কক্সবাজারে লেফটেন্যান্ট তানজিম ছারোয়ার হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে আরও দুজন গ্রেপ্তার হয়েছে। তাদের একজন সরাসরি ছুরিকাঘাত করেছিলেন ওই সেনা কর্মকর্তাকে।
হত্যাকাণ্ডের চার দিন পর যৌথ অভিযানে চকরিয়া উপজেলার কাহারিয়াঘোনা এলাকা থেকে অস্ত্রসহ তাদের গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানিয়েছেন র্যাব-১৫ এর কক্সবাজার ব্যাটালিয়নের জ্যেষ্ঠ সহকারী পরিচালক (আইন ও গণমাধ্যম) ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আবুল কালাম চৌধুরী।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন- চকরিয়ার ডুলাহাজারা ইউনিয়নের ডুমখালী রিজার্ভপাড়ার আব্দুল মালেকের ছেলে নাছির উদ্দিন (৩৮) এবং একই ইউনিয়নের মাইজপাড়ার মৃত নুরুল আলমের ছেলে এনামুল হক (৫০)।
তাদের কাছে দেশে তৈরি দুটি বন্দুক পাওয়ার কথা জানিয়েছে র্যাব। এদের মধ্যে নাছির সেনা কর্মকর্তা তানজিমকে ছুরিকাঘাত করেছিলেন বলে জানান র্যাব কর্মকর্তা কালাম।
তাদের দুজনকে নিয়ে এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে মোট নয়জনকে গ্রেপ্তার করা হলো।
গত সোমবার রাত ৩টার দিকে ডুলাহাজরা ইউনিয়নের পূর্ব মাইজপাড়া এলাকায় অভিযানের সময় ডাকাতের ছুরিতে মারা যান লেফটেন্যান্ট তানজিম।
টাঙ্গাইলে জন্মগ্রহণকারী তানজিম পাবনা ক্যাডেট কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করার পর সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন। তিনি বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমির ৮২তম দীর্ঘমেয়াদি কোর্স শেষে কমিশন পান।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী কাজ করছে। তার আওতায় তানজিম ওই অভিযানে গিয়েছিলেন।
আইএসপিআর জানিয়েছিল, রাতে পূর্ব মাইজপাড়া গ্রামে ডাকাতির খবর আসে। ঘণ্টাখানেকের মধ্যে চকরিয়া আর্মি ক্যাম্পের সদস্যরা সেখানে পৌঁছায়। অভিযানের সময় ৭-৮ সদস্যের ডাকাত দলটির কয়েকজনকে তাড়া করেন লেফটেন্যান্ট তানজিম। তখন ডাকাতরা তার ঘাড়ে ছুরিকাঘাত করলে রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়।
তানজিম হত্যাকাণ্ডের পর পুলিশ সদস্য ও সেনা সদস্য বাদী হয়ে চকরিয়া থানায় আলাদা দুটি মামলা করে।
অভিযানের সময়ই যৌথবাহিনীর সদস্যরা ছয়জন ডাকাতকে গ্রেপ্তার করে। পরে আরেকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। সর্বশেষ শনিবার ভোররাতে গ্রেপ্তার হলো আরও দুজন।
র্যাব কর্মকর্তা কালাম সাংবাদিকদের বলেন আবুল কালাম বলেন, লেফটেন্যান্ট তানজিম হত্যাকাণ্ডের আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশ, র্যাব ও সেনা সদস্যরা যৌথ অভিযান অব্যাহত রেখেছে। শনিবার ভোররাতে চকরিয়ার কাহারিয়াঘোনা এলাকায় কয়েকজন আসামি অবস্থান করছে বলে খবর এলে সেখানে অভিযান চালানো হয়।
যৌথবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছলে ২ জন সন্দেহভাজন ব্যক্তি দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করলে তাদের ধাওয়া করে ধরা হয় জানিয়ে তিনি বলেন, পরে তাদের দেহ তল্লাশি করে দেশে তৈরি দুটি বন্দুক ও ৩টি গুলি উদ্ধার করা হয়।
র্যাবের এ কর্মকর্তা বলেন, “গ্রেপ্তাররা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকাণ্ডে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত থাকার তথ্য স্বীকার করেছে। এর মধ্যে নাছির উদ্দিন সেনা কর্মকর্তা তানজিমকে গলায় ছুরিকাঘাত করে মৃত্যু নিশ্চিত করেন। তাকে সহযোগিতা করেন এনামুল হক।”
গ্রেপ্তার দুজনকে চকরিয়া থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানান অতিরিক্ত এসপি আবুল কালাম।
এই হত্যামামলার প্রধান আসামি মো. বাবুলসহ নয়জনকে এই পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানান তিনি।