তপ্ত রোদও যেন এ আনন্দের কাছে নস্যি। সমুদ্রের নোনা জলের আনন্দ কীভাবে রোদের তাপ ভুলিয়ে দিতে পারে, তা কক্সবাজারে পর্যটকদের ঢল না দেখলে বিশ্বাস করা যাবে না। ঈদ আর বৈশাখের উৎসব বসেছে সমুদ্র শহরের আনাচে-কানাচে। তাতে শেষ চৈত্রের তীব্র রোদ চোখ রাঙালেও ঠিক পাত্তা পাচ্ছে না।
কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের তথ্য বলছে, শুক্রবার কক্সবাজারে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৪ ডিগ্রি সেলিসিয়াস।
এর মধ্যেই কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের পাড়ে ভিড় জমেছে লাখ লাখ পর্যটকের। তাদের কেউ লোনা জলের ঢেউয়ে শরীর ভাসিয়ে উপভোগ করছেন সাগরের আবহ। আবার কারও জন্য সমুদ্রের পাড়ে বসে দৃশ্য উপভোগই সই।
দুপুর ২টায় কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের লাবণী, সুগন্ধা, কলাতলী পয়েন্টে দেখা যায় পর্যটকের উপচে পড়া ভিড়। লোনাজলে দাপাদাপির পাশাপাশি অনেকে ঘোড়া, জেটস্কি ও বিচ বাইকে চড়ে বিনোদনে মেতেছেন। আবার কেউ সৈকতের বালিয়াড়িতে সময় কাটানোর পাশাপাশি স্মৃতি ধরে রাখতে তুলছেন ছবি।
পর্যটকরা বলছেন, যান্ত্রিক জীবনের একঘেয়েমি কাটিয়ে একটু ভিন্নভাবে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে তারা সমুদ্রের শহরে এসেছেন। তপ্ত রোদের চেয়ে তাই নোনা জলের শীতল পরশ বেশি মুগ্ধ করছে তাদের।
রাজশাহীর কলেজ শিক্ষক আনোয়ারুল আজিমও সমুদ্রে এসেছেন সপরিবারে। শুক্রবার সকালে পরিবারের পাঁচজনকে নিয়ে কক্সবাজারে পৌঁছেন তিনি। এরপর আবাসিক হোটেলে ব্যাগপত্র রেখেই ছুটে এসেছেন সৈকতে। সকাল সন্ধ্যাকে তিনি বলেন, “পহেলা বৈশাখ পর্যন্ত ছুটি পেয়েছি। ছুটির দিনগুলো স্মৃতিময় করতেই কক্সবাজার ভ্রমণ।”
বেশ গরম আছে স্বীকার করে তিনি বলেন, তবে রোদের তীব্রতা মিশে গেছে সাগরের হাওয়ায়।
২২ বন্ধু একসঙ্গে এসেছেন সমুদ্র দেখতে। সমুদ্রের পাড়ে খালি পায়ে হাঁটাও উপভোগ করছিলেন তারা। তাদের একজন মাহমুদ রফিক। তিনি বলেন, “রোদে বালি একটু গরম।”
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছবি-অনুভূতি প্রকাশ করতেই এই পর্যটক বন্ধুদের খালি পায়ে বালিতে হাঁটার প্রতিযোগিতা বলে জানান আতিকুল। এই দলের আরেক বন্ধু রোকন জানান, একটু আগে সাগরের জলে পা ভিসিয়ে এসেছি। প্রথমবার গরম মনে হলেও এখন তা মনে হচ্ছে না।
টানা ছুটিতে পর্যটকের এমন ভিড় দেখে খুশি পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। কক্সবাজার আবাসিক হোটেল মোটেল গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাসেম সিকদার জানান, রমজানে পুরো এক মাসের খরা কাটিয়ে ঈদ ও পহেলা বৈশাখের ছুটিতে আশানুরূপ পর্যটক সমাগম ঘটায় খুশি ব্যবসায়ীরা। শুক্রবার কক্সবাজারের ৫ শতাধিক আবাসিক হোটেল ৭০-৮০ শতাংশই বুকিং হয়েছে। পর্যটক আরও বাড়ছে।”
যেহেতু টানা ছুটির দিনগুলোতে পর্যটকদের বাড়তি চাপ থাকে, তাই দুর্ভোগ ও হয়রানি এড়াতে হোটেল কক্ষের বুকিংসহ আগাম তথ্য জেনে ভ্রমণের পরামর্শ দেন তিনি।
সৈকতের লাবনী পয়েন্টের ছাতা মার্কেটের মক্কা স্টোরের ম্যানেজার মো. ইমরান বলেন, “পর্যটক এলে মন ভালো হয়ে যায়। ঈদ ও বৈশাখে দোকান নতুন করে রঙ করে সাজানো হয়েছে। নানা রকম চকলেট ও বার্মিজ আচার আনা হয়েছে। সেসব ভালোই বিক্রি হচ্ছে।”
কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের পর্যটন সেলের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মো. মাসুদ রানা জানান, “পর্যটকরা যাতে হয়রানি ও দুর্ভোগের শিকার না হয় সেজন্য প্রশাসন ও আইন শৃংখলা বাহিনী সবধরনের ব্যবস্থা নিয়েছে। টানা ছুটিতে বিপুল সংখ্যক পর্যটক সমাগমের কথা মাথায় রেখে নেওয়া হয়েছে বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থাও।”
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. মাহফুজুল ইসলাম বলেন, “ঈদের ছুটিকে মাথায় রেখে আগেভাগেই সকল পর্যায়ের সঙ্গে বৈঠক করা হয়েছে। সকল প্রস্তুতিও শেষ করা হয়েছে। আগত পর্যটকদের জন্য ৪ স্তরের নিরাপত্তা বলয় রয়েছে। জেলা পুলিশ ও ট্যুরিস্ট পুলিশ একত্রে পর্যটকদের নিরাপদ এবং স্বাচ্ছন্দ্যময় ভ্রমণ নিশ্চিতে কাজ করছে।”