কক্সবাজার জেলায় সরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার (কেপিআই) একটি মাইক্রোওয়েভ স্টেশন। শহরের কলাতলী বাইপাস সড়কের পাশে আদর্শ গ্রামে একটি পাহাড়ের ওপর এই স্টেশনটি নির্মিত হয় ১৯৭৬ সালে।
৫ দশমিক ৬ একর জমিতে সেখানে নির্মিত ৮৩ ফুট দীর্ঘ সম্প্রচার টাওয়ারে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন টেলিকম অপারেটর ও গোয়েন্দা সংস্থার রেডিও অ্যান্টেনা বসানো আছে। ‘মহেশখালী ডিজিটাল আইল্যান্ড’ প্রকল্পের অ্যান্টেনা ও বিটিভির সম্প্রচার যন্ত্রপাতিও রয়েছে সেখানে।
এলাকাটি স্থানীয়দের কাছে টিঅ্যান্ডটি টাওয়ার নামে পরিচিত।
কিন্তু গত ১৫ বছর ধরে পাহাড়টির চারপাশের জমি বেদখল এবং টাওয়ারের চারপাশে পাহাড় কাটার ফলে যে কোনও সময় টাওয়ারটি ধসে পড়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।
এটি ধসে পড়লে কক্সবাজারের সঙ্গে সারাদেশের সরকারি-বেসরকারি যোগাযোগে নেমে আসবে বিপর্যয়। পুরো দেশের সঙ্গে টেলিযোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে।
কলাতলী আদর্শ গ্রামের বাসিন্দারাসহ স্টেশনটিতে থাকা কর্মীরা জানিয়েছেন, গত ২০ দিন ধরে প্রতিরাতেই পাহাড় কাটা হচ্ছে। শতাধিক শ্রমিক ১৫০ ফুট উঁচু পাহাড়টি কেটে ডাম্পারযোগে মাটি সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। সশস্ত্র পাহারায় চলছে এই পাহাড় কাটা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মাইক্রোওয়েভ স্টেশনের চার-পাশে পাহাড়ের পাদদেশে বিশাল আয়তনের জায়গা দখল করে একাধিক স্থাপনা তৈরি করা হয়েছে। এই সব স্থাপনার মালিক মোহাম্মদ ইলিয়াস।
কক্সবাজার সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভুমি) আরিফ উল্লাহ নিজামী পাহাড় কাটার খবর পেয়ে গত শনিবার সেখানে গিয়েছিলেন।
তিনি সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পাহাড় কাটার সত্যতা পেয়েছি। তবে সেসময় পাহাড় কাটায় জড়িতরা ঘটনাস্থলে ছিল না, অভিযানের খবর পেয়ে পালিয়ে গেছে।”
এ বিষয়ে বনবিভাগকে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বলা হয়েছে বলে জানান তিনি।
কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা সরওয়ার আলম বলেন, “পাহাড়টি বনবিভাগের বলেই জানি। কিন্তু এখন এক ব্যক্তি তার মালিকানা দাবি করে কিছু কাগজপত্র জমা দিয়েছেন। সেগুলো যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। পাহাড়ের মতো জায়গা কারো ব্যক্তিমালিকানায় থাকার কথা না। শ্রেণী পরিবর্তন করে এটি করলেও পাহাড় কাটা অপরাধ। যাচাই-বাছাই করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
বনবিভাগের কক্সবাজার সদর রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা সমীর রঞ্জন শাহ বলেন, “ইলিয়াস নামের এক ব্যক্তি এই পাহাড়ের মালিকানা দাবি করে কাগজ জমা দিয়েছে। সেটা আসল নাকি ভুয়া যাচাই করা হচ্ছে।”
সংরক্ষিত বনভূমি দখলের অভিযোগে এই ইলিয়াসের বিরুদ্ধে ১২-১৪টি মামলাও রয়েছে বলে জানান তিনি।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০০৮ সালে কলাতলীর আদর্শ গ্রামে মাইক্রোওয়েভ স্টেশনের পাশের একটি জায়গা দখল করে ঘর করে অবস্থান নেন ইলিয়াস। এরপর তিনি ২০০৯ সালের জানুয়ারি মাসে কলাতলী টিঅ্যান্ডটি এলাকায় ৮০০১ নম্বর দাগের ২ একর সরকারি সংরক্ষিত বনভূমি দখল করে নেন। বনবিভাগ বেশ কয়েকবার সেই জায়গা থেকে তাকে উচ্ছেদ করলেও পূনরায় তা দখল করে নেন ইলিয়াস।
অভিযোগ রয়েছে, দখল করা জমিতে রোহিঙ্গাদের বসিয়ে তাদের দিয়ে নানা অপরাধমূলক কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন ইলিয়াস।
তবে ইলিয়াস তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে আসছেন।
তিনি সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “এটি আমার খতিয়ানভুক্ত জায়গা। আগে থেকেই এখানে স্থাপনা ছিল। এখানে টিঅ্যান্ডটির কোনও জায়গা নেই।
“আমার জায়গায় আমি আছি। আর এখন নতুন করে কোনও পাহাড় কাটাও হচ্ছে না। আমি কোনও অপরাধও করিনি।”