বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের পাতায় অমলিন এমএ আজিজ স্টেডিয়াম। এ মাঠে নিজেদের প্রথম টেস্ট জয় পেয়েছিল বাংলাদেশ। অথচ এমন একটি মাঠে এখন ক্রিকেটের বিচরণ অনেক কম। সম্প্রতি যে ঘোষণা এসেছে ক্রীড়া মন্ত্রণালয় থেকে তাতে আগামী ২৫ বছরে এ মাঠে ক্রিকেট থাকছে না।
২৫ বছরের জন্য মাঠটিকে ফুটবলের জন্য বরাদ্দ দিয়েছে ক্রীড়া মন্ত্রণালয়। এই মাঠের সংস্কার, ব্যবহার সবকিছু এখন বাফুফের অধীনে। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড, চট্টগ্রাম বিভাগীয় বা জেলা ক্রীড়া সংস্থাকে এই মাঠ ব্যবহার করতে হলে বাফুফের অনুমতি নিতে হবে।
বিষয়টি মেনে নিতে পারছে না চট্টগ্রামের ক্রিকেট সংগঠক ও বিসিবি কাউন্সিলররা। মন্ত্রণালয়ের এমন সিদ্ধান্তকে ক্রিকেটের জন্য বিরাট ক্ষতি বলছেন তারা। তাই মাঠটি ক্রিকেটে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য মন্ত্রণালয় বরাবর স্মারক চিঠি পাঠানো হয়েছে জেলা ক্রীড়া সংস্থার পক্ষ থেকে।
চট্টগ্রাম আঞ্চলিক ক্রিকেট সংস্থার সদস্য সচিব সিরাজ উদ্দিন মোহাম্মদ আলমগীর সকাল সন্ধ্যাকে জানিয়েছেন, “আমরা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে ক্রীড়া উপদেষ্টার কাছে স্মারক লিপি আকারে চিঠি দিয়েছি। চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার কাউন্সিলর যারা আছেন মোট ৭৭টি ক্লাবের সদস্যরা উক্ত চিঠিতে সাক্ষর করেছেন।”
বিষয়টি প্রধান উপদেষ্টার নজরেও আনার চেষ্টা করছেন সংগঠকরা। রবিবারে মানববন্ধন করে এই স্টেডিয়ামটি আবার ক্রিকেটের জন্য ফিরিয়ে দেওয়ার আবেদন তুলবেন।
মন্ত্রণালয়ের এমন সিদ্ধান্তে চট্টগ্রামের ক্রিকেটের ক্ষতি তুলে ধরে আলমগীর বলেছেন, “এই সিদ্ধান্তটা চট্টগ্রাম ক্রিকেটের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। পুরো দেশের মধ্যে বিভাগীয় ক্রিকেট নিয়মিত ছিল চট্টগ্রামে। এই বিভাগের ১১টি জেলার ক্রিকেট কার্যক্রম পুরোটাই এই স্টেডিয়াম কেন্দ্রিক। আমরা এখানে চট্টগ্রাম প্রিমিয়ার লিগ, বিভাগীয় ক্রিকেট থেকে বয়সভিত্তিক ক্রিকেট সব আয়োজন করতাম। এখন এটা বাফুফেকে দিয়ে দেওয়ায় চট্টগ্রামের ক্রিকেট কোথায় হবে তা নিয়ে শঙ্কায় আছি।”
এমএ আজিজ স্টেডিয়াম ছাড়া চট্টগ্রামে স্থানীয় ক্রিকেটের জন্য আর কোন ভেন্যু নেই। চট্টগ্রামের ক্রিকেট সংগঠকদের হতাশা তাই একটু বেশি। আলমগীর হতাশার সুরে বললেন ফুটবল স্টেডিয়াম যে কোন মাঠকেই সংস্কার করে তৈরি করা যায়। কিন্তু ক্রিকেট ভেন্যু তৈরি করা সহজ নয়।
আলমগীর বলেছেন, “এমএ আজিজ একটি আন্তর্জাতিক ভেন্যু। এমন তৈরি ভেন্যু পাওয়া তো সহজ কথা নয়। চট্টগ্রামে আর একটিও এমন স্টেডিয়াম নেই যে ক্রিকেট চালানো যায়। মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্সের মাঠটি ছোট সেখানে ভালো ড্রেসিংরুম নেই। বড় পর্যায়ে ম্যাচ আয়োজনের মতো প্রস্তুতও নয়। একটা মোটামুটি মানের মাঠকে সংস্কার করে ফুটবলের জন্য তৈরি করা যায়। কিন্তু ক্রিকেট মাঠ তৈরি করা সহজ না।”
১৯৮৮ সালে উইলস এশিয়া কাপ দিয়ে যাত্রা শুরু হয় এই মাঠের। এরপর ২০০৫ পর্যন্ত ১০ ওয়ানডে ও ৮টি টেস্ট হয়েছে এই মাঠে। ২০০৫ সালের পর মাঠটি ক্রিকেট অনুশীলন, ট্যুর ম্যাচ, ঘরোয়া ক্রিকেট ও ফুটবলের জন্য ব্যবহার হয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের ঘোষণায় এখন পুরোপুরি ফুটবলের হয়ে গেল। ক্রিকেট সংগঠকদের দাবি মানা হলে হয়তো ব্যাট বলের শব্দ আবার শোনা যাবে এই স্টেডিয়ামে।