বাংলাদেশ রাজনৈতিক ইতিহাসে এক নতুন পরিবর্তনের জন্য প্রস্তুত বলে মনে করেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
সোমবার কক্সবাজারে রোহিঙ্গা অংশীজন সংলাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ মন্তব্য করে তিনি বলেন, সরকারের প্রত্যক্ষ মদদে এক বছর আগে ঘটে যাওয়া হত্যাযজ্ঞ এবং ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর, বর্তমানে দেশ যথেষ্ট স্থিতিশীল এবং নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত।
প্রধান উপদেষ্টা জানান, ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচন ঘোষণা করা হয়েছে এবং এই নির্বাচনের মাধ্যমে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার একটি নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করবে।
গত ৫ আগস্ট ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান দিবস’ উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে রোজার আগে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের ঘোষণা দেন প্রধান উপদেষ্টা। দ্রুত নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসা বিএনপিসহ অন্য রাজনৈতিক দল এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে।
তবে ফেব্রুয়ারির এই নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন শর্ত দিয়ে আন্দোলনে নামার হুমকি দিচ্ছে জামায়াতে ইসলামী ও অভ্যুত্থানকারীদের গড়া দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপির নেতারা বলছেন, সংস্কার ও ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ নেতাদের বিচারের বিষয় পাশ কাটিয়ে একটি ‘সাজানো’ নির্বাচন করা হচ্ছে।
সোমবার কক্সবাজারের অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “আমরা এখন আমাদের রাজনৈতিক ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে আছি। এক বছর আগে আমরা এক ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞের মধ্য দিয়ে গিয়েছিলাম। এরপর ছাত্র নেতৃত্বাধীন গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদী শাসন থেকে দেশকে মুক্ত করা সম্ভব হয়েছে।”
রোহিঙ্গা সঙ্কটকে বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে আরও জোরালোভাবে তুলে ধরতে রবিবার থেকে কক্সবাজারে তিন দিনের আন্তর্জাতিক সংলাপ ‘স্টেকহোল্ডার্স’ ডায়ালগ: টেকঅ্যাওয়ে টু দ্য হাই-লেভেল কনফারেন্স অন দ্য রোহিঙ্গা সিচুয়েশন’ শুরু হয়েছে।
বাসস জানিয়েছে, প্রধান উপদেষ্টা স্থানীয় হোটেল বে ওয়াচে সোমবার সংলাপের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।
উদ্বোধনী বক্তব্যে অধ্যাপক ইউনূস রোহিঙ্গা সঙ্কটের টেকসই সমাধানের জন্য সাত দফা প্রস্তাব উপস্থাপন করেন এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে কার্যকর ভূমিকা নেওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, “রোহিঙ্গাদের ওপর চলমান নিপীড়ন ও বাস্তুচ্যুতি থামাতে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।”
অধ্যাপক ইউনূস উত্থাপিত সাত দফা প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে- রোহিঙ্গাদের দ্রুত, নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ ও টেকসই প্রত্যাবর্তনের জন্য বাস্তবসম্মত রোডম্যাপ প্রণয়ন, দাতাদের অব্যাহত সমর্থন, মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ ও আরাকান আর্মির কাছে রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা ও জীবিকা নিশ্চিত করার আহ্বান, রোহিঙ্গাদের সঙ্গে গঠনমূলক সংলাপ ও অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা, আসিয়ানসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সক্রিয় ভূমিকা, গণহত্যার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান এবং আন্তর্জাতিক আদালতে জবাবদিহিতা ত্বরান্বিত করা।



