আইনজীবীদের বিক্ষোভের মুখে পদত্যাগ করেছেন চট্টগ্রামের অতিরিক্ত সরকারি কৌঁসুলি (এপিপি) নেজাম উদ্দীন।
তার বিরুদ্ধে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যা এবং সেই ঘটনায় জড়িত আসামিদের পক্ষে ওকালতনামায় স্বাক্ষর করার অভিযোগ তোলেন বিক্ষোভকারীরা।
গত অক্টোবরেই এই পদে নিয়োগ পান নেজাম উদ্দীন। তিনি চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতে সরকারি কৌঁসুলি মফিজুল হক ভূঁইয়ার জুনিয়র।
সোমবার চট্টগ্রাম আদালত ভবনে বিক্ষোভ ও তার পদত্যাগের ঘটনা ঘটে। এতে দিনভর উত্তপ্ত ছিল চট্টগ্রাম আদালত পাড়া।
বিক্ষোভকারী আইনজীবীরা মূলত বিএনপি ও জামায়াতপন্থী। তারা নেজাম উদ্দিনের সিনিয়র সরকারি কৌঁসুলি মফিজুল হক ভূঁইয়ারও পদত্যাগ দাবি করেন। এছাড়া নেজাম উদ্দীন ও মফিজুল হক ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নিতে স্বাক্ষর সংগ্রহ করে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন।
আইনজীবীদের অভিযোগ, একজন সরকারি কৌঁসুলি হয়ে নেজাম উদ্দীন পুলিশের ওপর হামলা ও আইনজীবী সাইফুল ইসলাম হত্যার সঙ্গে জড়িত আসামিদের পক্ষে আদালতে ওকালতনামা দিয়েছেন। সরকারী কৌঁসুলী হয়ে তিনি সেটি করতে পারেন না।
রাষ্ট্রদ্রোহের একটি মামলায় হিন্দু ধর্মীয় নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে গত ২৬ নভেম্বর আদালত কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিলে আদালতে বিক্ষোভ শুরু করে তার সমর্থকরা। তখন পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষের মধ্যে ধারাল অস্ত্রের আঘাত হত্যা করা হয় সাইফুলকে।
হত্যাকাণ্ডের পর চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতি সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সেই ঘটনায় জড়িত আসামিদের পক্ষে চট্টগ্রাম বারের কোনও আইনজীবী দাঁড়াবেন না। বিক্ষোভকারী আইনজীবীরা বলছেন, সেই সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছেন নেজাম উদ্দিন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি নাজিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, আইনজীবী হত্যা ও পুলিশের ওপর হামলার মামলায় চট্টগ্রাম বারের কোনও আইনজীবীকে না দাঁড়ানোর অনুরোধ করা হয়েছিল। তারপরও এক আইনজীবী দুই আসামির পক্ষে ওকালতনামা দেওয়ায় আইনজীবীরা বিক্ষোভ করেন। পরে ওই আইনজীবী তার ওকালতনামা প্রত্যাহার করে এপিপির পদ থেকে পদত্যাগ করেন।
আদালত প্রাঙ্গণে এমন ঘটনাকে ‘ষড়যন্ত্র’ হিসেবেই দেখছেন আইনজীবী নেজাম উদ্দীন। সকাল সন্ধ্যাকে তিনি বলেন, “আমি জানতাম না আমার এক জুনিয়র সহকর্মী সেই ওকালতনামায় স্বাক্ষর নিয়েছে। পরে আমি বুঝতে পারি। এজন্য তাকে অনেক বকাঝকা করেছি। আর যে দুজনের পক্ষে ওকালতনামায় স্বাক্ষর দেওয়া হয়েছে তারা মুসলিম। তারা সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত ভাইয়ের কর্মী।”
আইনজীবীদের বিক্ষোভের মুখে একটি সাদা কাগজে পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করেছেন নেজাম উদ্দিন। আইনগতভাবে তা বৈধ কিনা এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
সরকারি কৌঁসুলি ও নেজাম উদ্দীনের সিনিয়র মফিজুল হক ভূঁইয়া বলেন, “আমার কার্যালয়ে এসে বিক্ষোভ করে তারা এপিপির পদত্যাগপত্রে সই নিয়েছেন। কেন নিয়েছেন, কিভাবে নিয়েছেন তারাই ভালো বলতে পারবে।”
এসময় তার পদত্যাগের দাবি বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, “যে কেউ পদত্যাগ চাইতেই পারে, তাতে আমার কিছু করার নেই।”