টি-টোয়েন্টিতে চার বলে চারটি উইকেট নেয়া চার ক্রিকেটারের একজন কার্টিস ক্যাম্ফার। বিশেষ রেকর্ড গড়া এই আইরিশ ক্রিকেটারের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কটা দারুণ। তার টেস্ট ক্যারিয়ার শুরু এদেশে। একমাত্র ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট হিসেবে দ্বিতীয়বার খেলতে এসেছেন বিপিএলে। সকাল সন্ধ্যাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ২৪ বছর বয়সী এই অলরাউন্ডার জানালেন তার ক্যারিয়ারের অনেক কিছুই।
প্রশ্ন : টানা দ্বিতীয়বার চট্টগ্রামের হয়ে খেলছেন। দলটি আপনার প্রতি ভরসা রেখেছে। এই ব্যাপারটা কেমন লাগছে?
ক্যাম্ফার : অবশ্যই এটা আমার জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ যে চট্টগ্রাম ফ্র্যাঞ্চাইজি আমার ওপর ভরসা রেখেছে। গতবার আমি খুব ভালো করতে পারিনি। এবার তাদের প্রতিদান দিতে চাই। ভালো ব্যাপার হলো আমি ওদের একটা ম্যাচে জয় এনে দিয়েছি। সামনে আরও ম্যাচ জয়ী পারফরম করতে চাই। আর অবশ্যই গতবারের চেয়ে এবার চট্টগ্রাম দল হিসেবে ভাল। দারুণ কিছু বিদেশী ক্রিকেটার এসেছেন, এবার খেলা নতুন তরুণ যেমন তামিম (তানজিদ)-দিপুদের (শাহাদাত হোসেন) দেখলাম খুবই ভাল।
প্রশ্ন : আয়ারল্যান্ডের সঙ্গে বাংলাদেশের কন্ডিশনে তো বেশ পার্থক্য। তবে আপনি এখানে সবসময় ভালো করেন। এর রহস্যটা কি?
ক্যাম্ফার : অবশ্যই আইরিশ কন্ডিশনের সঙ্গে এখানে অনেক পার্থক্য। কিন্তু এখানে আমি কয়েকবার খেলেছি। জাতীয় দলের হয়েও লম্বা সফর করেছি তাই বাংলাদেশ আমার কাছে এখন অনেকটাই পরিচিত। তবু আমি যখন বাংলাদেশে এসেছিলাম, এখানকার কন্ডিশন নিয়ে প্রতিবার কিছু না কিছু নোট করেছি, যেন তা দেখে পরে অভিজ্ঞতা নিতে পারি। বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে ভালো করতে এই নোট আমাকে সাহায্য করেছে। তো আগের সেই নোটগুলোতে টুকে নেয়া অভিজ্ঞতা আমাকে বাংলাদেশের কন্ডিশনে ভালো করা সহজ করেছে।
প্রশ্ন : দক্ষিণ আফ্রিকার যুব দলের হয়ে খেলেছেন। সেখান থেকে আইরিশ জাতীয় দল। কিভাবে সম্ভব হলো?
ক্যাম্ফার : আমার জন্ম দক্ষিণ আফ্রিকায় কিন্তু আমার পরিবারের অনেকেই আয়ারল্যান্ডে থাকত। সেই সূত্রে আমার আইরিশ পাসপোর্ট ছোট বেলা থেকেই ছিল। দক্ষিণ আফ্রিকার অফ সিজনে আমি আয়ারল্যান্ড ও ইংল্যান্ডের ক্লাবগুলোতে খেলেছি। সেই সূত্রে আয়ারল্যান্ড উলভস (আয়ারল্যান্ড এ দল) দলে সুযোগ পাই। সেখানে খেলার পর আমি বুঝলাম আয়ারল্যান্ডে আমার ভালো ভবিষ্যত হতে পারে। তখন ওই সময়ের আয়ারল্যান্ড কোচ গ্রাহাম ফোর্ডের সাথে কথা বলি আমার ক্যারিয়ার নিয়ে। সেও দক্ষিণ আফ্রিকান, সে আমাকে পরামর্শ দেয় যেন আমি দক্ষিণ আফ্রিকায় পড়াশোনা শেষ করে ইংলিশ কন্ডিশনে ক্লাব ক্রিকেট খেলা শুরু করি। তার কথা মতো আমি আগাই এবং পরে আয়ারল্যান্ডে সুযোগ পাই। এই তো।
প্রশ্ন : বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে হ্যাটট্রিক, চার বলে চার উইকেট, এটাই কি আপনার আজীবন মনে রাখার মতো অর্জন?
ক্যাম্ফার : অবশ্যই, আমার তো এটাই মনে হয়। যখন এই রকম পারফরমগুলো দলের জন্য করতে পারি সবই স্মরনীয়। এর সঙ্গে যোগ করবো বাংলাদেশে আমার প্রথম টেস্টটিকে। সব ক্রিকেটারের স্বপ্ন থাকে টেস্ট খেলা। এই ম্যাচগুলোর দিকে যখন তাকাই তখন ক্রিকেটার হিসেবে গর্ব হয়। তবে দল হিসেবে যদি বলি তাহলে ক্যারিয়ারে একটা ম্যাচ কখনোই ভুলবো না। গত বিশ্বকাপে (২০২২ টি-টোয়েন্টি) এমসিজিতে ইংল্যান্ডকে হারানো। আমার বিশ্বাস এটা আমাদের দলের কেউই ভুলবে না।
প্রশ্ন : টি-টোয়েন্টিতে চার বলে চার উইকেটের রেকর্ডটি আপনার কাছে কতটা আলাদা?
ক্যাম্ফার : কিছু সময় আসে যে যখন যা করতে চাই তাই হয়ে যায়। আমি কখনই ভাবিনি যে বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে টানা চারটি উইকেট পেয়ে যাব। আমি জানতাম না যে টি-টোয়েন্টিতে টানা চার উইকেট নিয়েছিলেন কারা, পরে দেখেছি তালিকাটা খুব ছোট। লাসিথ মালিঙ্গার মতো বোলারের পাশে নাম দেখা সত্যিই দারুণ। সেখানে রশিদ খানও ছিলেন। হ্যাঁ, এই অর্জন সত্যিই বিশেষ।
প্রশ্ন : টানা দুটো ওয়ানডে বিশ্বকাপ আয়ারল্যান্ড খেলতে পারেনি। এটা দলের হয়ে আপনার জন্য কতটা পীড়াদায়ক?
ক্যাম্ফার : অবশ্যই এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত পীড়াদায়ক। কিন্তু আপনি এটাও ভুলে যাননি যে উইন্ডিজ এবারের বিশ্বকাপে খেলতে পারেনি। আসলে আইসিসির কঠিন কোয়ালিফাইং পর্ব এটার কারণ হতে পারে। একদিক থেকে এর ভালো দিকও আছে। যেমন গত বিশ্বকাপে দেখুন আফগানিস্তান শেষ গ্রুপ ম্যাচ পর্যন্ত শেষ চারে যাওয়ার লড়াইয়ে ছিল। এর মানে এখন ওয়ানডে ক্রিকেটের মান অনেক উঁচুতে, তাই সব দল ভালো খেলেও অনেক কিছু বিসর্জন দিচ্ছে।
প্রশ্ন : ২০২৭ বিশ্বকাপে খেলা নিয়ে আয়ারল্যান্ড কতটুকু অশাবাদি।
ক্যাম্ফার : আমার বিশ্বাস ২০২৭ বিশ্বকাপে আমরা ফিরতে পারব। এখন আমাদের যে দলটা আছে তারা তরুণ কিন্তু তৈরি হচ্ছে বড় মঞ্চের জন্য। আমাদের দলটা এখন দেখুন, হ্যারি টেকটর, মার্ক অ্যাডেইর, জস লিটল, লরকান টাকার এবং আমি। আমরা সবাই একই বয়সের। সঙ্গে অভিজ্ঞরা মিলে দারুণ একটা গ্রুপ হয়েছে। আমাদের বড় মঞ্চে খেলার অভিজ্ঞতাও হচ্ছে। যেমন জস লিটল আইপিএলে খেলছে। এসব আমাদের এগিয়ে যেতে সাহায্য করছে। এই গ্রুপটা সত্যিই আত্মবিশ্বাসী যে আমরা সামনের বিশ্বকাপে খেলতে পারব।
প্রশ্ন : ২০০৭ থেকে ২০১১ বিশ্বকাপ পর্যন্ত আয়ারল্যান্ড ক্রিকেটের উঠতি শক্তি ছিল। এখন সেই জায়গায়টা কি আফগানিস্তানের দখলে?
ক্যাম্ফার : আমি এটা মনে করি না। আসলে ওদের কালচারটা ভিন্ন, আমাদেরটা ভিন্ন। উপমহাদেশের দল হিসেবে ওদের ক্রিকেটীয় আগ্রহটা বেশি। তাই ওদের তরুণ প্রতিভাও বেশি। ওদের যারা উঠে আসছে তারা খুব ন্যাচারাল প্রতিভা। পাশাপাশি ওদের বেশ কয়েকজন, হতে পারে ৫-৬ জন আইপিএলের মতো মঞ্চে বা বিশ্বের সব ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে খেলছে। এটা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ওদের এগিয়ে দিচ্ছে। ওদের সঙ্গে তুলনায় বলব, আমরা পিছিয়ে পড়িনি। আমরা এগিয়ে যাচ্ছি কিন্তু আফগানিস্তানের চেয়ে ধীরে, এটুকুই।