দেশে নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ক্রমেই বাড়ছে। সবশেষ ২৪ ঘণ্টায় বেড়েছে নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার। তবে গত দুইদিন টানা মৃত্যুর পর এই সময়ে কোভিড আক্রান্ত হয়ে কেউ মারা যায়নি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, মঙ্গলবার (২৩ জানুয়ারি) সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৩৫ জনের শরীরে নভেল করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে সরকারি হিসেবে এখন পর্যন্ত মোট শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়াল ২০ লাখ ৪৬ হাজার ৮২৩ জনে।
গত ২৪ ঘণ্টায় করোনার নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ৮৮৫টি। নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে রোগী শনাক্তের হার আট দশমিক ৬২ শতাংশ। এর আগের দিন (সোমবার) শনাক্তের হার ছিল পাঁচ দশমিক ১৪ শতাংশ। দেশে এখন পর্যন্ত মোট রোগী শনাক্তের হার ১৩ দশমিক নয় শতাংশ।
২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে প্রথম তিন জনের শরীরে ভাইরাসটি শনাক্ত হওয়ার কথা জানায় সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)। এর ঠিক ১০ দিন পর প্রথম রোগীর মৃত্যুর কথাও জানায় প্রতিষ্ঠানটি। এরপর থেকে করোনার ডেল্টা, ওমিক্রন ধরনের ঢেউ দেখেছে বাংলাদেশ।
এখন পর্যন্ত কোভিডে মৃত্যু হয়েছে ২৯ হাজার ৪৮১ জনের।
গত কয়েক দিনে বিশ্বজুড়ে কোভিডের সংক্রমণ বাড়ছে। এজন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অতিসংক্রমণশীল ওমিক্রনের উপধরণ জেএন.১ কে দায়ী করেছে। জেএন.১ কে ‘ভ্যারিয়েন্ট অব ইন্টারেস্ট’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এ অবস্থায় শিগগিরই দেশে কোভিড প্রতিরোধী টিকা কার্যক্রম শুরু করতে নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত ২১ জানুয়ারি থেকে ঢাকার নয়টি কেন্দ্রে টিকাদান শুরু হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন ব্যবস্থাপনা টাস্কফোর্স বিভাগের সদস্য সচিব ডা. মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “টিকা কার্যক্রম চলছে। আমরা প্রয়োজনীয় টিকা কেন্দ্রে পাঠিয়ে দিয়েছি। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সম্মুখসারির স্বাস্থ্যকর্মী, ৬০ বছর এবং তদূর্ধ্ব বয়সী জনগোষ্ঠী, দীর্ঘমেয়াদি রোগে আক্রান্ত ১৮ বছর এবং তদূর্ধ্ব বয়সী জনগোষ্ঠী, স্বল্প রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্নপ্রাপ্ত বয়স্ক (১৮ বছর এবং তদূর্ধ্ব) জনগোষ্ঠী ও অন্তঃসত্ত্বা নারীদের প্রাধান্য দিয়ে টিকা কার্যক্রম শুরু হয়েছে।”
তিনি জানান, প্রাথমিক পর্যায়ে ঢাকা শহরের নয়টি কেন্দ্রে বুস্টার ডোজ অর্থাৎ টিকার তৃতীয় ও চতুর্থ ডোজ ফাইজারের ভিসিভি ভ্যাকসিন দেওয়া হবে।
নয়টি কেন্দ্র হচ্ছে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মিডফোর্ড হাসপাতাল, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, শেখ রাসেল জাতীয় গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, ফুলবাড়িয়া সরকারি কর্মচারী হাসপাতাল, জাতীয় নাক কান গলা ইনস্টিটিউটসহ ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকার কিছু টিকা কেন্দ্র।
সবাইকে সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রে গিয়ে টিকা নেওয়ার আহ্বান জানান ডা. মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, এরপর ধাপে ধাপে ঢাকার বিভিন্ন বিশেষায়িত ইনস্টিটিউট ও সরকারি হাসপাতাল, ঢাকার বাইরের সরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এবং জেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে ভ্যাকসিন বিতরণের মাধ্যমে কোভিড-১৯ টিকাদান কার্যক্রম পরিচালিত হবে।
অধিদপ্তর জানায়, কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন প্রথম এবং দ্বিতীয় ডোজের ক্ষেত্রে ফাইজার আরটিইউ ভ্যাকসিন ব্যবহার করতে হবে। প্রাথমিকভাবে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতাল, মহাখালী এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নয়াবাজার ঢাকা মহানগর জেনারেল হাসপাতালে এই টিকা প্রদান করা হবে।
নির্দেশনায় বলা হয়, প্রথম এবং দ্বিতীয় ডোজ টিকা দেয়ার ক্ষেত্রে প্রমাণস্বরূপ ভ্যাকসিনের নাম এবং তারিখ উল্লেখপূর্বক কোভিড-১৯ টিকাদান কার্ড সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রে প্রদান করা হবে। তৃতীয় ও চতুর্থ ডোজ টিকার ক্ষেত্রে সুরক্ষা ওয়েবসাইট অথবা অ্যাপ থেকে টিকাকার্ড ডাউনলোড করে সঙ্গে আনতে হবে।