Beta
বৃহস্পতিবার, ৩ অক্টোবর, ২০২৪
Beta
বৃহস্পতিবার, ৩ অক্টোবর, ২০২৪
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ

যুক্তরাষ্ট্রে ‘সুপার বোল’কেও চ্যালেঞ্জ জানাল ক্রিকেট

যুক্তরাষ্ট্রের নাসাউ ক্রিকেট স্টেডিয়ামের গ্যালারি উপচে পড়েছিল ভারত-পাকিস্তান ম্যাচে। ছবি: সংগৃহীত।
যুক্তরাষ্ট্রের নাসাউ ক্রিকেট স্টেডিয়ামের গ্যালারি উপচে পড়েছিল ভারত-পাকিস্তান ম্যাচে। ছবি: সংগৃহীত।
Picture of বদিউজ্জামান মিলন

বদিউজ্জামান মিলন

জাসপ্রিত বুমরা যখন মোহাম্মদ রিজওয়ানকে বোল্ড আউট করলেন, নাসাউ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে দর্শকের গর্জনের মাত্রা ছিল ১২৩ ডেসিবেল! যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের আইনে প্রাত্যহিক গ্রহণযোগ্য শব্দের মাত্রা ৯০ ডেসিবেল। বেশি হলেই আইন লঙ্ঘন!

লঙ্ঘন হলেও এটা খেলার মাঠের আলোড়ন। তাই খড়গহস্ত হওয়ার কিছু নেই। উল্টো ছিল বিস্ময়। ৫১ বছর বয়সী নর্থ ক্যারোলিনার হেম নারকার দর্শক-সমর্থকদের এমন হুল্লোড় দেখে বিস্মিত হয়েছেন। নিউ ইয়র্ক পোস্টকে তিনি বলেছেন, “দর্শকদের মধ্যে অবিশ্বাস্য এনার্জি দেখেছি। ভারত-পাকিস্তান ম্যাচে এমনই হয়!”

জো লা পোর্তা ৩ ঘণ্টা গাড়ি চালিয়ে প্রথমবারের মতো ক্রিকেট ম্যাচ দেখতে এসে উন্মাদনায় ভেসে গেছেন। কারণ তার ভারতীয় মেয়ে বন্ধু এশা বৈদ্য ভীষণ ক্রিকেট অনুরাগী এবং ভারতের অধিনায়ক রোহিত শর্মার এক সময়ের সহপাঠীও।  

স্টেডিয়ামে যারা খেলা দেখতে পারেনি, তাদের জন্য উন্মুক্ত স্থানে বড় পর্দায় খেলা দেখার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। ছবি: সংগৃহীত।

গত রবিবার যুক্তরাষ্ট্রে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচে হুজুগে মেতেছিল প্রবাসী দক্ষিণ এশিয়ানরা। এই দেখে খুব উৎসুক হয়ে ওঠে আমেরিকানরা। এর খুব ভাল ব্যাখ্যা করেছেন ব্যাংকিং টেকনোলজিস্ট ববি মেহেরা, “যুক্তরাষ্ট্রের মানুষ ক্রিকেট খেলা জানে না। তারা হঠাৎ করে দেখছে, যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ আসছে স্টেডিয়ামে। এখানে খেলাটির বিস্তারের জন্য মানুষের এমন সম্পৃক্ততা খুব দরকার।”

এই ম্যাচ দেখতে এসে বাসিত কাদরির উপলব্ধি, “এটাকে সুপার বোলের চেয়ে বড় ভাবতে হবে।” আমেরিকান ফুটবলের ‘বিগ ম্যাচ’কেও চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে ভারত-পাকিস্তান ক্রিকেট ম্যাচ !    

যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা আমেরিকান ফুটবল (এনএফএল), বাস্কেটবল (এনবিএ), সকার (এমএলএস), বেসবল (এমএলবি)। অথচ সেখানেই কিনা এবার চার ছক্কার ফুলঝুরি হচ্ছে। ক্রিকেট খেলাটা বৈশ্বিক না হলেও একটা অঞ্চলে খুব জনপ্রিয়, সেটা যেন রবিবার হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে যুক্তরাষ্ট্রবাসী। আরও স্পষ্ট করে বললে নিউইয়র্কের বাসিন্দরা।

মাঠে ছিল পাকিস্তানি দর্শকদের উন্মাদনা। দিন শেষে সেই উন্মাদনা হারিয়ে যায়।

সকালে বেরসিক বৃষ্টি একটু বাগড়া বাধিয়েছিল। কিন্তু তারপরও যেন জনস্রোত আটকে রাখা যায়নি নাসাউ স্টেডিয়ামমুখী। শুধু নিউইয়র্কপ্রবাসী ভারত-পাকিস্তানিরাই নয়, মন্ট্রিল, লন্ডন থেকেও দর্শক এসে জড়ো হয়েছিল এই স্টেডিয়ামে।

গ্যালারি উপচে পড়েছিল দর্শকে। নীল সমুদ্রের মাঝে সবুজের ছোপও ছিল । ৩৪০২৮ জন দর্শক ধারণক্ষমতার স্টেডিয়ামে তিল ধারনের ঠাঁই ছিল না। যারা টিকিটি পাননি তারা নিউইয়র্কের রাস্তার পাশে বড় পর্দায় উপভোগ করেছেন এই ম্যাচ। শুধু তাই নয়, সিটি ফিল্ড স্টেডিয়ামে বসানো হয়েছিল বড় পর্দা। অথচ এটি বেসবলের অন্যতম বড় দল নিউইয়র্ক মেটসের হোম ভেন্যু। এদিন ক্রিকেট দর্শকদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছিল এই স্টেডিয়াম।

টিকিট নিয়েও ছিল রীতিমতো কাড়াকাড়ি। যারা আগে থেকে অনলাইনে টিকিট কেটেছিলেন তারা সৌভাগ্যবান। কিন্তু কালোবাজারেও দেদারছে বিকিয়েছে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের টিকিট।

ভারতীয় দর্শক বেশি ছিল মাঠে।

টরন্টো থেকে সারা রাত গাড়ি চালিয়ে নিউয়র্ক এসেছিলেন ইরফান নামের এক পাকিস্তানি সমর্থক। তিনি কালোবাজার থেকে এই ম্যাচের টিকিট কেনেন ২০০০ ইউএস ডলার দিয়ে। কিন্তু তিনি নিজেই আবার স্বীকার করে নিয়েছেন, চাহিদা বেশি থাকায় টিকিটের চড়া মূল্য দিতে হয়েছে, “এই ম্যাচের জন্য দামটা একটু বেশিই। কিন্তু কি আর করবেন? আমার মনে হয় চাহিদা বেশি থাকার কারণেই এমনটা হয়েছে।” দক্ষিণ এশিয়ানরা ক্রিকেটকে এমন গোগ্রাসে গেলে ৩৫ হাজার ধারন ক্ষমতার স্টেডিয়াম সেখানে নস্যি। আর অচেনা খেলাটিকে নিয়ে মানুষের এমন পাগলামি প্রথম দেখল যুক্তরাষ্ট্র।

পাঁচ মাস বয়সী শিশুকে নিয়ে ইংল্যান্ডের কভেন্ট্রি থেকে ছুটে এসেছেন পাকিস্তানের আরেক সমর্থক হাফিজ। তিনি বলছিলেন, “আপনি ভক্তদের আবেগ দেখেই বুঝতে পারবেন, ক্রিকেট মানে আসলে কি?”

এইসেনহাওয়ার পার্কের এই স্টেডিয়ামে আরও কয়েকটা ম্যাচ হয়েছে। কিন্ত এমন উন্মাদনা কে কবে দেখেছে? রবিবারই যে প্রথম কর্পোরেট বিভাগের প্লাস্টিকে মোড়ানো সিটগুলো খোলা হয়েছে।

ক্রিকেটের আভিজাত্য যেন এই ম্যাচে পেখম খুলে দিয়েছিল। ভিআইপি বক্সে কারা ছিলেন না? বলিউড তারকা আনুশকা শর্মা থেকে শুরু করে স্ত্রী-কন্যাসহ শচীন টেন্ডুলকার তো ছিলেনই। দেখা গেল দর্শক সারিতে বসে আছেন নোবেলজয়ী পাকিস্তানি মালালা ইউসুফজাইকেও।

সিটি ফিল্ড স্টেডিয়ামে বসানো হয়েছিল বড় পর্দা। অথচ এটি বেসবলের অন্যতম বড় দল নিউইয়র্ক মেটসের হোম ভেন্যু।

এই ম্যাচ উপলক্ষ্য ক্রিস গেইল পরেছিলেন বিশেষ স্যুট-ব্লেজার। যার একদিকে ভারতীয় গেরুয়া রং, অন্যদিক পাকিস্তানের সবুজ। এমনকি তার ব্লেজারে ক্রিকেটারদের অটোগ্রাফও নিতে দেখা গেল।

এই ম্যাচ নিয়ে নিরাপত্তার কমতি ছিল না। ছিল ডগ স্কোয়াড, বোম্ব ডিসপোসাল ইউনিট, সামরিক অস্ত্রসস্ত্র সাজে ছিল মহড়া, মাথার ওপরে চক্কর দিয়েছে হেলিকপ্টার।

স্টেডিয়ামে পাকিস্তানের তুলনায় ভারতের দর্শক ছিল বেশি। ম্যাচের শুরুতে টেলিভিশন পর্দায় দেখাচ্ছিল জয়ের সম্ভাবনা শতকরা ৮ ভাগ ছিল ভারতের। মাত্র ১১৯ রানে ভারতকে আটকে যেতে দেখে হতাশ এক ভারতীয় সমর্থক জাসান কারলা। কুইনসের লং আইল্যান্ড সিটির ২৪ বছর বয়সী দর্শক তো পারলে প্রথম ইনিংস দেখেই মাঠ ছাড়েন। ওই সময় তিনি বলছিলেন, “পাকিস্তান জিততে যাচ্ছে। একেবারে সহজ জয় পেতে যাচ্ছে ওরা। এবং আমি মাঠে বসে এই দৃশ্য দেখতে চাই না। আমি চাইনা পাকিস্তানি সমর্থকেরা আমার সামনে আনন্দ করুক। তাই ওটা এড়াতে চেষ্টা করেছি এবং মাথা উঁচু করে মাঠ ছেড়েছি।”

পরিবার নিয়ে মাঠে খেলা দেখতে এসেছিলেন শচীন টেন্ডুলকার।

বাসায় ফিরে নিশ্চয় চুল ছিড়তে ইচ্ছে হয়েছে কারলার! হাতের মুঠোয় থাকা ম্যাচটা যে ভারত শেষ পর্যন্ত জিতে নিয়েছে ৬ রানে!

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত