ঢাকার লালবাগ থানার একটি হত্যা মামলায় ঢাকা-৭ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য হাজি মোহাম্মদ সেলিমকে ৫ দিনের রিমান্ডে পেয়েছিল পুলিশ। তবে দুদিনের মাথায় অসুস্থ হয়ে পড়লে মঙ্গলবার রাতে তাকে নেওয়া হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। বুধবার সকালে কিছুটা সুস্থ হওয়ার পর আদালতের নির্দেশে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলাকালে গত ১৮ জুলাই লালবাগের আজিমপুর সরকারি আবাসিক এলাকায় সংঘর্ষের মধ্যে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায় আইডিয়াল কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র খালিদ হাসান সাইফুল্লাহ।
রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর নিহতের বাবা কামরুল হাসান গত ১৯ আগস্ট লালবাগ থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক এমপি হাজি সেলিমসহ ৫২ জনকে আসামি করা হয়।
এই মামলায় গত রবিবার রাতে ঢাকার বংশাল থানাধীন এলাকা থেকে হাজি সেলিমকে আটক করে পুলিশ। পরদিন হাজি সেলিমকে আদালতে হাজির করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা লালবাগ থানার উপ-পরিদর্শক আক্কাস মিয়া। শুনানি শেষে আদালত ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
রিমান্ডে থাকা অবস্থায় মঙ্গলবার রাতে অসুস্থ হয়ে পড়েন হাজি সেলিম। পরে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়। বুধবার সকালে কিছুটা সুস্থ হলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হাজি সেলিমকে আদালতে হাজির করে তাকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন।
রিমান্ড ফেরত প্রতিবেদনে তদন্ত কর্মকর্তা উল্লেখ করেন, “আসামি হাজি মোহাম্মদ সেলিমকে আদালতের আদেশ মোতাবেক পুলিশ রিমান্ডে প্রাপ্ত হয়ে হাইকোর্টের নির্দেশনা মেনে সতর্কতার সাথে মামলার ঘটনার বিষয়ে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। আসামির নিকট থেকে মামলার ঘটনার বিষয়ে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। যা মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে গোপন রেখে যাচাই-বাছাই করে দেখা হচ্ছে।”
এতে আরও বলা হয়, “আসামি কথা বলতে পারেন না এবং শারীরিকভাবে অসুস্থ। তার শারীরিক অবস্থা ভালো না থাকায় এবং সে কথা বলতে না পারায় তাকে গভীর ও নিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা সম্ভব হচ্ছে না। আসামির ৫ দিনের পুলিশ রিমান্ড হলেও তার শারীরিক অবস্থা ভালো না থাকায় এবং সে কথা বলতে না পারায় তাকে রিমান্ডে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করলেও কোনও তথ্য উদঘাটন করা সম্ভব নয়।”
তদন্ত কর্মকর্তা আদালতকে আরও জানান, “ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ মেনে তাকে আপাতত আর জিজ্ঞাসাবাদ না করে জেল হাজতে আটক রাখা প্রয়োজন। মামলার তদন্তের স্বার্থে আসামিকে ভবিষ্যতে আরও রিমান্ডের প্রয়োজন হতে পারে। আসামি জামিনে মুক্তি পেলে মামলার তদন্ত কার্যক্রম ব্যাহত হতে পারে বিধায় মামলার তদন্তকার্য শেষ না হওয়া পর্যন্ত আসামিকে জেল হাজতে আটক রাখা প্রয়োজন।”
পরে তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনের ওপর শুনানি নিয়ে ঢাকা মহানগর হাকিম মো. আক্তারুজ্জামানের আদালত হাজি সেলিমকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
এর আগে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের মামলায় ২০০৮ সালে ১৩ বছরের সাজা হয় হাজি সেলিমের। ২০২২ সালে এই সাজা কমিয়ে ১০ বছর করে হাইকোর্ট। হাইকোর্টের রায়ের পর গত বছরের ২২ মে হাজি সেলিম নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করলে আদালত তাকে কারাগারে পাঠায়। পরে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ থেকে জামিন পেয়ে গত ১৭ জানুয়ারি কারামুক্ত হন তিনি।