Beta
মঙ্গলবার, ২০ মে, ২০২৫
Beta
মঙ্গলবার, ২০ মে, ২০২৫

এক দেহে দুই প্রাণ

হুইল চেয়ার ব্যবহার করেই চলাফেরা করেন মেরিমে ও এনডেই। ছবি : বিবিসি
হুইল চেয়ার ব্যবহার করেই চলাফেরা করেন মেরিমে ও এনডেই। ছবি : বিবিসি
[publishpress_authors_box]

চিকিৎসকের ভবিষ্যৎ বাণী ভুল প্রমাণ করে সাত বছরে পা রেখেছে জোড়া লাগানো জমজ শিশু মেরিমে ও এনডেই।

২০১৬ সালে সেনেগালে জন্ম নেওয়া এই দুই মেয়ে শিশুর শরীর সংযুক্ত। দুই বোনের পা একজোড়া হলেও মাথা আলাদা। মেরুদণ্ড ও হৃদপিণ্ডের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রত্যঙ্গও আলাদা। অন্যদিকে তিনটি হাত হলেও কবজি চারটি।

মেরিমে ও এনডেইয়ের বাবা-মা জানতেন না যে জমজ সন্তান হবে। জন্মের পর দেখা গেল, জোড়া লাগানো সন্তান হয়েছে। চিকিৎসকরা তখনই হাল ছেড়ে দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, খুব বেশিদিন বাঁচানো সম্ভব হবে না শিশুদুটিকে। তবে সেই ভবিষ্যৎ বাণীর মুখে ছাই দিয়ে হাসিখুশি শিশু হিসেবে জীবন কাটাচ্ছে তারা।

শরীর সংযুক্ত হলেও দুইবোনের ব্যক্তিত্ব সম্পূর্ণ আলাদা। মেজাজ মর্জিও ভিন্ন ভিন্ন। মেরিমের শান্ত ও অন্তর্মুখী; এনডেই একেবারে উল্টো স্বভাবের। তবে ব্যক্তিত্ব যেমনই হোক, বেঁচে থাকার জন্য তারা একে অন্যের ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল।

জন্মের পর চিকিৎসকরা বলেছিলেন, শিশুদুটিকে বাঁচাতে হলে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে আলাদা করা ছাড়া কোনও উপায় নেই।

তাই সন্তানদের উন্নত চিকিৎসার জন্য ভালো হাসপাতালের সন্ধানে নামেন বাবা-মা।

বাবা ইব্রাহিমা চেয়েছিলেন, বিশ্বের সবচেয়ে বেশি জোড়া লাগানো শিশু আলাদা করা হয়, সেখানেই নেবেন মেয়েদের। তারপর চিকিৎসা শেষে দুই বোন ফিরবে সেনেগালে অন্য ভাইবোনদের কাছে।

কিন্তু পরিকল্পনা মাফিক হয়নি কিছুই।

সন্তানদের চিকিৎসার জন্য ২০১৭ সালে যুক্তরাজ্যে যান শিশুদুটির বাবা-মা। লন্ডনের গ্রেট অরমন্ড স্ট্রিট হাসপাতালে ভর্তি করা হয় শিশুদের।

পরীক্ষায় ধরা পড়ে, জটিল অস্ত্রোপাচারের জন্য মেরিমের হৃদযন্ত্র অনেকটাই দুর্বল। তার শরীর এখনও বড় ধরনের অস্ত্রোপাচারের জন্য প্রস্তুত নয়। এক্ষেত্রে অস্ত্রোপাচার হলে কেবল এনডেইয়ের বাঁচার সম্ভাবনা বেশি থাকবে। আবার দুজনের বাঁচার সম্ভাবনাও কমে যাবে।

এসব কারণে অস্ত্রোপচারের পথ মাড়াননি মেরিম ও এনডেইয়ের বাবা-মা। ভব্যিষতের জন্য বাঁচার চেয়ে বর্তমানের জন্য বেঁচে থাকার সিদ্ধান্ত নেন তারা ।

এক পর্যায়ে অন্য সন্তানদের দেখাশোনার জন্য দেশে ফিরে যান শিশুদুটির মা। আর সেনেগালের একটি পর্যটন সংস্থার ব্যবস্থাপনা পরিচালকের চাকরি ছেড়ে মেরিমে ও এনডেইকে নিয়ে বাবা থেকে যান যুক্তরাজ্যে। কারণ দুই মেয়ের নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার প্রয়োজন হবে।

তবে অন্য দেশে থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ ছিল না বাবা ইব্রাহিমের জন্য। তিনি বিবিসিকে বলেন, বাড়িতে ফিরে যেতে না পারাটা খুব কঠিন ছিল। কারণ পরিবারের বাকি সদস্যরা সেখানে।

দুই মেয়েকে নিয়ে গত কয়েক ধরে যুক্তরাজ্যেই আছেন তিনি। বিভিন্ন সমাজকর্মী ও চিকিৎসকদের নিয়মিত সহায়তা পাচ্ছেন। বিবিসির ওই প্রতিবেদনে সবার প্রতি কৃতজ্ঞতাও প্রকাশ করেছেন ইব্রাহিম।  

প্রায় তিন ধরে তার জমজ শিশুরা দক্ষিণ ওয়েলসের একটি মূলধারার স্কুলে যাচ্ছে। সেখানে তাদের সার্বক্ষণিক সাহায্যের জন্য রয়েছেন দুজন সমাজকর্মী।

হুইলচেয়ারেই চলাফেরা করা দুই বোনকে দাঁড়ানো ও হাঁটা শেখানো হচ্ছে বলে জানান বাবা। স্ট্যান্ডিং ফ্রেমের সাহায্যে তারা এখন ২০ মিনিট দাঁড়িয়ে থাকতে পারে বলেও জানালেন তিনি।  

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত