চট্টগ্রামে এস আলম গ্রুপের চিনি পরিশোধন কারখানার একটি গুদামে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, সোমবার বিকাল ৪টায় লাগা আগুন তাদের ১২টি ইউনিটের চেষ্টায় রাত ৯টার দিকে নিয়ন্ত্রণে আসে। এতে হতাহতের কোনও খবর পাওয়া যায়নি।
এস আলম গ্রুপের কর্মকর্তারা বলছেন, আগুনে এক লাখ টন অপরিশোধিত চিনি নষ্ট হয়েছে। এই ঘটনার কারণে তাদের চিনি পরিশোধন কারখানা সচল হতে এক সপ্তাহ লাগবে।
আগুনের পেছনে নাশকতা, অসকর্তা ছিল কিনা- তাৎক্ষণিকভাবে তা জানাতে পারেনি ফায়ার সার্ভিস ও এস আলম কর্তৃপক্ষ কেউই।
রমজান সামনে রেখে এই অপরিশোধিত চিনি আমদানি করে শহরের বাইরে কর্ণফুলী সেতুর দক্ষিণপাড়ে এস আলম সুগার রিফাইনারিতে আনা হয়। কারখানাটি কর্ণফুলী উপজেলায় মইজ্জারটেকে অবস্থিত। কারখানার পাশে থাকা চারটি গুদামে চার লাখ টন অপরিশোধিত চিনি রাখার সক্ষমতা আছে। সেখানে এক নম্বর ইউনিটে আগুন লাগে। কারখানায় পরিশোধন শেষে এসব চিনি রমজানের বাজারে সরবরাহের কথা ছিল।
এস. আলমের চিনি কারখানা থেকে সরবরাহ দেয় নাবিল গ্রুপ। এস আলমের চিনির বড় ক্রেতা খাতুনগঞ্জ। সরবরাহকৃত চিনি চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের আড়তদার, ডিও ব্যবসায়ীর মাধ্যমে বাজারে পৌঁছে। ফলে হাতবদলের মাধ্যেমই দাম বাড়ে।
রমজানের আগে হঠাৎ এমন আগুনের খবরের প্রভাব পড়েছে তিন কিলোমিটার দূরে ভোগপণ্যের সবচেয়ে বড় পাইকারি আড়ত চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে চিনির বাজারে।
চিনি আড়তদার, ডিও ব্যবসায়ী সবারই চোখ ছিল আগুন কখন নিভছে, ক্ষয়ক্ষতি কেমন হচ্ছে তার ওপর। সকালের তুলনায় সন্ধ্যায় পাইকারি বাজারেই চিনির দাম কেজিতে এক টাকা বেড়েছে।
এক ডিও ব্যবসায়ী সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “আড়তে যাদের কাছে রেডি চিনি ছিল তারা সকালে বিক্রি করেছে মণপ্রতি ৪৯৩০ টাকায়। আগুন লাগার খবরে যে দুই বস্তা কিনতো সে এক সাথে পাঁচ বস্তা কেনা শুরু করেছে।
“হুট করেই চাহিদা বাড়ায় আড়তে থাকা চিনি ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। ফলে সেই চিনি ৪৯৭০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। মনে দাম বেড়েছে ৪০ টাকা, কেজিতে ১ টাকা। মূলত আগুনের কারণে কারখানা থেকে চিনি সরবরাহ হবে না- এই শঙ্কায় বাজারে দাম বেড়েছে।”
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে নাবিল গ্রুপের কাউকে পাওয়া যায়নি। খাতুনগঞ্জের চিনির পাইকারি ব্যবসায়ী আর এম এন্টারপ্রাইজের মালিক আলমগীর পারভেজকে ফোন দিলেও তিনি সাড়া দেননি।
চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সহকারী পরিচালক আব্দুল মালেক জানান, রাত ৯টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে। পুরোপুরি নেভাতে সময় লাগবে। আগুনে কেউ হাতহত হয়নি।
এস আলম সুগার রিফাইনারির কর্মকর্তা মোহাম্মদ হোসাইন রানা সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “আমাদের চারটি গুদামের মধ্যে একটিতে আগুন লেগেছে। যেখানে এক লাখ টন অপরিশোধিত চিনি ছিল। যেগুলো রমজান ঘিরে বাজারে সরবরাহ করা হতো। সবই পুড়েছে। বাকি তিনটি গুদাম অক্ষত আছে।”
কারখানায় রক্ষণাবেক্ষণ কাজের পর কেন এতবড় দুর্ঘটনা- জানতে চাইলে মোহাম্মদ হোসাইন রানা বলেন, “গতমাসে কারখানা তো ২৫ দিন বন্ধ রেখে আমরা রক্ষণাবেক্ষণ শেষ করে চালু করেছি। ফলে কারখানায় কোনও সমস্যা নেই। আগুন লেগেছে গুদামে। আগুন কোত্থেকে লেগেছে এখনই বলা যাবে না। তবে বিদ্যুতের শর্ট সার্কিট বা অসতকর্তার কারণে ঘটতে পারে। তদন্তের পরই সেটি বলা যাবে। আর আগুন লাগার পর কারখানা চালু হতে আমাদের এক সপ্তাহ সময় লাগবে।”
কর্ণফুলী উপজেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার (ভূমি) পিযুষ কুমার চৌধুরী বলেন, ‘যে গুদামে আগুন লেগেছে, সেখানে কী পরিমাণ পরিশোধিত কিংবা অপরিশোধিত চিনি ছিল, সেটার চূড়ান্ত হিসাব আমরা এখনও করতে পারিনি।
“কারখানা কর্তৃপক্ষ আমাদের জানিয়েছে, সেখানে প্রায় এক লাখ মেট্রিক টন চিনি ছিল। আগুন পুরোপুরি নেভানোর পর খতিয়ে দেখে এ বিষয়ে চূড়ান্ত তথ্য আমরা দিতে পারব।”