আইনজীবী শাহদীন মালিককে বাদ দিয়ে সংবিধান সংস্কার কমিশনের নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী অধ্যাপক আলী রীয়াজকে আনা হলো।
কেন এই পরিবর্তন, তার কোনও আনুষ্ঠানিক ব্যাখ্যা আসেনি। তবে শাহদীন মালিক তার পেশাগত ব্যস্ততার কারণে এই দায়িত্ব নিতে রাজি হননি বলে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল জানিয়েছেন।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনার সরকারের বিদায়ের পর গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মাস পূর্তিতে ‘রাষ্ট্র সংস্কারের’ প্রাথমিক রূপরেখা প্রকাশ করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
গত ১১ সেপ্টেম্বর জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি আন্দোলনের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে সংবিধানসহ বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান সংস্কারে ছয়টি কমিশন গঠনের ঘোষণা দেন।
সেখানে সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসাবে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শাহদীন মালিকের নাম ঘোষণা করা হয়েছিল।
বলা হয়েছিল, এই কমিশনগেুলো পূর্ণাঙ্গ করার পর ১ অক্টোবর থেকে কাজ শুরু করবে এবং তিন মাসের মধ্যে কাজ শেষ করবে।
তার আট দিনের মাথায় বুধবার সংবিধান সংশোধন কমিশনে নতুন নেতৃত্বের প্রজ্ঞাপন আসে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে।
তাতে বলা হয়, “প্রধান উপদেষ্টা সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে ড. শাহদীন মালিক-এর পরিবর্তে অধ্যাপক আলী রীয়াজের নাম অন্তর্ভুক্ত করে কমিশন গঠনের জন্য অনুশাসন প্রদান করেছেন। এমতাবস্থায়, অধ্যাপক আলী রীয়াজকে প্রধান করে সংবিধান সংস্কার কমিশন গঠন, কার্যপরিধি নির্ধারণ এবং কমিশনকে সাচিবিক সহায়তা প্রদানের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।”
কী কারণে এই পরিবর্তনে, সে বিষয়ে প্রজ্ঞাপনে কিছু বলা হয়নি।
বিষয়টি নিয়ে দৈনিক প্রথম আলোর জিজ্ঞাসায় আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেছেন, শাহদীন মালিক পেশাগত ব্যস্ততার কারণে সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালনে অপারগতা জানিয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের সাবেক আইনি পরামর্শক শাহদীন মালিক এক সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে পড়িয়েছেন।
এদিকে আরেক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেছেন, শারীরিক সামর্থ্যের অভাবের কারণে কমিশনের নেতৃত্ব নিতে অপরাগতা জানান শাহদীন মালিক। তবে তিনি সংস্কার প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত থাকবেন।
এবিষয়ে শাহদীন মালিকের কোনও বক্তব্য সংবাদমাধ্যম জানতে পারেনি। সাংবাদিকরা তার প্রতিক্রিয়া জানতে যোগাযোগ করলেও তিনি কোনও কথা বলবেন না বলে তার সহকারী জানিয়ে দেন।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানী আলী রীয়াজ বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির ডিস্টিংগুইশড অধ্যাপক, আটলান্টিক কাউন্সিলের সিনিয়র অনাবাসিক ফেলো এবং আমেরিকান ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ স্টাডিজের (এআইবিএস) প্রেসিডেন্ট।
আলী রীয়াজ ১৯৮০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতায় স্নাতক পাস করেন, একই বিভাগ থেকে ১৯৮২ সালে করেন স্নাতকোত্তর।
এরপর ১৯৮৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব হাওয়াই থেকে যোগাযোগবিদ্যায় আরেকটি স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন। একই বিশ্ববিদ্যালয়ে আবার স্নাতকোত্তর করে রাজনীতি বিজ্ঞান বিষয়ে, ১৯৯১ সালে। ১৯৯৩ সালে সেখান থেকেই নেন ডক্টরেট ডিগ্রি। তার পিএইচডি গবেষণার বিষয় ছিল ‘বাংলাদেশে রাষ্ট্র, শ্রেণি এবং সেনা শাসন, ১৯৭২-১৯৮২’।
চাকরিজীবনের শুরুতে আলী রীয়াজ কাজ করতেন দৈনিক সংবাদে। সেখানে এক বছরের বেশি সময় কাজ করার পর ১৯৮৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত সেখানেই সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
১৯৯৫ সালের জুলাই মানে যুক্তরাজ্যের লন্ডনে বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসে ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট হিসেবে যোগ দেন। ২০০০ সাল পর্যন্ত সেখানে কাজ করেছেন। এরপর ২০০০ সালের আগস্টে যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব লিংকনের জার্নালিজম অ্যান্ড হিউম্যানিটিজ বিভাগে সিনিয়র লেকচারার হিসেবে যুক্ত হন।
পরের বছর যুক্তরাষ্ট্রের সাউথ ক্যারোলাইনার ক্ল্যাফিন ইউনিভার্সিটিতে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন গণযোগাযোগ বিভাগে। ২০০২ সালে ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির ডিপার্টমেন্ট অব পলিটিকস অ্যান্ড গভর্নমেন্ট বিভাগে যোগ দেন।
এরপর বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ করে এখন ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটিতেই ডিসটিংগুইশ প্রফেসর হিসেবে যুক্ত আছেন। রাজনীতি নিয়ে অসংখ্য বই ও নিবন্ধ লিখেছেন তিনি। নিয়মিত কলাম লেখক হিসেবেও তার পরিচিত আছে।