ছাত্রলীগের রাজনীতিতে জড়িত থাকার সুযোগ নিয়ে শিক্ষক হওয়ার অভিযোগ নিয়ে আসা শিক্ষার্থীদের চাপের মুখে পদত্যাগ করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রন্টু দাশ।
বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের চেয়ারম্যানের কক্ষে এ ঘটনা ঘটে। এসময় রন্টু দাশের পেছনে দাঁড়ানো ছিলেন তার পদত্যাগের দাবিতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে আন্দোলনরত কয়েকজন শিক্ষার্থী। তার হাতে লেখা সেই পদত্যাগপত্র পরে বিভাগের চেয়ারম্যানের কাছে হস্তান্তর করেন শিক্ষার্থীরা।
এসব শিক্ষার্থীর অভিযোগ, রন্টু দাশ ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। শিক্ষাগত যোগ্যতা শিথিল করেই তাকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর জানিয়েছেন, নিয়ম অনুযায়ী চাপের মুখে জোর করে বা অনিচ্ছাকৃত পদত্যাগ গ্রহণ হয় না। শিক্ষার্থীদের সঠিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ব্যবস্থা নিতে বলেছেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, প্রতিদিনের মতো বুধবার সকালে নিজ বিভাগে আসেন সহকারী অধ্যাপক রন্টু দাশ। খবর পেয়ে ‘সাধারণ শিক্ষার্থীরা’ ইতিহাস বিভাগের চেয়ারম্যানের রুমের সামনে অবস্থান নেন। একপর্যায়ে তারা রন্টু দাশকে ঘিরে রেখে চেয়ারম্যানের কক্ষে নিয়ে যান। সেখানে সবার সামনে প্যাডে পদত্যাগের কথা লিখে স্বাক্ষর দেন। এসময় তাকে বেশ বিমর্ষ দেখাচ্ছিল।
পদত্যাগপত্রে রন্টু দাশ কোনও কারণ উল্লেখ করেননি। উপাচার্য বরাবর এই পদত্যাগপত্রে তিনি লিখেছেন, “আমি নিম্নস্বাক্ষরকারী স্বেচ্ছায় ইতিহাস বিভাগের শিক্ষকের পদ থেকে পদত্যাগ করছি। এ বিষয়ে আপনাকে অবগত করছি।”
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান প্রক্টর তানভীর মোহাম্মদ হায়দার আরিফ। তিনি বলেন, “সাধারণ শিক্ষার্থীরা ইতিহাস বিভাগের এক শিক্ষকের পদত্যাগের দাবি তুলেছে খবর পেয়ে দুজন সহকারী প্রক্টরকে সেখানে পাঠাই। শিক্ষার্থীরা কয়েকটি পত্রিকায় রিপোর্ট দেখিয়ে জানায়, ওই শিক্ষক হত্যা মামলার আসামি। পুলিশের হাতে গ্রেপ্তারও হয়েছিলেন।”
প্রক্টর বলেন, “আমি ভিসি স্যারের কথা শুনে নিজেই দ্রুত চলে এসেছি। এসে দেখলাম শিক্ষক পদত্যাগপত্র লিখেছেন। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী চাপের মুখে জোর করে বা অনিচ্ছাকৃত পদত্যাগ গ্রহণ হয় না। তাই আমি শিক্ষার্থীদের সঠিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছি।”
ইতিহাস বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক শামীমা হায়দার বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় আইন ও প্রচলিত আইন অনুসরণ করে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আমি শিক্ষার্থীদের কাছে অনুরোধ জানিয়েছি।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার ড. মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, “আমি তার পদত্যাগের বিষয়টি শুনেছি। তবে এখন পর্যন্ত কোনও কাগজ আমার হাতে আসেনি। পদত্যাগপত্র গৃহীত হয়েছে কিনা- নিশ্চিত হওয়া যায়নি।”
এসব শিক্ষার্থীর অভিযোগ, ২০১২ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের সঙ্গে সংঘর্ষে দুই শিবির নেতা নিহত হয়েছিলেন। তারা হলেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র মো. মুজাহিদুল ইসলাম মুজাহিদ ও ইংরেজি চতুর্থ বর্ষের ছাত্র মাসুদ বিন হাবিব।
এ ঘটনায় ১২ ফেব্রুয়ারি ৪২ ছাত্রলীগ নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করে আদালতে হত্যা মামলা হয়। আসামি করা হয় অজ্ঞাতপরিচয় ৩৫-৪০ জনকে। সেখানে রন্টু দাশের নাম ছিল। তখন তিনি চবি ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি।
শিক্ষার্থীরা আরও অভিযোগ করেছেন, রন্টু দাশ শাখা ছাত্রলীগের রাজনীতিতে জড়িত থাকায় যোগ্যতা শিথিল করে চবিতে শিক্ষক হয়েছিলেন। শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি অনুসারে গ্রেডিং পদ্ধতিতে উত্তীর্ণ প্রার্থীদের এসএসসি বা সমমান ও এইচএসসি বা সমমান পরীক্ষার উভয়টিতে ন্যূনতম জিপিএ-৩.০ পয়েন্ট এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে পৃথকভাবে ৩.৫ থাকতে হবে। কিন্তু এইচএসসিতে ২.৯ পেয়েও চবিতে শিক্ষক হয়েছিলেন রন্টু দাশ।
শিক্ষার্থীদের এসব অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করা যায়নি।
পদত্যাগপত্র দেওয়ার কারণ জানতে শিক্ষক রন্টু দাশের মোবাইল ফোন নম্বরে বেশ কয়েকবার যোগাযোগের চেষ্টা করে বন্ধ পাওয়া গেছে।
শিক্ষক সমিতির এক জ্যেষ্ঠ সদস্য সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “সাদা কাগজে যদি স্বাক্ষর দিয়ে পদত্যাগ করানো যেতে তাহলে এত আইন কানুনের কোনও দরকার ছিল না। কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকতেই পারে, সেটি প্রমাণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ফোরাম আছে, যেটি আইনসিদ্ধ। সেটি না করে এখন যেই কাজটি করা হচ্ছে সেটি সম্পূর্ণ মব জাস্টিস। এসব জোর করে পদত্যাগের বিরুদ্ধে মামলা হলে কোনওটাই আদালতে টিকবে না।”