Beta
মঙ্গলবার, ২১ জানুয়ারি, ২০২৫
Beta
মঙ্গলবার, ২১ জানুয়ারি, ২০২৫

‘মনস্তাত্ত্বিক সীমা’ পেরিয়ে সূচক নামল ৫৩০০ পয়েন্টে  

ঢাকার একটি ব্রোকারেজ হাউসে পুঁজিবাজারের লেনদেন পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
ঢাকার একটি ব্রোকারেজ হাউসে পুঁজিবাজারের লেনদেন পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
[publishpress_authors_box]

মন্দা পুঁজিবাজারে পতনের ধারা অব্যাহত। এ পরিস্থিতিতে আস্থার সংকটে ভোগা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে সদ্য শেষ হওয়া সপ্তাহজুড়েই বিক্রির প্রবণতা লক্ষ করা গেছে।  

সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার দেশের প্রধান বাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৫৮ দশমিক ৭০ পয়েন্ট বা ১ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ কমে ৫ হাজার ৩১২ দশমিক ৩৯ পয়েন্টে নেমে এসেছে।

অন্য বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১৫৫ পয়েন্ট বা ১ শতাংশ কমে ১৫ হাজার ৪০৩ পয়েন্টে নেমে এসেছে।

সূচকের পাশাপাশি লেনদেনও কমেছে দুই বাজারে।

সপ্তাহের প্রথম দিন রবিবার ৩৭ মাস পর ডিএসইএক্স সূচকটি ৮৬ দশমিক ১৩ পয়েন্ট বা ১ দশমিক ৫৬ শতাংশ কমে ৫ হাজার ৪৩১ দশমিক ২৮ পয়েন্টে নেমে আসে। দ্বিতীয় দিন সোমবার আরও ৩৭ দশমিক ৬২ পয়েন্ট বা দশমিক ৬৯ শতাংশ কমে ৫ হাজার ৩৯৩ দশমিক ৬৫ পয়েন্টে অবস্থান করে।

মঙ্গলবার ডিএসইএক্স পড়ে ২২ দশমিক ৫৫ পয়েন্ট। সূচকটি নামে ৫ হাজার ৩৭১ দশমিক ১০ পয়েন্টে।

বুদ্ধপূর্ণিমা উপলক্ষে বুধবার ছিল সরকারি ছুটি। এ দিন কোনও বাজারেই লেনদেন হয়নি। বৃহস্পতিবারও বড় দরপতনে সপ্তাহের লেনদেন শেষ হয়।

এ নিয়ে গত আট কর্মদিবসে ডিএসইএক্স কমেছে ৪০০ পয়েন্টের মতো। চলতি সপ্তাহের চার কর্মদিবসে কমেছে ২০৫ পয়েন্ট।

পুঁজিবাজারে সূচকের সাড়ে ৫ হাজার পয়েন্ট বিনিয়োগকারীদের কাছে ‘মনস্তাত্ত্বিক সীমা’ হিসেবে পরিচিত। সূচক যখন এ ধরনের সীমার নিচে নেমে যায়, তখন নতুন করে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক ভর করে। সপ্তাহ শেষে সেই সূচক তারও নিচে নেমে এসেছে।

বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছে, এমনিতেই গত ফেব্রুয়ারি থেকে পুঁজিবাজারে টানা মন্দাভাব চলছে। এর মধ্যে সম্প্রতি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে পুঁজিবাজারে মূলধনি আয়ের ওপর কর আরোপের (ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্স) পরিকল্পনা নিয়েছে।

গত সপ্তাহে বাজেট নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এনবিআরের পক্ষ থেকে এ পরিকল্পনা তুলে ধরা হয়।

এনবিআর সূত্রে জানা যায়, পুঁজিবাজারে ৪০ লাখ টাকার বেশি মূলধনি আয়ের ক্ষেত্রে আগামী অর্থবছর থেকে ১৫ শতাংশ কর আরোপের চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। বর্তমানে পুঁজিবাজারে মূলধনি আয়ে কোনও ধরনের কর নেই।

মূলধনি আয়ের ওপর কর আরোপে সরকারের উদ্যোগ নিয়ে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। তা দেখে পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের মধ্যে হতাশা বেড়েছে, যার প্রভাব পড়েছে বাজারে। 

দরপতন ঠেকাতে গত ২৫ এপ্রিল শেয়ারের দাম কমার সর্বোচ্চ সীমা ৩ শতাংশ বেঁধে দেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। ওই সীমা আরোপের পর থেকে পুঁজিবাজারে কোনও শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের দাম এক দিনে ৩ শতাংশের বেশি কমতে পারে না।

কিন্তু গত কয়েক দিনের দরপতনে দেখা যাচ্ছে, লেনদেনের শুরুতেই বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ারের সর্বোচ্চ দরপতন ঘটছে। এতে সূচকটি দ্রুত কমতে শুরু করে। দিনের শুরুতে সূচকের বড় পতন হলে পরে সেটি খুব বেশি ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না।

পুঁজিবাজার ঘিরে চলা দীর্ঘ উৎকণ্ঠার মধ্যে গত ২৮ এপ্রিল বিএসইসির চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের পুনঃনিয়োগ হয়। সেদিন অবশ্য সূচকের বড় উত্থান হয়।

ওই দিন ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স প্রায় ১০০ পয়েন্টের মতো বেড়েছিল। এমন উত্থান অনেক দিন দেখা যায়নি। সেদিন অন্য বাজার সিএসইর সার্বিক সূচক সিএএসপিআই বেড়েছিল প্রায় ২০০ পয়েন্ট।

পরের দিন অর্থাৎ ২৯ এপ্রিল দুই বাজারেই সূচক পড়ে যায়। ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৪৬ দশমিক ১৫ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ৫৬৯ দশমিক ৬৮ পয়েন্টে নামে। অন্য বাজার সিএসইর সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৬১ পয়েন্ট কমে ১৫ হাজার ৯৩৮ পয়েন্টে অবস্থান করে।

এরপর কয়েক দিন অবশ্য সূচক অল্প অল্প করে খানিকটা বাড়ে। ডিএসইতে লেনদেন ১ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছিল।

এরপর আবার সেই পতনের ধারায় ফেরে পুঁজিবাজার, যা এখনও চলছে।

বাজারের এই টানা পতনে হতাশ ও ক্ষুব্ধ ছোট বিনিয়োগকারী রাজধানীর শেওড়াপাড়ার বাসিন্দা গোবিন্দ দাশ। মিরপুর-১০ নম্বরের একটি ব্রোকারেজ হাউসে লেনদেন করেন।

উষ্মা প্রকাশ করে সকাল সন্ধ্যাকে তিনি বলেন, “কী হচ্ছে বাজারে কিছুই বুঝতে পারছি না। লেনদেন শুরু হলেই সূচক কমছে। আর কতো পড়বে? আমাদের একটাই প্রশ্ন—বাজার আর কতোদিন এভাবে চলবে? কী হবে আমাদের?”

আগামী ৬ জুন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করবেন। ৩০ জুন সেই বাজেট পাস হবে। ১ জুলাই থেকে শুরু হবে নতুন বাজেটের বাস্তবায়ন।

বাজেটের আগে পুঁজিবাজারের টানা দরপতনে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এই বাজারের বিশ্লেষক আহমেদ রশিদ লালী।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সদস্য ব্রোকারেজ হাউসের মালিকদের সংগঠন ডিএসই ব্রোকারেজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) সভাপতি ছিলেন লালী।

সকাল সন্ধ্যাকে তিনি বলেন, “এমনিতেই দীর্ঘদিন ধরে বাজারে মন্দা চলছে। এর মধ্যে আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটকে ঘিরে গণমাধ্যমে নানা খবর প্রকাশিত হচ্ছে। বলা হচ্ছে, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করে ৪০ লাখ টাকার বেশি মুনাফার ওপর কর ১৫ শতাংশ গেইন ট্যাক্স আরোপ করবে। এই খবর নিয়ে বাজারে নতুন করে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। আর সেই আতঙ্কে বাজারে সূচকের টানা পতন হচ্ছে।”

‘এছাড়া যখন তখন বাজারে অযাচিত হস্তক্ষেপের কারণেও বাজার পড়ছে’ এ মন্তব্য করে লালী বলেন, “ফ্লোর প্রাইস বা সর্বনিম্ন মূল্যস্তর তুলে নেওয়ার কিছু দিন যেতে না যেতেই ২২ কোম্পানিকে ‘জেড’ গ্রুপে পাঠানো হলো। পরে আরও ৬টিকে পাঠানো হয়েছে। আরও কিছু কোম্পানিকে পাঠানো হবে বলে জানা যাচ্ছে। যেসব বিনিয়োগকারী এসব কোম্পানিতে বিনিয়োগ করেছিলেন, তাদের এখন কী হবে?

“এরপর পুঁজিবাজারে দরপতন সীমা বেঁধে দেয় বিএসইসি। বলা হয়, তালিকাভুক্ত কোনও কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের দাম এক দিনে ৩ শতাংশের বেশি কমতে পারবে না।”

“এসব কারণে বাজারে এখন আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। বাজারের প্রতি ছোট-বড় কোনও বিনিয়োগকারীর এখন আস্থা নেই। লেনদেন শুরু হলেই বাজার পড়ছে,” বলেন পুঁজিবাজার বিশ্লেষক লালী।

বৃহস্পতিবারের বাজার পরিস্থিতি

সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৫৮ দশমিক ৭০ পয়েন্ট বা ১ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ কমে ৫ হাজার ৩১২ দশমিক ৩৯ পয়েন্টে নেমে এসেছে।

ডিএসইর অন্য সূচক ডিএসইএস ১৫ দশমিক শূন্য ১ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ১৫৯ পয়েন্ট এবং ডিএস-৩০ সূচক ২২ দশমিক ২৩ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৯০৭ পয়েন্টে অবস্থান করছে।

বৃহস্পতিবার এই বাজারে ৫০৮ কোটি টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। আগের কার্যদিবস মঙ্গলবার লেনদেনের অঙ্ক ছিল ৫৯১ কোটি ৬২ লাখ টাকা।

এদিন ডিএসইতে মোট ৩৮৯টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। লেনদেনে অংশ নেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে দর বেড়েছে ৪২টির, কমেছে ৩১৯টির ও অপরিবর্তিত ২৮টির।  

অন্য বাজার সিএসইর সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১৫৫ পয়েন্ট বা ১ শতাংশ কমে ১৫ হাজার ৪০৩ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।

লেনদেন হয়েছে ৬ কোটি ৯০ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট। মঙ্গলবার লেনদেনের অঙ্ক ছিল ৭ কোটি ৫৫ লাখ টাকা।

২২১টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দাম বেড়েছে ২১টির, কমেছে ১৭৭টির ও অপরিবর্তিত ২৩টির দর।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত