সেপ্টেম্বর মাসের ভ্যাপসা গরমের এক সকাল। রায়পুরের কাছের তুলসী গ্রামের লোকেরা যখন ক্ষেতে যাচ্ছিলেন কাজ করতে। ৩২ বছর বয়সী ইউটিউবার জয় ভার্মা তাদেরই মধ্যে একদল নারীকে তার শুট করতে যাওয়া নতুন ভিডিওতে যোগ দিতে অনুরোধ করেন। তারা সবাই, ভার্মার চারপাশে জড়ো হলেন- শাড়ি ঠিক করলেন, একটু হেসে কথাও বললেন।
ভার্মা একটি প্লাস্টিকের চেয়ারে একজন বয়স্ক নারীকে বসিয়ে আরেকজনকে তার পা ছুঁতে আর আর অন্য একজনকে পানি দিতে বললেন। যেন দূরদেশের শহর থেকে তার ভিডিও দেখা দর্শকদের জন্য গ্রামের কোনো উৎসবের দৃশ্য সাজানো হচ্ছে। তুলসী গ্রামের নারীরা এই ধরনের কাজে অভ্যস্ত, তাই তারা খুশি হয়ে রাজি হয়েছেন। ভার্মাও মুহূর্তটা ক্যামেরাবন্দি করলেন। শুট শেষে আর নারীরা আবার তাদের কৃষিকাজে ফিরে গেলেন।
কয়েকশো মিটার দূরে, আরেকটি দল তাদের নিজেদের প্রোডাকশন সেট আপ করতে ব্যস্ত। একজন মোবাইল ফোন ধরে আছেন, আর ২৬ বছর বয়সী রাজেশ দিওয়ার হিপ-হপ গানের তালে তালে নাচছেন। তার হাত আর শরীর একজন দক্ষ পারফর্মারের মতো নড়াচড়া করছে।
তুলসী অন্য সাধারণ ভারতীয় গ্রামের মতোই। একতলা বাড়ি আর আংশিক পাকা রাস্তার এই গ্রামটি ছত্তিশগড় রাজ্যে। বাাড়িঘরে ফাঁক দিয়ে একটি উঁচু পানির ট্যাঙ্কি দেখা যাচ্ছে, যেন গ্রামের পাহাড়াদার সে। বটগাছের বাঁধানো চাতালগুলো এখানে আড্ডার জায়গা। কিন্তু তুলসীকে যা আলাদা করেছে, তা হলো ভারতের “ইউটিউব গ্রাম” হিসেবে এর পরিচিতি।
তুলসীতে প্রায় ৪,০০০ লোকের বাস। আর তথ্য অনুযায়ী, তাদের মধ্যে ১,০০০ জনেরও বেশি কোনো না কোনোভাবে ইউটিউবে কাজ করেন। গ্রামে ঘুরলে এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া কঠিন, যিনি সেখানে তৈরি হওয়া অসংখ্য ভিডিওর কোনও একটায় অংশ নেননি।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, ইউটিউবের মাধ্যমে আসা অর্থ স্থানীয় অর্থনীতিকে বদলে দিয়েছে। আর্থিক সুবিধার পাশাপাশি সমতা এবং সামাজিক পরিবর্তনের হাতিয়ার হয়ে উঠেছে সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মটি। সফল ইউটিউব চ্যানেল খুলে আয়ের নতুন উৎস খুঁজে পাওয়াদের মধ্যে অনেক নারীও রয়েছেন। এদের অনেকেরই এই গ্রামীণ পরিবেশে অর্থ আয় করার তেমন কোনও উপায় ছিল না। গ্রামের বটগাছের নিচে এখন প্রযুক্তি ও ইন্টারনেট নিয়ে আলোচনা হয়।
২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউটিউবের ২০ বছর পূর্ণ হয়। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রতি মাসে প্রায় ২৫০ কোটি লোক এই প্ল্যাটফর্মটি ব্যবহার করেন। ভারত নিঃসন্দেহে ইউটিউবের সবচেয়ে বড় বাজারগুলোর মধ্যে একটি। কয়েক দশকে, ইউটিউব শুধু ওয়েবকেই নয়, মানুষের সংস্কৃতি তৈরি এবং গ্রহণের পুরো পদ্ধতিকেই বদলে দিয়েছে। একভাবে দেখলে, তুলসী গ্রামটি ইউটিউবের বিশ্বব্যাপী প্রভাবের একটি ক্ষুদ্র প্রতিরূপ, যেখানে কারো কারো পুরো জীবন অনলাইন ভিডিওকে কেন্দ্র করে ঘোরে।
তুলসীর ৪৯ বছর বয়সী কৃষক নেত্রাম যাদব বলেন, “এটি শিশুদের খারাপ অভ্যাস এবং অপরাধ থেকে দূরে রাখছে। এই কন্টেন্ট নির্মাতারা তাদের অর্জন এবং কাজের জন্য গ্রামের সবাইকে গর্বিত করেছেন।”
একটি সোশ্যাল মিডিয়া বিপ্লব
তুলসীর ইউটিউব স্বপ্নযাত্রার রূপান্তর শুরু হয়েছিল ২০১৮ সালে, যখন ভার্মা এবং তার বন্ধু জ্ঞানেন্দ্র শুক্লা ‘বিইং ছত্তিশগড়িয়া’ নামে একটি ইউটিউব চ্যানেল চালু করেন। ভার্মা বলেন, “আমরা আমাদের গতানুগতিক জীবনে সন্তুষ্ট ছিলাম না, এবং এমন কিছু করতে চেয়েছিলাম যা আমাদের সৃজনশীলতাকে প্রকাশ করতে সাহায্য করবে।”
তাদের তৃতীয় ভিডিওটি, ভ্যালেন্টাইনস ডে নিয়ে। ঘটনাটি এরকম- এক তরুণ দম্পতিকে ডানপন্থী হিন্দু জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠী বজরং দলের সদস্যরা হয়রানি করে। এটিই প্রথম ভাইরাল হয়। হাস্যরস এবং সামাজিক মন্তব্যের মিশ্রণটি মানুষের মনে দাগ কাটে। ভার্মা বলেন, “ভিডিওটি মজার ছিল, তবে এতে একটি বার্তাও ছিল এবং আমরা দর্শকদের তাদের নিজস্ব ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য এটি উন্মুক্ত রেখেছিলাম।”
কয়েক মাসের মধ্যেই এই জুটি কয়েক হাজার ফলোয়ার পেয়ে যান। বর্তমানে তাদের চ্যানেল ১ লাখ ২৫ হাজারের বেশি সাবস্ক্রাইবার পেয়েছে এবং ২৬ কোটি ভিউয়ারশিপে পৌঁছেছে। যখন অর্থ আসতে শুরু করে, তখন সোশ্যাল মিডিয়ায় এত বেশি সময় দেওয়ার জন্য তাদের পরিবারের উদ্বেগ দূর হয়ে যায়।
শুক্লা বলেন, “আমরা প্রতি মাসে ৩০ হাজার রুপির বেশি আয় করছিলাম এবং যারা আমাদের সাহায্য করেছিলেন, তাদেরও সহায়তা করতে পারছিলাম।” তিনি এবং ভার্মা তাদের চাকরি ছেড়ে ইউটিউবকে পূর্ণ-সময়ের পেশা হিসেবে বেছে নেন।
তাদের সাফল্য শিগগিরই তুলসীর অন্যান্য বাসিন্দাদের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে ওঠে। শুক্লা বলেন, তার দল অভিনেতাদের পারিশ্রমিক দিত এবং অন্যদের সম্পাদনা ও চিত্রনাট্য লেখার প্রশিক্ষণও দিত। কিছু গ্রামবাসী তাদের নিজস্ব চ্যানেল তৈরি করেন, অন্যরা স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করতে আগ্রহী ছিলেন।
এটি স্থানীয় সরকারি কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য যথেষ্ট ছিল। গ্রামের কন্টেন্ট নির্মাতাদের সাফল্যে মুগ্ধ হয়ে, ২০২৩ সালে রাজ্য সরকার গ্রামে একটি অত্যাধুনিক স্টুডিও স্থাপন করে। তুলসী যে রায়পুর জেলার অন্তর্ভুক্ত, সেই জেলার প্রাক্তন কালেক্টর (একজন সিনিয়র সরকারি কর্মকর্তা) সর্বেশ্বর ভুরে বলেন, তিনি গ্রামের ইউটিউব কাজকে ডিজিটাল বিভাজন দূর করার সুযোগ হিসেবে দেখেছিলেন।
ভুরে বলেন, “আমি এই স্টুডিও বসানোর মাধ্যমে গ্রামীণ ও শহুরে জীবনের মধ্যে ব্যবধান কমাতে চেয়েছিলাম। তাদের ভিডিওগুলো শক্তিশালী থিমসহ প্রভাবশালী এবং লক্ষ লক্ষ মানুষের কাছে পৌঁছেছে। একটি স্টুডিও স্থাপন করা তাদের উৎসাহিত করার একটি উপায় ছিল।”
এই পদক্ষেপ সফল হয়েছে। ভুরে বলেন, ইউটিউব গ্রামের শত শত যুবকের জন্য জীবিকা তৈরি করেছে। এটি আঞ্চলিক বিনোদন শিল্পকে উৎসাহিত করছে এবং তুলসীর কিছু ইউটিউবারকে তাদের গ্রামীণ ছোট জীবন থেকে বের করে আনছে।
সেলফোন থেকে বড় পর্দায়
তুলসীর ইউটিউব উন্মাদনায় জন্ম নেওয়া সমস্ত সোশ্যাল মিডিয়া তারকাদের মধ্যে এখন পর্যন্ত ২৭ বছর বয়সী পিঙ্কি সাহু সবচেয়ে বেশি সাফল্য পেয়েছেন। কৃষিকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা একটি প্রত্যন্ত গ্রামে বেড়ে ওঠা সাহুর অভিনেত্রী ও নৃত্যশিল্পী হওয়ার আকাঙ্ক্ষা ছিল কেবল কল্পনায় পূরণ হওয়ার মতো। বিশেষ করে তার পরিবার এবং প্রতিবেশীদের কাছে অভিনয় করা ছিল অনেকটাই নিষিদ্ধ ও অপছন্দনীয়।
তাদের সমালোচনা সত্ত্বেও, সাহু ইনস্টাগ্রাম রিলস এবং ইউটিউব শর্টসে নাচের ভিডিও পোস্ট করা শুরু করেন। তার সাফল্য আসে যখন বিইং ছত্তিশগড়িয়ার প্রতিষ্ঠাতারা তার ভিডিওগুলো দেখেন এবং তাদের নিজস্ব প্রোডাকশনের জন্য তাকে নিয়োগ করেন।
সাহু বলেন, “এটা ছিল একটা স্বপ্ন সত্যি হওয়ার মতো। তারা আমার প্রতিভা চিনতে পেরেছিল এবং আমার দক্ষতা বাড়িয়েছিল।”
বিইং ছত্তিশগড়িয়ার সঙ্গে সাহুর কাজ ছত্তিশগড়ের আঞ্চলিক সিনেমা ব্যবসার স্থানীয় চলচ্চিত্র নির্মাতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। সাহু তার প্রথম চলচ্চিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পান। এরপর তিনি সাতটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। কাছের শহর বিলাসপুরের প্রযোজক ও পরিচালক আনন্দ মণিকপুরী তার ইউটিউব পারফরম্যান্সে মুগ্ধ হয়েছিলেন।
তিনি বলেন, “আমি এমন একজন নতুন মুখ খুঁজছিলাম, যে অভিনয় করতে পারবে, এবং সাহুর মধ্যে সবকিছুই ছিল।”
তুলসীর বাসিন্দা আদিত্য ভাগেল যখন ভার্মা ও শুক্লার দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে নিজের চ্যানেল শুরু করার সিদ্ধান্ত নেন, তখন তিনি কলেজে পড়তেন। তাদের কৌশলগুলো কাজে লাগিয়ে, তিনি এক বছরের মধ্যে ২০,০০০- এর বেশি ফলোয়ার অর্জন করেন এবং ইউটিউব থেকে অর্থ উপার্জন করতে শুরু করেন। অবশেষে, ভার্মা তাকে বিইং ছত্তিশগড়িয়া দলের জন্য লেখা ও পরিচালনার কাজে নিয়োগ করেন।
ভাগেল ভার্মা ও শুক্লার সঙ্গে তার প্রথম সাক্ষাতের কথা স্মরণ করে বলেন, “এটা ছিল যেন সেলিব্রিটিদের সঙ্গে দেখা করার মতো।”
রায়পুরের কাছের শহরে একটা প্রোডাকশন হাউসে তার চাকরি হয়, যেখানে তার ইউটিউবের কাজের ভিত্তিতে তাকে নিয়োগ করা হয়। এই ধারা চলতে থাকে যখন ভাগেল ‘খারুন পার’ নামের একটা বড় বাজেটের সিনেমার চিত্রনাট্যকার ও সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ পান।
তিনি বলেন, “আমি আশা করি, একদিন আমি বলিউডে কাজ করার সুযোগ পাবো।”
আরেকজন ইউটিউবার যিনি সিনেমা পেশায় এসেছেন, তিনি হলেন ৩৮ বছর বয়সী মনোজ যাদব। ছোটবেলায় তিনি প্রথম অভিনয় করেন, হিন্দু মহাকাব্য রামায়ণের বার্ষিক মঞ্চায়নে শিশু রামের চরিত্রে। যাদব কখনো ভাবেননি যে সেই হাততালি একদিন ছত্তিশগড়ের সিনেমা হলগুলোতেও শোনা যাবে।
ইউটিউব ভিডিওতে বছরের পর বছর ধরে তার প্রতিভা প্রদর্শনের পর, যাদব একটি আঞ্চলিক চলচ্চিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পান, যা তার অভিনয় দক্ষতার জন্য ব্যাপক প্রশংসা অর্জন করে। আজ, যাদব শুধু নিজের নামই তৈরি করেননি, বরং তার শিল্পের মাধ্যমে একটি সম্পূর্ণ জীবিকা তৈরি করেছেন। তিনি বলেন, “ইউটিউব ছাড়া এর কিছুই সম্ভব হতো না। আমি আমার অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না।”
নারীদের ক্ষমতায়ন
তুলসী গ্রামে এই প্রযুক্তিগত বিপ্লবে ইউটিউব নারীদের মূল মঞ্চে আসার পথ প্রশস্ত করেছে।
তুলসীর প্রাক্তন সরপঞ্চ (গ্রাম প্রধান) দ্রৌপদী বৈষ্ণুর মতে, ভারতে যেখানে গৃহ নির্যাতন একটি প্রচলিত সমস্যা, সেখানে ইউটিউব পক্ষপাতিত্বকে চ্যালেঞ্জ জানাতে এবং সামাজিক নিয়ম পরিবর্তন করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
বৈষ্ণু বলেন, “নারীদের দ্বারা [নারীবিদ্বেষী প্রথা] টিকিয়ে রাখা সাধারণ ব্যাপার, বিশেষ করে তারা তাদের পুত্রবধূদের সঙ্গে কেমন আচরণ করে। এই ভিডিওগুলো সেই চক্র ভাঙতে সাহায্য করে।”
সম্প্রতি ৬১ বছর বয়সী এই নারী বিষয়টি নিয়ে একটি ভিডিওতে অভিনয় করেছেন। তিনি বলেন, “আমি সেই ভূমিকা নিতে পেরে খুশি হয়েছিলাম, কারণ এটি নারী-পুরুষের সম্মান ও সমতার আচরণের গুরুত্বকে তুলে ধরে, যা গ্রাম প্রধান থাকাকালীন আমি প্রচার করেছিলাম।”
রাহুল ভার্মা (জয় ভার্মার আত্মীয় নন), ২৮ বছর বয়সী একজন বিয়ের ফটোগ্রাফার। তিনি তার গ্রামের সহকর্মীদের মাধ্যমে ইউটিউব থেকে এই ফটোগ্রাফি শিখেছেন।
তিনি বলেন, প্ল্যাটফর্মটি পরিবর্তনকারী। “প্রথমে, আমাদের মা ও বোনেরা শুধু সাহায্য করত। এখন, তারা তাদের নিজস্ব চ্যানেল চালাচ্ছে। এটা আগে আমরা কল্পনাও করতে পারতাম না,” বলেন তিনি ।
ভার্মা জানান, তার ১৫ বছর বয়সী ভাগ্নেও গ্রামের কন্টেন্ট নির্মাতাদের সাহায্য করে। বলেন, “এখানে এটা একটা সিরিয়াস ব্যবসা, সবাই অংশ নেয়।”
কোভিড-১৯ মহামারীর সময় ভারতে গ্রামীণ কন্টেন্ট নির্মাতাদের সংখ্যা বেড়ে যায়, বিশেষ করে টিকটকে, ২০২০ সালে ভারত অ্যাপটি নিষিদ্ধ করার আগে।
সাউদার্ন ডেনমার্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক শ্রীরাম ভেঙ্কটরামন ভারতে সোশ্যাল মিডিয়ার প্রভাব নিয়ে গবেষণা করেন।
তিনি বলেন, কোভিড মহামারী চলাকালীন কন্টেন্ট নির্মাণের সেই প্রাথমিক ঢেউ মূলত পুরুষদের দ্বারা চালিত হয়েছিল। তবে, মহামারীর পরে অনেক বেশি নারী সফলভাবে সোশ্যাল মিডিয়া চ্যানেল চালাচ্ছেন।
ভেঙ্কটরামন বলেন, “… এবং এটি নতুন অর্থনৈতিক সুযোগ তৈরি করেছে। এটি যে পরিমাণ বিশ্বব্যাপী সংযোগ এনেছে, তা অন্ততপক্ষে পরিবর্তনকারী। কেউ কেউ তাদের সাবস্ক্রাইবার এবং কন্টেন্ট ভোক্তাদের প্রাথমিক গ্রাহক ভিত্তি হিসেবে ব্যবহার করে ইউটিউব থেকে অন্যান্য ব্যবসাও শুরু করে, উদাহরণস্বরূপ, চুলের তেল এবং ঘরে তৈরি মসলা।”
কিন্তু কিছু লোকের জন্য, অর্থ গৌণ বিষয়। ৫৬ বছর বয়সী রামকালী ভার্মা (জয় ভার্মার আত্মীয় নন), তেমনই একজন গৃহিণী। ইতিমধ্যে গ্রামের ভিডিও কনটেন্টে স্নেহময়ী মায়ের চরিত্রে অভিনয়ের জন্য সবচেয়ে চাহিদাসম্পন্ন প্রতিভা হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন তিনি।
তিনি বলেন, “আমি আমার গ্রামের চ্যানেলগুলোর তৈরি করা ভিডিওগুলোতে অবদান রাখতে ভালোবাসি, এবং আমি বিনিময়ে কিছু আশা না করেই এটি করি।”
রামকালীর অভিনয়ের চরিত্রগুলো প্রায়ই লৈঙ্গিক বৈষম্য নিয়ে কথা বলে। তার নিজের সবচেয়ে পছন্দের একটি কনটেন্ট চরিত্র হিসেবে সহানুভূতিশীল ও আন্তরিক এক শাশুড়ির চরিত্রের কথা উল্লেখ করেন তিনি। সেখানে শাশুড়ি তার পুত্রবধূকে উচ্চশিক্ষা নিতে উৎসাহিত করেন।
তিনি বলেন, “আমি নারী শিক্ষা এবং সাফল্যের পক্ষে কথা বলতে পেরেছি। অভিনয় আমাকে তৃপ্তি এবং মানসিক শান্তি এনে দেয়।”
সফল এবং স্বনির্ভর অভিনেত্রী সাহু অন্যান্য তরুণীদের অনুপ্রাণিত করার ব্যাপারে আশা করেন। তিনি তার বাবার সঙ্গে বড় পর্দায় নিজের অভিনয় দেখার কথা গর্বিতভাবে স্মরণ করে বলেন, “যদি আমি আমার স্বপ্ন পূরণ করতে পারি, তবে তারাও পারবে।”
তুলসীতে, তরুণীদের জন্য রোল মডেল হয়ে উঠেছেন সাহু। তিনি বলেন, “মেয়েদের বড় স্বপ্ন দেখতে এবং উচ্চ লক্ষ্য রাখতে দেখাটাই আমার যাত্রার সবচেয়ে বড় পুরস্কার এখন। এমন মেয়ে আছে, যারা চলচ্চিত্র নির্মাতা হতে চায়।”
সূর্য অস্ত যাওয়ার সময় দিওয়ার এবং তার দল তাদের হিপ হপ বিটগুলো নিখুঁত করার জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করছিল। ‘লেথওয়া রাজা’ বা ‘অসাধারণ রাজা’ নামের একটি চ্যানেল চালান তিনি। দিওয়ার বলেন, “কন্টেন্ট তৈরি থেকে র্যাপ সংগীতে আসা সহজ ছিল না।”
দিওয়ার আশা করেন ইউটিউব তার ব্যবহারকারীদের জন্য সাংস্কৃতিক আদান-প্রদানের বাহক হতে পারবে।
তিনি বলেন, “আমাদের ভাষায় খুব বেশি মানুষ র্যাপ করেন না। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি আমি এটি পরিবর্তন করতে পারবো। আমি আমাদের অঞ্চলে নতুন সুর আনতে চাই এবং তুলসীকে এর ভিডিওগুলোর মতোই এর সঙ্গীতের জন্যও পরিচিত করতে চাই।”
(বিবিসির সাকিব মুগলোর প্রতিবেদনের ভাবানুবাদ)