ব্রিফকেস হাতে হেঁটে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী, তার সঙ্গে হাসিমুখে হাঁটছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
অর্থমন্ত্রীর হাতে ছিল মেরুন রঙের ব্রিফকেস, তিনি টাইও পরেছিলেন লালচে গোলাপি রঙের। প্রধানমন্ত্রীর পরনে ছিল রানি গোলাপি পাড়ের শাড়ি। সংসদ অধিবেশন কক্ষে প্রবেশের ঠিক আগ মুহূর্তে ক্যামেরায় এভাবেই ধরা পড়েন তারা।
বিশেষ দিনে কে কেমন পোশাক পরলেন তা নিয়ে আগ্রহের কমতি থাকে না মানুষের। সেই আগ্রহ থেকে বাদ যায় না প্রধানমন্ত্রীর শাড়িও। বাজেটের মতো বিশেষ দিনে তার সাজ-সজ্জা কেমন ছিল তা নিয়ে আগ্রহ ছিল অনেকের। যে শাড়ি পরে তিনি বাজেট অধিবেশনে অংশ নিয়েছেন সেটি নিয়ে দিনভর আলোচনা করেছে নেটিজেনদের একটি অংশ।
বাজেটের দিনে আলোকচিত্রীদের লেন্সে বারবার উজ্জ্বল হয়ে ধরা দিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর হালকা বালু রঙের জমিনে রানি গোলাপি পাড়ের শাড়ি। পাড়ের সঙ্গে মিলিয়ে ফুলহাতা ব্লাউজ পরেছিলেন তিনি। চোখে ছিল নিত্যদিনের চশমা। গলায় ছিল মুক্তার মালা, কানেও মুক্তার টপ। কাঁধে শাড়ির আঁচলে আটকে ছিল নৌকা প্রতিকৃতির ব্রোচ আর এক হাতে ছিল মোটা বালা।
ঠোঁটের লিপস্টিক মানিয়ে যাচ্ছিল শাড়ির পাড়ের সঙ্গে। মাথায় টেনে দেওয়া আঁচলের ভেতর দিয়ে অনেকখানি ধূসর হয়ে আসা চুল একটু বাড়তি দ্যুতিই ছড়াচ্ছিল চেহারায়।
প্রধানমন্ত্রীর শাড়ি নিয়ে যখন চলছে আলোচনা তখন সকাল সন্ধ্যা কথা বলেছে সাভেরী’স ক্লদিং লাইনের স্বত্ত্বাধিকারী কাকলী তানভীরের সঙ্গে।
প্রধানমন্ত্রীর শাড়ি পরার ধরন খুঁটিয়ে দেখে বেশ প্রশংসা করলেন তিনি। বললেন, “শাড়িটি খুব মিহি সুতার বোনা এবং প্রধানমন্ত্রী চমৎকার করে পরেছেন।”
‘আনন্দময় পরিবেশ’ প্রকাশেই প্রধানমন্ত্রী রানি গোলাপি পাড়ের শাড়ি বেছে নিয়েছেন, এমনটা ধারণা উদ্যোক্তা কাকলী তানভীরের।
“পরার ধরন, রঙের নির্বাচন, আজকের আবহাওয়া কিংবা আজকের বিশেষ দিনে ঔজ্জ্বল্য যোগ করেছে প্রধানমন্ত্রীর শাড়ি। রানি গোলাপি উৎসবের একটা রঙ বলা যেতে পারে। আনন্দময় পরিবেশ প্রকাশে যেন এই শাড়িটা প্রধানমন্ত্রী বেছে নিয়েছেন।”
এমনিক অর্থমন্ত্রীর আজকের স্যুটের সঙ্গে পরা টাইয়ের রঙও প্রায় মিলে যাচ্ছিল প্রধানমন্ত্রীর শাড়ির পাড় আর আঁচলের সঙ্গে।
প্রধানমন্ত্রীর ছবি প্রকাশের পর থেকেই তার শাড়ির ধরন নিয়ে শুরু হয় আলোচনা। কেউ বলেন এটি বোধহয় তাঁতের শাড়ি, কেউ বলছেন গাদোয়াল। আবার কারও ধারণা এটি পিওর সিল্ক শাড়ি।
অবশ্য কেবল ছবি দেখে শাড়ির ধরন সম্পর্কে কোনও সিদ্ধান্ত দেওয়া কঠিন। কেননা সুতোর বুনন, বুননের ধরন, কোথায় বোনা হচ্ছে শাড়ি কিংবা কোন নকশা তোলা হচ্ছে তার ওপর নির্ভর করে শাড়ির নাম, ধরন।
প্রধানমন্ত্রীর শাড়িটি কোন ধরনের তা জানতে সকাল সন্ধ্যা চেষ্টা চালায় নানা সূত্রে। নির্ভরযোগ্য একটি সূত্রে জানা যায়, বাজেট অধিবেশনে ‘জুট কটন’ জমিনের শাড়ি পরেছিলেন শেখ হাসিনা।
অবশ্য প্রকাশিত ছবি দেখে অন্য অনেকের মতো কাকলী তানভীরেরও মনে হয়েছে, এটি গাদোয়াল জমিনে বোনা।
তিনি বলেন, “আজকে প্রধানমন্ত্রী গাদোয়াল শাড়ি পরেছেন বলে আমার মনে হয়েছে; তবে আমার ধারণার এদিক-ওদিক হতে পারে। যেহেতু ছবি দেখে বলছি। সাধারণত ১০০ কাউন্ট বা মিহি সুতার বুননে গাদোয়াল শাড়ি করা হয়।”
পাড়ের বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি বললেন, “পাড়ে আছে স্যাটিন কাপড়; যা চকচকে ও মসৃণ দেখায়। পাড়টা কমলা রঙের আর রানি গোলাপীর হালকা ও গাঢ় এমন দুটো শেইডের। হালকা বেগুনি রঙের চিকন বর্ডার আছে। ওই অংশে কারভাটি কিনার মানে করাতের দাঁতের মতো ছোট ছোট নকশা করা আছে। এটা বিশেষ ধরনের বয়ন। আর পাড়ের নিচেও একটা বেগুনি বর্ডার আছে।”
প্রধানমন্ত্রীর বাজেট দিনের শাড়ি বিশ্লেষণ এখানেই শেষ নয়; আঁচল দেখা বাকি আছে এখনও।
আঁচল নিয়ে কাকলী তানভীর বললেন, “শাড়ির আঁচলটা ব্রোকেড। প্রিমিয়াম কটন ছাড়া এই ব্রোকেড আঁচল বসানো যায় না। আঁচলের পরে সুতো টানা আছে ঝুল ঝুল করে।”
তবে শাড়ির রঙ নিয়ে এই প্রতিবেদকের সঙ্গে একমত হতে চাননা কাকলী তানভীর।
“শাড়ির মূল জমিনের রঙটা অফ হোয়াইট কিংবা ঘিয়া নয়। এটা হালকা বাদামি। আমরা যেটা ইংরেজিতে বেইজ কালার বলি, বি-ই-আই-জি-ই, এটা সেই রঙটা।”
২০১৪ সালের বাজেট অধিবেশনে পেস্ট কালারের মোটা পাড় এবং অফ হোয়াইট জমিনের গরদ শাড়িতে দেখা গিয়েছিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে; হাতে ছিল সোনার ছয়টি চিকন চুড়ি।