Beta
বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫
Beta
বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

রাগ পুষে কান্না চেপে বাড়বে শুধুই ক্লান্তি

রাগ পুষে কান্না চেপে বাড়বে শুধুই ক্লান্তি
ছবি: কাম ডটকম
[publishpress_authors_box]

আবেগ দমন করতে গিয়ে নিজের ভেতরে যথেষ্ট ভাংচুর হয়; তাতে নিজের শারীরিক ও মানসিক শক্তি এতটাই ক্ষয় হয় যে ক্লান্তি ঘিরে ধরে প্রবল ভাবে।

আপনারও কি মাঝে মাঝে এমন উপলব্ধি হয়?

অধিকাংশের উত্তর হবে, হ্যাঁ।

“মাতৃত্ববেলায় বছরখানেক নির্ঘুম রাত কাটানোর কষ্ট থেকে মুক্তির আমি বুঝতে পেরেছিলাম, এখনও সেই ক্লান্তি কাটেনি আমার। আমি আরও বুঝতে পারলাম, আগামী ২৫ বছরও আমি ক্লান্তই থাকব; কারণ ততদিনে আমি তো বুড়িয়েও যাবো।”  

গার্ডিয়ানে এসব কথা লিখেছেন মোয়া সারনার। তিনি যুক্তরাজ্যের এনএইচএস অর্থ্যাৎ ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের একজন সাইকোথেরাপিস্ট।

‘হোয়েন আই গ্রো আপ- কনভারসেশনস উইথ এডাল্টস ইন সার্চ অব এডাল্টহুড’ গ্রন্থের এই লেখক জীবনের এক পর্যায়ে নিজেকে প্রশ্ন করলেন, ক্লান্তি আসলে কী? কেন আমরা ক্লান্ত হয়ে পড়ি? কী ধরনের ক্লান্তি ঘিরে ধরে আমাদের?

জীবনে সবারই কঠোর পরিশ্রম করতে হয়। বেঁচে থাকার জন্য কাজের বিকল্প নেই। কারণ মানুষের ঘর, পরিবার এবং বন্ধু নিয়েই বেঁচে থাকতে হয়। এসবের মধ্যে আসে আর্থিক সঙ্কট এবং অসুস্থতাও।

পরিশ্রমের কারণে জীবনে একটু ভালো থাকা যায়। যদিও এমন কিছু কাজ আছে যা আমাদের মাঝে ঠিক উল্টো অনুভূতির জন্ম দেয়।

ক্লান্তি আসলে মাঝে মাঝে ভালো বোধ করায়। ধরা যাক সাগরে সাঁতরে ফিরে এসে ক্লান্তি বোধ হলেও ভীষণ আনন্দ হয় মনে। শরীরচর্চার পর পেশীতে ব্যথা হলেও নিজেকে ফুরফুরেই লাগে। আবার শুধু কফি, সিনেমা আর ঘুমে একটি অলস দিন কাটিয়ে দিয়েও নিজেকে ভালো মনে হয়।

মোয়া সারনার অবশ্য জানালেন, কোন সময় একেবারে ‘অস্থিমজ্জা পর্যন্ত ক্লান্তি’ অনুভব হয় তার।

“আমি খেয়াল করেছি যখন আমি আমার সাইকোঅ্যানালিস্টের সঙ্গে কাজ করি … আমার মনে হয় এবার হাল ছেড়ে দেই। আমার সব শক্তি যেন নিঃশেষ হয়ে আসে আমার অবচেতনেই। এসব ক্লান্তি আসে চিন্তা থেকে, রাগ দমাতে যখন নখ কামড়ে চলি। অথবা চোখ-মুখ শক্ত করে ফেলি কান্না চেপে রাখতে গিয়ে।”   

এরকম ক্লান্তি বিশ্রাম নিয়ে বা লম্বা ঘুম দিয়ে ওঠার পরও থেকে যায়; বরং উল্টো বেড়ে যায় অবসাদ। এর অর্থ হলো আমরা ভেতরে ভেতরে ক্ষয়ে যাচ্ছি। যেমন টানা পানি ও আলো না পেলে গাছ মরে যায়।

যদি ঘুমিয়েও এমন ক্লান্তি দূর না হয় তাহলে কী করণীয়?

আসলে এই ক্লান্তিকর চক্র থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে আনার পথ আছে। যদিও সেই রাস্তা খুব সহজ কিছু নয়; যন্ত্রণা এতেও আছে।

নিজের মধ্যে ভালো বোধ করার তাগিদ জাগিয়ে তুলতে হবে। অর্থাৎ নিজে যখন যেমন বোধ করছেন, সেই সত্যি অনুভূতি চেপে না রেখে প্রকাশ ঘটাতে হবে।

ভালো থাকার উপায় নিয়ে মানুষ যুগের পর যুগ ধরে গবেষণা করে চলেছে। মাশরুম, স্বাস্থ্যকর যৌনসম্পর্ক, সংগীত, সফলতার শীর্ষে ওঠা, দূরে কোথাও চলে যাওয়া – সবই করে চলেছে মানুষ।

“এসবের প্রেক্ষিতে আমার সাইকোঅ্যানালিস্টের কাছে যাওয়া খুবই সাদামাটা সিদ্ধান্ত মনে হতে পারে।”

“আমার মনস্তত্ত্ববিদ অবশ্য ক্রমাগত আমাকে বোঝাতে চেয়েছেন আমার স্বকীয়তা; কীসে আমি ক্ষয়ে যাচ্ছি? তিনি চেষ্টা করছেন আমার ভেতরের অবদমিত আমিকে একটু একটু করে জাগিয়ে তোলার। এবং এই পদ্ধতি কাজেও দিচ্ছে।”   

“আমার নিজেকে শূন্য মনে হতো। ভেতরে ভেতরে ভয়ে কুঁকড়ে থাকতাম আমি। নিজেকে বুড়িয়ে যাওয়া কচ্ছপ মনে হতো; যে ভারী খোলসের মধ্যে আটকে আছে। ভেতরে ধোঁয়া ছাড়া আর কিছু নেই। এইরকম পরিস্থিতিতেই আমার বই লিখেছিলাম; ওতে ছিল বেড়ে ওঠার মানে কী? একজন ব্যক্তি হয়ে ওঠা মানে কী?”

সাইকোঅ্যানালিস্টের সঙ্গে আলাপচারিতা কাজে দিয়েছিল মোয়া সারনার।

“এখন আমার আগের মতো আর নিজেকে কচ্ছপ মনে হয় না। কারণ আসলে আমি শূন্য ছিলাম না। আমি আসলে নিজের যন্ত্রণা, লজ্জা, অপরাধবোধ, ঘৃণা, আতঙ্ক, রাগ ও কষ্টকে না বুঝে নিঃশেষ করে দিচ্ছিলাম।”

রেগে গেলে যতটুকু শক্তির অপচয় হয়, রাগ দমাতে গেলে এরচেয়েও বেশি ক্ষয় হয় শরীরে ও মনে; নিজের অভিজ্ঞতা দিয়ে এই উপলব্ধি হয়েছে মোয়া সারনারের।

তাই ভেঙ্গে পড়ার মুহূর্তে কেঁদে ফেলাই ভালো। রাগ হলে রাগের প্রকাশও জরুরি হয়ে ওঠে নিজেকে হালকা করতে।

তবে সবচেয়ে ভালো সমাধান হলো ক্রমাগত নিজেকে বোঝার চেষ্টা করা এবং নিজের আবেগের সুস্থ, সঠিক এবং স্বভাবসুলভ প্রকাশে মনোযোগী থাকা।  

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত