কষ্ট না পায় সেটা আপনাদের সততার সঙ্গে দেখতে হবে। এটা প্রধানমন্ত্রীও আমাদের নির্দেশনা দিয়েছেন।”

সভায় পণ্যের দাম বৃদ্ধির একটি কারণ হিসেবে আমদানি করা পণ্য জাহাজে আটকে থাকার বিষয়টি উল্লেখ করেন ব্যবসায়ীরা।

এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী জাহাজে যেসব নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আটকে আছে সেগুলোর তালিকা চান।

তিনি বলেন, “এই মাসের মধ্যে রমজানের কোনও জিনিস জাহাজে আটকে থাকবে না। আপনারা আমাকে জানাবেন, আমি এই সমস্যা সমাধান করার চেষ্টা করব।”

কিন্তু কোনও উৎপাদনকারী বা আমদানিকারক যেন সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে ব্যবসা না করতে পারে, সেটা ব্যবসায়ী নেতাদের নিশ্চিত করতে বলেন তিনি।

পুরান ঢাকার মৌলভীবাজারের ব্যবসা শত বছরের পুরোনো উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “সততার সঙ্গে ব্যবসা না করলে শত বছর কোনও ব্যবসা টিকে থাকে না। তাই আজকে আপনাদের কাছে আসার উদ্দেশ্য পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ নয়, পণ্যের সরবরাহ নিশ্চিত করা।

“পণ্যের সরবরাহ যদি নিশ্চিত করা যায়, তাহলে পণ্যের দাম যৌক্তিক পর্যায়ে থাকবে। অনেকে মনে করেন পণ্যের দাম কমানো বা বাড়ানো আমাদের কাজ। আমি মনে করি, আমাদের কাজ পণ্যের সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখা।”

আগামী বাজেটের আগে ব্যবসায়ীদের নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে বসবেন বলেও জানান প্রতিমন্ত্রী।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি সৈয়দ মো. বশির উদ্দিন বলেন, “আমরা আপনাদের (ভোক্তা অধিদপ্তর) অভিযানের বিরোধী না। কিন্তু আপনারা যখন একটি দোকানে অভিযান পরিচালনা করেন, তখন পাশের দোকানগুলো বন্ধ হয়ে যায়। তাই আপনারা মৌলভীবাজারে অভিযান চালানোর আগে আমাদের জানাবেন। দোকানের নাম পরিচয় কিছুই বলার দরকার নেই। আমরা আপনাদের নিয়ে সেই দোকানে যাব।

“সেই দোকানে যদি আপনারা কোনও অনিয়ম পান, তাহলে তাকে শাস্তির দেবেন। ওই ব্যবসায়ীর কোনও দায় দায়িত্ব আমাদের না। কিন্তু অভিযানের নামে ভালো সৎ ব্যবাসায়ীদের হয়রানি করবেন না।”

রমজানে দ্রব্যমূল্য যাতে যৌক্তিক পর্যায়ে রাখা যায়, তা নিয়ে কাজ করছেন বলে জানান জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) এ এইচ এম সফিকুজ্জামান।

তিনি বলেন, “রমজানকে ঘিরে বর্তমানে আমাদের বাজার স্থিতিশীল। পণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক আছে। এখন বিপনন ব্যবস্থা ঠিক রাখতে হবে। এখানে ব্যবসায়ীদের ভূমিকা আছে। আমরা এবার রমজানে ব্যবসায়ীদের পেছনে পেছনে দৌড়াতে চাই না। ব্যবসায়ীরা যদি নিত্যপণ্যের দাম যৌক্তিক পর্যায়ে রাখে তাহরে রমজান ভোক্তাদের জন্য স্বস্তিদায়ক হবে। এটাই তাদের কাছে আমাদের প্রত্যাশা।”

রমজানকে সামনে রেখে চিনির দাম নির্ধারণ করে দেওয়া প্রয়োজন বলে সভায় জানালেন বাংলাদেশ পাইকারি চিনি ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. আবুল হাশেম।

তবে সরবরাহ ঠিক থাকলে রমজানে চিনির দাম বাড়বে না বলেও জানান তিনি।

এফবিসিসিআই পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, “আমদানি শুল্কের কারণে পণ্যের দাম বেড়ে যায়। এই শুল্কের কারণেই খেজুরের বাজারে এখন অস্থিরতা চলছে। আমরা শুল্ক কমানোর জন্য এনবিআরসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বহুবার বলেছি। কিন্তু তারা সেটি শোনে না। যদি শুনত, তাহলে রমজানে খেজুরের বাজার এমন অস্থির হতো না।”

 
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) লালবাগ জোনের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. মাহবুব-উজ-জামান, বাংলাদেশ গরম মশলা ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আতিক উল্লাহ, এফবিসিসিআই এর পরিচালক আবু মোতালেব, মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাজী মো. গোলাম মাওলা প্রমুখ।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত