Beta
শনিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৫
Beta
শনিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৫

প্রেসিডেন্টের আহ্বানে জনগণ রাজপথে, বলিভিয়ায় অভ্যুত্থানচেষ্টা ব্যর্থ

বুধবার সেনাপ্রধানের নেতৃত্বে অভ্যুত্থানচেষ্টার প্রতিবাদে বিক্ষোভে  ফেটে পড়ে বলিভিয়ার জনগণ।
বুধবার সেনাপ্রধানের নেতৃত্বে অভ্যুত্থানচেষ্টার প্রতিবাদে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে বলিভিয়ার জনগণ।
[publishpress_authors_box]

বলিভিয়ার বামপন্থি সরকারকে উৎখাতে সেনাপ্রধানের নেতৃত্বে অভ্যুত্থানের চেষ্টাকে নস্যাৎ করেছে দেশটির জনগণ।

বুধবার প্রেসিডেন্ট লুইস আর্সিকে ক্ষমতা থেকে সরানোর চেষ্টা করা হলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে তা মোকাবেলা করে সরকার।

এদিন দুপুরে সাঁজোয়া যান ও ভারী অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত সেনা সদস্যদের নিয়ে বলিভিয়ার কার্যত রাজধানী লা পাজ শহরের প্লাজা মুরিলো চত্বরে জড়ো হন সেনাপ্রধান জেনারেল হুয়ান হোসে জুনিগা।

এই চত্বরে বলিভিয়ার প্রেসিডেন্টের বাসভবন, জাতীয় কংগ্রেস ভবনসহ গুরুত্বপূর্ণ সরকারি স্থাপনা রয়েছে। অভ্যুত্থানকারীরা একপর্যায়ে প্লাজা মুরিলো চত্বরের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ফেলে।

প্রেসিডেন্টের বাসভবনের একটি ফটক ভাঙারও চেষ্টা করেন তারা। বলিভিয়ার প্রেসিডেন্ট আর্সি সে সময় তার বাসভবনেই অবস্থান করছিলেন।

অভ্যুত্থানচেষ্টার অংশ হিসেবে লা পাজের মুরিলো চত্বর দখল হতে দেখে টেলিভিশনের পর্দায় হাজির হন প্রেসিডেন্ট আর্সি।

সেনাপ্রধানের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আমি আপনার ক্যাপ্টেন। আমি আপনাকে সেনাদের সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দিচ্ছি। আমি এ ধরনের অবাধ্যতা মানব না।”

সেসময় ভিডিও বার্তায় অভ্যুত্থানচেষ্টার হাত থেকে গণতন্ত্রকে রক্ষায় রাজপথে নেমে আসতে জনগণের প্রতি আহ্বান জানান প্রেসিডেন্ট আর্সি। তিনি তাদের উদ্দেশে বলেন, “গণতন্ত্রের পক্ষে এবং এই অভ্যুত্থানচেষ্টার বিপক্ষে দাঁড়াতে বলিভিয়ার জনগণকে সংগঠিত হতে হবে।”

প্রেসিডেন্ট আর্সি যখন ভিডিও বার্তায় বলিভিয়ার জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছিলেন, সেসময় তার সঙ্গে তার মন্ত্রিসভার সদস্যরাও ছিলেন। তারা তাদের বাম হাত মুষ্টিবদ্ধ করে চিৎকার করে বলছিলেন, “বলিভিয়ার মানুষ দীর্ঘজীবী হোক! গণতন্ত্র দীর্ঘজীবী হোক! আমাদের প্রেসিডেন্ট লুইস আর্সি দীর্ঘজীবী হোক!”       

বলিভিয়ার প্রেসিডেন্ট লুইস আর্সি।

প্রেসিডেন্ট আর্সির বার্তা শোনার সঙ্গে সঙ্গে বলিভিয়ার অসংখ্য মানুষ দেশের পতাকা হাতে নিয়ে রাজপথে নেমে বিক্ষোভ করেন এবং প্লাজা মুরিলো চত্বরের দিকে এগোতে থাকেন।         

সেনাপ্রধান জেনারেল জুনিগার নেতৃত্বে প্রেসিডেন্টের বাসভবন ঘেরাওয়ের ঘণ্টাখানেক পর প্রেসিডেন্ট আর্সি তাকে বরখাস্ত করে নতুন সেনা, নৌ ও বিমানপ্রধানের নাম ঘোষণা করেন। 

প্রেসিডেন্ট আর্সি নতুন সেনাপ্রধান হিসেবে হোসে উইলসন সানচেজের নাম ঘোষণার পর অভ্যুত্থানকারীদের উদ্দেশে ফের বলেন, “আমি আপনাদের নিজ নিজ ইউনিটে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দিচ্ছি।”        

এর কিছুক্ষণ পর সদ্য বরখাস্ত হওয়া সেনাপ্রধান জুনিগাকে গ্রেপ্তার করে বলিভিয়ার পুলিশ। অভ্যুত্থানচেষ্টার নেতাকে গ্রেপ্তারের পাশাপাশি আর্সি সরকারের পক্ষে বিপুল জনসমর্থন দেখে প্রেসিডেন্টের বাসভবনের সামনে থেকে সাঁজোয়া যান নিয়ে সেনা সদস্যরা সরে যেতে থাকেন।

প্রেসিডেন্ট আর্সিকে ক্ষমতা থেকে সরানোর চেষ্টার আগে সোমবার টেলিভিশনের পর্দায় হাজির হয়েছিলেন জেনারেল জুনিগা। তিনি বলেছিলেন, আগামী বছর বলিভিয়ায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ইভো মোরালেস ফের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলে তিনি তাকে গ্রেপ্তার করবেন।

সেনাপ্রধানের ওই বক্তব্যের পরপরই তাকে চাকরিচ্যুত করার সিদ্ধান্ত নেন প্রেসিডেন্ট আর্সি।             

বুধবার অভ্যুত্থানচেষ্টাকালে নতুন সেনাপ্রধানের নাম ঘোষণার সময় প্রেসিডেন্ট আর্সি ওই ঘটনা উল্লেখ করে জানান, বলিভিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট ইভো মোরালেসকে নিয়ে প্রকাশ্যে সমালোচনা করায় জেনারেল জুনিগাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তিনি।

২০০৬ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত বলিভিয়া শাসন করেন ইভো মোরালেস।

প্রেসিডেন্টের ওই সিদ্ধান্তের পর সেনা সদস্যদের নিয়ে অভ্যুত্থানের চেষ্টায় নামেন জেনারেল জুনিগা।       

বুধবারের অভ্যুত্থানচেষ্টার নিন্দা জানিয়ে জেনারেল জুনিগা ও তার দোসরদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর আহ্বান জানিয়েছেন ২০১৯ সালে বলিভিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত অভ্যুত্থানে দেশ থেকে পালাতে বাধ্য হওয়া সাবেক বামপন্থি প্রেসিডেন্ট ইভো মোরালেস।  

২০০৬ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত প্রেসিডেন্টের দায়িত্বে থাকা দেশটির প্রথম এই আদিবাসী নেতা অভ্যুত্থানচেষ্টার বিষয়ে বলেন, “আমরা সশস্ত্র বাহিনীকে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করতে এবং জনগণকে ভয়ের রাজত্বে রাখতে দেব না।”   

লাতিন আমেরিকার দেশটির পাবলিক প্রসিকিউটরের কার্যালয় এরই মধ্যে সেনাপ্রধানের নেতৃত্বে অভ্যুত্থানচেষ্টার ঘটনার ফৌজদারি তদন্ত শুরু করেছে। 

তথ্যসূত্র : দ্য গার্ডিয়ান, টিআরটি ওয়ার্ল্ড, রয়টার্স, বিবিসি  

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত