Beta
সোমবার, ২১ এপ্রিল, ২০২৫
Beta
সোমবার, ২১ এপ্রিল, ২০২৫

দূর থেকে দেশ দেখতে ঘুমধুম সীমান্তে রোহিঙ্গাদের ভিড়

ঘুমধুম সীমান্তবর্তী মৈন্ত্রী সড়কে দিনভর ছিল রোহিঙ্গা নাগরিকদের ভিড়। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
ঘুমধুম সীমান্তবর্তী মৈন্ত্রী সড়কে দিনভর ছিল রোহিঙ্গা নাগরিকদের ভিড়। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
[publishpress_authors_box]

নিজের ভিটেমাটি ছেড়ে পরবাসী হতে হয়েছে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে। গত সাড়ে ছয় বছরের বেশি সময় ধরে তারা বাস করছেন কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ৩২ টি ক্যাম্প এবং ভাসানচরে।

মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর দমন-পীড়নের শিকার হয়ে প্রাণ বাঁচাতে ২০১৭ সালে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছিলেন এই রোহিঙ্গা নাগরিকরা। যাদের গত ১৪ টি ঈদ কেটেছে ভিন দেশের মাটিতে।

শরণার্থী শিবিরের ছোট্ট পরিসরে বসবাস করা এসব রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ছিল নিজের ঘর, নিজের বাড়ি। তারা ফেলে এসেছেন জন্ম, বেড়ে ওঠার স্মৃতি। দীর্ঘ এই ক্যাম্পজীবনে তাই বারবারই দেশে ফেরার আকুতি জানিয়েছে রোহিঙ্গারা।

আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা থেকে শুরু করে যারাই এই শরণার্থী রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়িয়েছে, তাদের কাছেই জানিয়েছে দেশে ফেরার ব্যবস্থা করে দেওয়ার সুযোগ।

সবশেষ বৃহস্পতিবার ঈদের নামাজ শেষে মোনাজাতেও স্বদেশে মর্যাদার সঙ্গে নিরাপদ প্রত্যাবাসনের জন্য সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করেন রোহিঙ্গা নাগরিকরা।

কিন্তু কবে আসবে সেই দিন, তা জানেন না তারা। বিশেষ করে বর্তমানে মিয়ানমারে সশস্ত্র বিদ্রোহীদের সঙ্গে চলমান ‘গৃহযুদ্ধ’ তাদের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনে নতুন করে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে কিনা, তাও এখন ভাবাচ্ছে রোহিঙ্গাদের।

শরণার্থী জীবনের নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও নিজের দেশের মাটিকে দূর থেকে এক নজর দেখতে রোহিঙ্গারা ভিড় জমিয়েছিলেন বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে। ঈদের দিন থেকে শনিবার পর্যন্ত ঘুমধুম সীমান্তে ছিল রোহিঙ্গাদের ঢল।

না, সীমান্ত পেরিয়ে ওপারে যাননি তারা। কেবল দূর থেকে জন্মভূমির দৃশ্য দেখে মনের সাধ মিটিয়েছেন।

এই রোহিঙ্গারা মূলত উখিয়ার বালুখালীর কয়েকটি রোহিঙ্গা শিবিরের বাসিন্দা। যে শিবিরগুলোর অবস্থান বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম সীমান্তের কাছে। তাই ঈদের সুযোগ নিয়ে কিছু সময়ের জন্য বেরিয়েছিলেন ক্যাম্পের বাইরে, চার লেনের মৈত্রী সড়কের এপার দিয়েই দুচোখ ভরে দেখেছেন মাতৃভূমি।

শুক্রবার বিকালে মৈত্রী সড়কে দেখা মেলে কয়েক’শ রোহিঙ্গা নাগরিককে। ছিলেন স্থানীয় বাসিন্দারা। ফলে সড়ক জুড়ে দেখা যায় মানুষের উপড়ে পড়া ভিড়।

কথা হয় উখিয়ার ২০ নম্বর ক্যাম্প থেকে আসা বৃদ্ধ আবদুল গফুরের সঙ্গে। তিনি বললেন, স্বদেশে কখন ফিরতে পারবেন জানান না। যে মাটিতে তার জন্ম হয়েছে, যৌবন কেটেছে সেখানে ফেরার আকাঙ্ক্ষায় এখন দিন গুনছেন তিনি। আপাতত ওপারের মাটি-গাছ আর গ্রামের দৃশ্য দেখেই মন ভরাতে চান, আর সেজন্যই ক্যাম্প থেকে বের হয়ে একনজর দেখতে এসেছেন জন্মভূমির মাটি।

সাড়ে ৬ বছর ধরে নিজের ভিটার বাইরে থাকা যুবক রফিকুল ইসলাম জানালেন, বিচ্ছিন্নভাবে অনেক রোহিঙ্গাই সীমান্তের ওপারে যান। এভাবে চুরি করে বা লুকিয়ে তিনি যেতে চান না। একদিন নিশ্চয়ই স্বাভাবিক নিয়মে ফিরবেন, সেই দিনের প্রত্যাশায় রয়েছেন। এখন কেবল সীমান্ত দিয়ে মিয়ানমারের দৃশ্য দেখতেই ক্যাম্প থেকে বেরিয়েছেন।

ক্যাম্পের কাঁটাতারের বাইরে বের হওয়ার নিয়ম নেই রোহিঙ্গাদের। তবে এদের অনেককেই ক্যাম্পের আশপাশে ঘুরতে দেখা যায়। যদিও উখিয়ার বাইরে তারা যেতে পারেন না। উখিয়া থেকে কক্সবাজার যাবার চেষ্টা করলেই কোনও না কোনও চেকপোস্টে ধরা পড়ে যান তারা।

শনিবারও কক্সবাজারে ৭১ রোহিঙ্গাকে আটক করা হয়েছে। ক্যাম্প থেকে ঘুরতে বের হয়ে বিভিন্ন তল্লাশী চৌকিতে আটক হন তারা।

স্থানীয় বাসিন্দা আবদুল আজিজ জানান, বৃহস্পতিবার বিকাল থেকে শনিবার পর্যন্ত দফায় দফায় রোহিঙ্গাদের সীমান্তের সড়কটিতে ঘুরতে আসতে দেখেছেন তারা। তারা সীমান্ত এলাকায় দাঁড়িয়ে মোবাইল ফোনে ছবি ধারণ করেছেন, নিজেদের ছবি তুলেছেন, ঘোরাঘুরি করে আবার ক্যাম্পে ফেরতও গেছেন।

বিষয়টি নিয়ে ক্যাম্পে দায়িত্বরত কোনও কর্মকর্তার মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত