সিরিয়ায় ইরানি কনস্যুলেটে সাম্প্রতিক হামলার জবাবে শনিবার রাতে ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে নজিরবিহীন ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালায় ইরান। ইরানের ছোড়া এসব ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোনের ৯৯ শতাংশই ঠেকিয়ে দেওয়ার দাবি করেছে ইসরায়েল। আর এ জন্য ইসরায়েলের খরচও হয়েছে বেশ।
ইসরায়েলের সেনাপ্রধানের সাবেক আর্থিক উপদেষ্টা ব্রিগ্রেডিয়ার জেনারেল রাম আমিনাকের বরাত দিয়ে দেশটির দৈনিক ইয়েদিওথ আহরোনথ জানিয়েছে, ইরানের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন ঠেকাতে এক রাতেই ইসরায়েলের খরচ হয়েছে প্রায় ১৩৫ কোটি ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১৪ হাজার ৮৫০ কোটি টাকা)।
তুর্কি টেলিভিশন চ্যানেল টিআরটি ওয়ার্ল্ডের প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলের সেনাপ্রধানের সাবেক আর্থিক উপদেষ্টা আমিনাকের মতে, ইরানের হামলা থেকে নিজেদের রক্ষা করতে ৪ থেকে ৫ বিলিয়ন শেকেল (ইসরায়েলি মুদ্রা) বা ১ দশমিক শূন্য ৮ বিলিয়ন থেকে ১ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন ডলার ব্যয় হয় নেতানিয়াহু সরকারের।
আমিনাক বলেন, “আমি কেবল ইরানের হামলা মোকাবিলার হিসাব বলছি। হামলায় কত ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা বলছি না।”
ইসরায়েলের সেনাপ্রধানের সাবেক এই আর্থিক উপদেষ্টা জানান, ইরানের ছোড়া একটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করতে ‘অ্যারো’ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। এই ক্ষেপণাস্ত্রের প্রতিটির দাম ৩৫ লাখ ডলার। ‘ম্যাজিক ওয়ান্ড’ নামে আরেকটি ক্ষেপণাস্ত্রও সে রাতে ব্যবহার করা হয়। যার প্রতিটির দাম ১০ লাখ ডলার।
সিরিয়ায় ইরানি কনস্যুলেটে ১ এপ্রিল বোমা হামলায় তিন জ্যেষ্ঠ কমান্ডারসহ ইরানের সাত সামরিক উপদেষ্টা নিহত হয়। এই হামলার পেছনে ইসরায়েলের হাত রয়েছে বলে দাবি ইরানের। ওই হামলার প্রতিক্রিয়ায় শনিবার রাতভর ইসরায়েলের ভূখণ্ডে তিনশর বেশি ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান।
ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে বৈরিতা দীর্ঘদিনের হলেও এবারই প্রথম ইসরায়েলি ভূখণ্ড লক্ষ্য করে ইরানের মাটি থেকে সরাসরি হামলা চালানো হয়। অবশ্য লক্ষ্যে পৌঁছানোর আগেই ইরানের বেশির ভাগ ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন প্রতিহত করা হয় বলে দাবি ইসরায়েলের।
ইরানের হামলার পর ইসরায়েলের সেনাবাহিনীর মুখপাত্র দেনিয়েল হাগারির বরাতে ইসরায়েলি পত্রিকা দ্য হারেৎজ জানায়, ইরান থেকে সেই রাতে ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে প্রায় সাড়ে তিনশ ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালানো হয়। এসব হামলার ৯৯ শতাংশই প্রতিহত করা হয়।
তবে ইরানের হামলায় ইসরায়েলের বিয়ারশেবা শহরের নেভাটিম বিমানঘাঁটি কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয় বলে নিশ্চিত করেন ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর মুখপাত্র হাগারি।
তিনি বলেন, “ইরানের ছোড়া ৩০টির মধ্যে ২৫টি ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করা হয়। ১২০টির বেশি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র একইভাবে আটকানো হয়।
“ইরানের ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্রের অল্প কয়েকটিই ইসরায়েলি ভূখণ্ডে পড়ে। বিয়ারশেবার নেভাটিম বিমানঘাঁটি তাদের ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে সামান্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়।”
ইসরায়েলের বিমান বাহিনীর সক্ষমতা ধ্বংস করার ইরানি প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে জানিয়ে হাগারি বলেন, নেভাটিম বিমানঘাঁটির কার্যক্রম অব্যাহত আছে।
ইরানের পাশাপাশি শনিবার রাতে লেবানন, ইরাক ও ইয়েমেন থেকেও ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয় বলে জানান তিনি।
ইরানের হামলা ব্যর্থ হয়েছে বলে ইসরায়েল দাবি করলেও তেহরান বলছে, ইসরায়েলের নির্দিষ্ট কয়েকটি সামরিক স্থাপনায় সফলভাবে আঘাত হেনেছে তারা।