আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ প্রকল্পের জন্য পাহাড় কাটার অভিযোগ উঠেছে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। শহরের কলাতলী বাইপাস সড়কের পাশে চলছে আবাসিক ফ্ল্যাট উন্নয়ন প্রকল্প-১ এর এই কাজ।
যদিও পাহাড় নয়, বরং কর্তৃপক্ষের জমিতে থাকা টিলা কেটে আবাসিক প্রকল্পের কিছু কাজ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে বলে দাবি করেছে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। তবে আইনে টিলা কাটার বিষয়েও নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
রবিবার সরেজমিনে দেখা যায়, দুইটি এস্কেভেটর বা খননযন্ত্র ব্যবহার করে পাহাড় কাটার কাজ চলছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, দুদিন ধরে চলছে এ কর্মযজ্ঞ।
এ ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়েছে স্থানীয় পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো। পরিবশে অধিদপ্তরের মত জানতে চাইলে এক কর্মকর্তা বিষয়টি নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, সংবাদ প্রকাশ হলে তার সূত্র ধরে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের বাস্তবায়নাধীন আবাসিক ফ্ল্যাট উন্নয়ন প্রকল্প এলাকায় নির্মাণাধীন বহুতল ভবনের পূর্ব পাশে বেশ বড় আকারের একটি পাহাড় ছিল।
গাছপালা ও ঘন জঙ্গলে ভরা ওই পাহাড়টির মাটি কাটতে বর্তমানে ব্যবহার করা হচ্ছে দুটি খননযন্ত্র। যার সাহায্যে পাহাড়ের মাটি কেটে তা তুলে দেওয়া হচ্ছে ট্রাকে। এরপর সেই মাটি নিয়ে ফেলা হচ্ছে প্রধান সড়কের পাশের খালি নিচু জমিতে।
এসব কাজে বিভিন্ন পর্যায়ের ১০-১২ জন শ্রমিক ও কর্মচারিকে ব্যস্ত থাকতে দেখা গেল। তবে এদের কেউই পাহাড় কাটার বিষয়ে কোনও কথা বলতে রাজি হননি।
পাহাড় কাটার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এক কর্মচারী বলেন, “পাহাড়টির একাংশের মালিক কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। কাজ বাকি থাকায় মালিকদের ফ্ল্যাট বুঝিয়ে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। ফলে দ্রুত কাজ শেষ করার তাগিদ রয়েছে। পাহাড়ের একাংশ কেটে সেখানে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করা হবে।”
ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশনায় পাহাড় কাটার কাজ চলছে বলেও জানান তিনি।
তবে পাহাড় নয়, প্রকল্পের প্রয়োজনে টিলা কাটা হচ্ছে বলে জানালেন কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অথরাইজড অফিসার ও প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ রিশাদ উন নবী।
তিনি সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “এটা পাহাড় না। আসলে আমাদের জমির মধ্যে ভবনের পেছনের দিকে একটি টিলা জাতীয় জমি পড়ে গেছে। সেখানে আমাদের ফ্ল্যাট প্রকল্পের সাব-স্টেশনসহ আনুষঙ্গিক অন্যান্য স্থাপনা নির্মাণ করা হবে। যার কারণে দ্রুত কাজ চলছে।”
১৯৯৫ সালের বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইনে পাহাড় কাটা সম্পর্কে বলা আছে, “কোনও ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কতৃর্ক সরকারি বা আধা-সরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন বা দখলাধীন বা ব্যক্তিমালিকানাধীন পাহাড় ও টিলা কর্তন ও/বা মোচন করা যাইবে না। তবে শর্ত থাকে যে, অপরিহার্য জাতীয় স্বার্থের প্রয়োজনে অধিদপ্তরের ছাড়পত্র গ্রহণক্রমে কোনও পাহাড় বা টিলা কর্তন বা মোচন করা যাইতে পারে।”
পরিবেশ অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এই প্রকল্প শুরুর সময় পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে বিভিন্ন শর্তে ছাড়পত্র পেয়েছিল কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে একটি শর্ত ছিল যে, পাহাড়ের কোনও ক্ষতি না করে ভবন নির্মাণ করতে হবে।
কিন্তু সেসময় ছাড়পত্রের শর্ত লঙ্ঘন করে পাহাড়ের কিছু অংশ এস্কেভেটর দিয়ে কেটে নেওয়া হয়। তখনই পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে একাধিকবার পরিদর্শন করা হয় ঘটনাস্থল। তবে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
পরে ওই কেটে নেওয়া অংশে দুটি ভবনের একাংশ গড়ে তোলা হয়েছে। এখন ভবন দুটির পূর্ব পাশ লাগোয়া পাহাড়টিও কাটা হচ্ছে।
এদিকে ফ্ল্যাট নির্মাণের বিষয়ে কিছুই জানেন না পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. নুরুল আমিন। তিনি বলেন, “উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ কোথায় ফ্ল্যাট নির্মাণ করছে তা আমার জানা নেই। তথ্য দিলে সেখানে ছাড়পত্রের শর্ত লঙ্ঘন করা হচ্ছে কিনা খতিয়ে দেখা হবে। আপনারা নিউজ করেন, তখন নিউজের সূত্র ধরে আমরা পদক্ষেপ নেব।”
কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের মতো একটি দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠানের পক্ষে পাহাড় কাটার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে পরিবেশ বিষয়ক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এনভায়রনমেন্ট পিপল।
সংগঠনটির প্রধান নির্বাহী রাশেদুল মজিদ বলেন, “কক্সবাজারে এমনিতেই ব্যক্তি পর্যায়ে উদ্বেগজনক হারে পাহাড় কাটার ঘটনা ঘটছে। এ অবস্থায় প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়েও পাহাড় কাটা শুরু হলে কক্সবাজারে পাহাড় বলতে কিছু থাকবে না।”
দ্রুত পাহাড় কাটা বন্ধ করে কক্সবাজারের প্রাণ প্রকৃতি রক্ষায় এগিয়ে আসতে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।