মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী মংডু শহরে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহীদের সশস্ত্র লড়াইয়ের তীব্রতায় এতদিন কেবল কাঁপছিল টেকনাফ। এবার সেখানকার ঘরবাড়িতে ফাটল ধরতে শুরু করেছে।
বুধবার টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়নের আছারবুনিয়া গ্রামের অন্তত ২৫ টি বাড়িতে ফাটলের তথ্য পাওয়ার কথা জানিয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।
গত তিনদিন ধরে মংডুতে জান্তা বাহিনীর সঙ্গে আরাকান আর্মির তীব্র লড়াইয়ের খবর পাওয়া যাচ্ছে। সীমান্তের ওপারে বিস্ফোরণের বিকট শব্দ ভেসে আসছে এপারে। মিয়ানমারের আকাশে যুদ্ধ বিমান চক্কর বাংলাদেশ থেকেও দেখা যাচ্ছে, পাওয়া যাচ্ছে বোমা বর্ষণের আওয়াজ।
টেকনাফ সীমান্তের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, এক সপ্তাহ বিরতির পর সোমবার ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত টানা বিস্ফোরণের বিকট শব্দ শোনা যায়। ওই সময় আকাশে দেখা যায় যুদ্ধ বিমানও। কিছুক্ষণ বিরতি দিয়ে মধ্যরাত থেকে আবারও শুরু হয় বিস্ফোরণের বিকট শব্দ। যা মঙ্গলবার বিকাল ৩ টা পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। এ সময়ও আকাশে ছিল যুদ্ধ বিমান। বুধবার ভোর পর্যন্ত বিস্ফোরণের তীব্র শব্দের সঙ্গে কেঁপে ওঠে টেকনাফ।
সকালে আছারবুনিয়া গ্রামের বিভিন্ন বাড়িতে ফাটল দেখতে পান বাসিন্দারা। সন্ধ্যা পর্যন্ত অন্তত ২৫ টি বাড়িতে ফাটল দেখা যায়।
সাবরাং ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোহাম্মদ শরীফ জানান, আছারবুনিয়া গ্রাম থেকে মংডুর দূরত্ব চার কিলোমিটার। বিস্ফোরণে গ্রামের প্রায় ২৫ টি বাড়ির মাটির দেয়ালে ফাটল দেখা দিয়েছে। গত কয়েকদিন ধরে এই গ্রামের মানুষের রাত কাটছে নির্ঘুম। মর্টার শেলের বিকট আওয়াজে ঘুমানোও যায় না। রাত হলে স্থানীয়দের মাঝে আতঙ্ক দ্বিগুণ হয়।
সবশেষ গতরাতে যে বিস্ফোরণ মংডুতে হয়েছে, তার বিকট শব্দ ও ধাক্কায় বেশকিছু বাড়ির দেওয়াল ফেটে গেছে।
এই জনপ্রতিনিধি বলেন, ওই এলাকার মানুষকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। অপ্রয়োজনে বাড়ি থেকে বের না হওয়ার পাশাপাশি নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতেও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
আছাববুনিয়া এলাকার সমাজ কমিটির সভাপতি রফিক উদ্দিনও জানান, ফাটল ধরা ঘরগুলোয় বসবাস করা ঝুঁকিপূণ হয়ে পড়েছে। যেকোনো সময় ধসে পড়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
টেকনাফের ইউএনও মো. আদনান চৌধুরী জানিয়েছেন, রাখাইন রাজ্যের পরিস্থিতি নজরদারিতে রাখা হয়েছে। অনুপ্রবেশ ঠেকাতে নাফনদী ও সীমান্তে বিজিবি ও কোস্টগার্ড সতর্ক আছে। এছাড়া গ্রামবাসীর বসতবাড়িতে ফাটল ধরার বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনের জন্য সরকারি সহায়তার ব্যবস্থা করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।