চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে বিদেশের অভিমুখে রওনা হওয়া কন্টেইনারভর্তি পণ্য স্ক্যান করার দায়িত্ব চট্টগ্রাম কাস্টমসের। এসব স্ক্যান মেশিন কেনার দায়িত্বও প্রতিষ্ঠানটির। বর্তমানে বন্দরে ছয়টি স্ক্যান মেশিন পরিচালনা করছে সরকারি এই প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু বেশ কয়েকটি গেইটে নেই কোনও স্ক্যানার। ফলে স্ক্যান ছাড়াই ঝুঁকি নিয়ে বিদেশে যাচ্ছিল রপ্তানি পণ্য।
গত পাঁচ বছর ধরে কাস্টমস বারবার স্ক্যান মেশিন কিনবে বললেও তা কিনতে পারেনি। এদিকে রপ্তানি পণ্য বাধ্যতামূলক স্ক্যান করার তাগাদা দিচ্ছিল ইউএস কোস্টগার্ড। এ অবস্থায় বাধ্য হয়ে নিজেরাই দুটি স্ক্যান মেশিন কিনে কাস্টমসকে পরিচালনা করতে দিয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ।
আগামীকাল শনিবার মেশিন দুটি আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করবে বন্দর কর্তৃপক্ষ। অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।
চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব ওমর ফারুক সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “বন্দর তহবিল থেকে ৯০ কোটি টাকায় দুটি স্ক্যানার দরপত্রের মাধ্যমে চীন থেকে কেনা হয়েছে। সেপ্টেম্বরে সেগুলো বন্দরে এসেছে; স্থাপন শেষে শনিবার এগুলো কাস্টমসকে পরিচালনার জন্য দেওয়া হবে।”
রপ্তানি কন্টেইনারের আড়ালে বিস্ফোরক, তেজস্ক্রিয় কিংবা আমদানি নিষিদ্ধ পণ্য যাচ্ছে কিনা সেটি নিশ্চিত করতে কন্টেইনার স্ক্যানার স্থাপন বাধ্যতামূলক করার পরামর্শ দিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল শিপ অ্যান্ড পোর্ট ফ্যাসিলিটি সিকিউরিটি (আইএসপিএস কোড)। তিনি বলেন, “সেই কাজটি করার কথা কাস্টমসের। অনেকদিন ধরেই কাস্টমসকে আমরা তাগাদা দিচ্ছিলাম। কিন্তু সুফল মেলেনি। এই আইএসপিএস কোডের চাপ কিন্তু বন্দরকেই সামলাতে হয়েছে। ফলে বাধ্য হয়েই স্ক্যানার কিনেছি। এতে করে নিরাপত্তার দিক থেকে আমরা এগিয়ে থাকব।”
২০২২ সালের নভেম্বরে ৩২৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ছয়টি স্ক্যান মেশিন বসানোর জন্য রাজস্ব বোর্ডকে অনুমোদন দেয় সরকারের জাতীয় নির্বাহী কমিটি একনেক। তারপর দরপত্র ডেকে সরবরাহকারী চুড়ান্ত করলেও এখন পর্যন্ত সেই স্ক্যানার আসেনি। ছয়টি স্ক্যানারের মধ্যে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে চারটি, বেনাপোল কাস্টম হাউসে একটি ও সাতক্ষীরার ভোমরা কাস্টম হাউসে একটি স্ক্যানার বসানোর কথা ছিল।
এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে চট্টগ্রাম কাস্টমস কমিশনার ফাইজুর রহমানকে চেষ্টা করেও ফোনে পাওয়া যায়নি। পরে কাস্টমসের এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, “চীনের নুকটেক কোম্পানির দরপত্র চূড়ান্ত করা হয়। কিন্তু এরপর বিভিন্ন অভিযোগ আসায় সেগুলো নিষ্পত্তি করতে বেশি সময় লেগেছে। এখন অবশ্য জটিলতা কেটেছে। আশা করছি দ্রুতই স্ক্যানারগুলো চলে আসবে এবং যথাযথ জায়গায় বসানো যাবে।”
জানা গেছে, চট্টগ্রাম বন্দরে সব আমদানি কন্টেইনার জাহাজ থেকে নামিয়ে স্ক্যান করেই বন্দর থেকে ছাড়া হচ্ছে। কিন্তু রপ্তানি কন্টেইনার স্ক্যান মেশিন না থাকায় সবগুলো কন্টেইনার স্ক্যান করা যাচ্ছে না। ইউএস কোস্টগার্ডের নেতৃত্বে একটি টিম অনেকবার চট্টগ্রাম বন্দর পরিদর্শন করে রপ্তানি পণ্য স্ক্যান করে জাহাজীকরণের তাগাদা দেয়। নানা সীমাবদ্ধতা থাকায় বন্দর কর্তৃপক্ষ তা এড়িয়ে যায়।
চট্টগ্রাম বন্দরের ১২টি গেইটে এখন মোট কন্টেইনার স্ক্যানার আছে ৭টি। এরমধ্যে দুটি ভ্রাম্যমাণ কন্টেইনার স্ক্যানার; বাকি ৫টি স্থায়ী কন্টেইনার স্ক্যানার। আর ৪ থেকে ৫টি স্ক্যান মেশিন নিলেই হলেই আমদানি-রপ্তানির সব পণ্য নিরবচ্ছিন্নভাবে স্ক্যান করা সম্ভব।
চট্টগ্রাম বন্দরে সিসিটি-২, জিসিবি এবং সিপিএআর এই তিনটি গেইট দিয়ে রপ্তানি পণ্য বন্দরের ভেতর প্রবেশ করে। নতুন দুটি মেশিন বসানো হচ্ছে বন্দরের ৪ নম্বর গেইট ও সিপিএআর গেইটে। এর ফলে বন্দরে মোট স্ক্যানারের সংখ্যা হবে ৯টি।
বন্দর ব্যবহারকারীদের অনেকের অভিযোগ, “স্ক্যান মেশিন দিয়ে চোরাচালান, অবৈধ এবং নিষিদ্ধ পণ্য শনাক্ত করার সুযোগ থাকলেও মেশিন যারা পরিচালনা করে তাদের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন আছে। তাদের যোগসাজশেই স্ক্যান না করেই বা ঝাপসা স্ক্যান করে বন্দর থেকে অহরহ পণ্য পাচারের ঘটনা ঘটছে। ফলে মনোযোগ দিতে হবে সেদিকে।”
কন্টেইনার স্ক্যান মেশিন সরবরাহকারী চীনের ‘নুকটেক টেকনোলজির’ কর্মকর্তা এপেলো বড়ুয়া সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “স্ক্যান মেশিন দুটি দিয়ে কনটেইনার না খুলেই ভেতরের রঙিন ছবি তোলা যাবে। স্ক্যানারগুলো ঘণ্টায় দেড়শ বক্স স্ক্যান করতে সক্ষম। মেশিন আমরা অপারেট করব আর রিপোর্ট দেখে পরীক্ষা করে করে সিদ্ধান্ত জানাবে কাস্টমস।”