মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোগী গোষ্ঠি আরাকান আর্মির সংঘাত চলছে গত এক বছর ধরে। ওপার থেকে বিস্ফোরণের শব্দ ভেসে আসা, বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠা, নাফ নদীর ওপারে উঠতে দেখা ধোঁয়ার কুণ্ডলী, হুটহাট মর্টার শেল বা গুলির উড়ে আসার সঙ্গে এই সময়ের মধ্যে পরিচয় ঘটেছে কক্সবাজারের টেকনাফ, উখিয়া ও নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তবাসীর।
তবে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে ওপার থেকে যে বিস্ফোরণের শব্দ ভেসে এসেছে, তা নতুন করে স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি করেছে। কারণ এত বিকট শব্দ আগে শোনেননি তারা।
সীমান্ত এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রাত সাড়ে ৮ টার দিকে পরপর তিন থেকে পাঁচটি বিস্ফোরণের শব্দ ভেসে আসে। আর বিস্ফোরণের শব্দের সঙ্গে সঙ্গে তীব্রভাবে কেঁপে ওঠে সীমান্ত এলাকার ঘরবাড়ি থেকে শুরু করে সব ধরনের স্থাপনা।
ঘরে, কর্মক্ষেত্রে বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে যারা বসে ছিলেন তারা ভয়ে বাইরে ছুটে যান। অনেকেই ভেবেছিলেন, ভূমিকম্প হচ্ছে বুঝি।
টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নূর হোসেন সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “বৃহস্পতিবার রাতের বিস্ফোরণের শব্দটি অনেক বেশি ভয়াবহ। এত বিকট শব্দ আগে কখনও শুনিনি, এত জোরেও কখনও ঘরবাড়ি কেঁপে ওঠেনি।”
কিছুটা ধাতস্থ হতেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজেরে আতঙ্কের কথা লিখতে শুরু করেন সীমান্ত এলাকায় বসবাসরত মানুষ।
আজিজুল হক রানা নামের ঘুমধুম সীমান্তের এক বাসিন্দা লিখেছেন, “ঘুমধুম সীমান্তের মিয়ানমার অভ্যন্তরে পর পর তিনটি বোমার বিস্ফোরণ! বিকট শব্দে প্রকম্পিত এপার।”
টেকনাফ পৌরসভার কুলালপাড়ার বাসিন্দা এবং একটি জাতীয় দৈনিকের টেকনাফ প্রতিনিধি আব্দুস সালাম লিখেছেন, “সীমান্তের ওপারে বিস্ফোরণের বিকট শব্দে আতংকিত টেকনাফ সীমান্ত এলাকার বাসিন্দারা।”
টেকনাফ পৌরসভার কাউন্সিলর হোসেন আহমদ লিখেছেন, “বারবার বিকট শব্দ, হে আল্লাহ সকলকে হেফাজত করুন।”
নুরুল আমিন আকাশ নামের একজন লিখেছেন, “রাতের আকাশে বিমান চলাচল, বিকট শব্দে কাঁপছে টেকনাফ শহর।”
টেকনাফের সাংবাদিক ও অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আশেকুল্লাহ লিখেছেন, “স্মরণকালের মিয়ানমারের শক্তিশালী বোমার বিকট শব্দে টেকনাফ কাঁপল।”
মিয়ানমারের একদল সংবাদকর্মীর পরিচালতি গণমাধ্যম ইরাবতীর একটি বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, বিদ্রোহীদের কাছে রাখাইনের দখল হারাচ্ছে সামরিক জান্তা। সেখানে বলা হয়েছে, গত নভেম্বর থেকেই মংডু টাউনশিপের নিয়ন্ত্রণ নিতে শুরু করে রাখাইন আর্মি।
রাখাইন রাজ্যটি বাংলাদেশ সীমান্ত সংলগ্ন। স্বাভাবিকভাবেই যেখানে সংঘাত বাড়লে তা এপার থেকেই বুঝতে পারেন বাংলাদেশের সীমান্তের মানুষ।