বয়স্কভাতা, মুক্তিযোদ্ধা ভাতাসহ বিভিন্ন ধরনের সামাজিক নিরাপত্তামূলক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ১ লাখ ৩৬ হাজার কোটি টাকা খরচের পরিকল্পনা করছে সরকার, যা মোট বাজেট বরাদ্দের ১৭ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ।
বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে এমন প্রস্তাবই তুলে ধরেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ মোট বাজেটের ১৬ দশমিক ৫৮ শতাংশ। এ হিসাবে সামান্যই বাড়ছে সামাজিক নিরাপত্তা খাতের বরাদ্দ।
তবে, বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সিপিডি বলছে, সামাজিক সুরক্ষা খাতে বরাদ্দের বিষয়টি ‘ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে’ দেখাচ্ছে সরকার।
অর্থমন্ত্রী আগামী ১ জুলাই শুরু হতে যাওয়া নতুন অর্থবছরে প্রায় ৮ লাখ কোটি টাকা ব্যয়ের পরিকল্পনার প্রস্তাব করেন। এর মধ্যে ১ লাখ ৩৬ হাজার কোটি ২৬ কোটি টাকা খরচ করা হবে সামাজিক নিরাপত্তামূলক কর্মকাণ্ডে।
চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ দেওয়া হয় ১ লাখ ২৬ হাজার ২৭২ কোটি টাকা। এ হিসাবে নতুন অর্থবছরে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ বাড়ছে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা।
নতুন বাজেটে সুবিধাবঞ্চিত বৃদ্ধ, প্রতিবন্ধী, মা ও শিশু বিভাগে সেবা গ্রহীতার সংখ্যাও বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। সামাজিক সুরক্ষায় তৃতীয় লিঙ্গের সেবাগ্রহীতার সংখ্যা দ্বিগুণ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
বাজেট প্রস্তাবনায় অর্থমন্ত্রী বলেন, প্রায় ৯৩ শতাংশের বেশি ভাতাপ্রাপ্ত ব্যক্তি সরাসরি মোবাইল ব্যাংকিং ও ব্যাংক হিসাবে ‘গভর্নমেন্ট টু পার্সন’ ব্যবস্থার মাধ্যমে তাদের ভাতা পাচ্ছেন।
তিনি বলেন, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মোট ১ কোটি ১৫ লাখ ৩১ হাজার ৫৬৭ জনকে ‘গভর্নমেন্ট টু পার্সন’ পদ্ধতিতে ভাতা দেওয়া হচ্ছে। দেশব্যাপী প্রতিবন্ধিতা শনাক্তকরণ জরিপ সম্পন্ন হয়ছে। শনাক্তকৃত প্রায় ৩৩ লাখ ৩৪ হাজার প্রতিবন্ধীর তথ্য সম্বলিত ’ডিজঅ্যাবিলিটি ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট সিসটেম’ নামে নতুন সফটওয়্যার চালু করা হয়েছে।
এছাড়া ২০২৫-২৬ অর্থবছরে দেশব্যাপী বেসরকারি এতিমখানা বা প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবে সরাসরি ইএফটির (ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার) মাধ্যমে অনুদান প্রদান করা হবে বলেও জানান মন্ত্রী।
আগামী অর্থবছরে প্রতিবন্ধী ভাতাপ্রাপ্তের সংখ্যা ৩ লাখ ৩৪ হাজার বাড়ানো হবে জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, প্রতিবন্ধী ভাতাপ্রাপ্তের সংখ্যা বর্তমান ২৯ লাখ থেকে বাড়িয়ে ৩২ লাখ ৩৪ হাজার জনে উন্নীত করা হবে। প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের উপবৃত্তির হার বিদ্যমান ৯৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১ হাজার ৫০ টাকায় উন্নীত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানান আবুল হাসান মাহমুদ আলী।
সারা দেশে মা ও শিশুদের সহায়তা কার্যক্রমে আগামী অর্থবছরে উপকারভোগীর সংখ্যা ১ লাখ ৫০ হাজার ৪৮০ জনে উন্নীত করা হবে বলেও জানান অর্থমন্ত্রী। এর আওতায় ভাতা ৯৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১ হাজার ৫০ টাকা করা হবে।
সরকার প্রবীণ জনগোষ্ঠীর সুরক্ষায় বিশেষভাবে নজর দিচ্ছে। তাই আগামী অর্থবছরে ভাতাপ্রাপ্ত প্রবীণ জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ২ লাখ বাড়ানো হয়েছে জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, আগামী অর্থবছরে ভাতাপ্রাপ্ত প্রবীণের সংখ্যা বাড়িয়ে ৬০ লাখ ১ হাজার জনে উন্নীত করা হবে। প্রবীণদের জন্য মাসিক ৬০০ টাকা হারে ৪ হাজার ৩৫১ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী জানান, ভাতাপ্রাপ্ত বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা মহিলার সংখ্যা বিদ্যমান ২৫ লাখ ৭৫ হাজার জন থেকে বাড়িয়ে ২৭ লাখ ৭৫ হাজার জনে উন্নীত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ বাবদ ১ হাজার ৮৪৪ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
আগামী অর্থবছরে সামাজিক সুরক্ষায় তৃতীয় লিঙ্গের সংখ্যা দ্বিগুণ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। অর্থমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে মোট ৬ হাজার ৮৮০ জনকে ভাতা দেওয়া হচ্ছে। আগামী অর্থবছরে মোট ১২ হাজার ৬২৯ জনকে ভাতার আওতায় আনার পরিকল্পনা করা হয়েছে।
বেদে জনগোষ্ঠীর জন্য ভাতা প্রদান কার্যক্রম চালু রাখবে সরকার। অর্থমন্ত্রী জানান, আগামী অর্থবছরে সমাজের অনগ্রসর অন্যান্য জনগোষ্ঠীর ৯০ হাজার ৮৩২ জনকে ভাতার আওতায় আনা হবে। তৃতীয় লিঙ্গ, বেদেসহ সব অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জন্য শিক্ষার সুযোগ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে শিক্ষা উপবৃত্তি চলমান থাকবে।
বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতায় কোনও পরিবর্তন আনা হয়নি নতুন বাজেটে। তারা ২০২১-২২ অর্থবছর থেকে মাসে ২০ হাজার টাকা করে ভাতা পাচ্ছেন।
অর্থমন্ত্রী নতুন বাজেটে ১৭ দশমিক ০৬ শতাংশ সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করলেও বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সিপিডি বলছে, এ খাতে বরাদ্দের বিষয়টি ‘ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে’ দেখানো হচ্ছে।
বাজেটপরবর্তী তাৎক্ষণিক সংবাদ সম্মেলনে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদ খাতুন বলেন, “পেনশনের টাকা, সঞ্চয়পত্রের সুদ, কৃষিতে ভর্তুকি এবং মুক্তিযোদ্ধা ভাতা সামাজিক সুরক্ষা খাতে রাখা হয়েছে। এসব বাদ দিলে সামাজিক সুরক্ষা খাত বাজেটের মাত্র ৯ শতাংশ এবং জিডিপির মাত্র ১ শতাংশে নেমে আসে।”