সিলেটের হোটেলে খুব শান্ত মেজাজে বসেছিলেন স্যার কার্টলি অ্যামব্রোস। স্মিত হাসিতেই বোঝা যাচ্ছিল তার ফুরফুরে মেজাজ। একদিন আগেই অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে টেস্ট জিতে ইতিহাস গড়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ২৭ বছর পর পাওয়া সেই সাফল্য ছুঁয়ে গেছে এই ক্যারিবিয়ান কিংবদন্তিকে। সকাল সন্ধ্যাকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তার একরাশ ভালোলাগার মুহূর্ত প্রকাশের পাশাপাশি গৌরবের নায়ক শামার জোসেফকে নিয়ে বিশ্লেষণ করেছেন ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ক্রিকেটের সোনালী সময়ের এই তারকা ফাস্ট বোলার।
প্রশ্ন : অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে উইন্ডিজের এই জয়টাকে আপনি কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন ?
অ্যামব্রোস : অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে যে কোন সময় যে কোন ফরম্যাটে জেতা আমার কাছে বিশেষ কিছু। যেহেতু আমিও সেখানে খেলেছিলাম। আর এই জয়টা অবশ্যই আলাদা। কারণ অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ওদের টেস্টে হারাতে আমাদের এবার লম্বা সময় লেগে গেছে ২৭ বছর। ভাবা যায়! এই সাফল্য আরেকটা কারণে আমার কাছে বিশেষ তা হল, যে দলটা এবার অস্ট্রেলিয়ায় গিয়েছে, অর্ধেক ক্রিকেটার আগে নিয়মিত টেস্টই খেলেনি, ওরা অনভিজ্ঞ, তরুণ এবং এই অবস্থায় টেস্টের এক নম্বর দল অস্ট্রেলিয়াকে ওদের মাটিতে হারিয়েছে। এই জয়ের অনুভূতিটা তৃপ্তিদায়ক। একজন ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান হিসেবে আমি এই দলটার জন্য সত্যি গর্বিত।
প্রশ্ন : সম্ভবত আপনিও দেখেছেন ব্রায়ান লারা, কার্ল হুপাররা এই জয়ে আবেগতাড়িত হয়ে পড়েছেন। আপনার কি একই অবস্থা হয়েছিল?
অ্যামব্রোস : (হাসি) ওদের এই বিষয়টা আমি কাল দেখেছি। না, আমার ওই অবস্থা হয়নি। খুব হালকা লেগেছে। তবে অবশ্যই এটা আবেগাক্রান্ত হওয়ার মুহূর্ত।
প্রশ্ন : শামার জোসেফকে কেমন দেখছেন। অভিষেক সিরিজে এমন বোলিং করছে। তার মাঝে গ্রেট উইন্ডিজ পেসারের ছায়া দেখেন?
অ্যামব্রোস : শামার দুর্দান্ত পারফরম করেছে। অস্ট্রেলিয়ায় অভিষেক টেস্টে ৫ উইকেট নেয়া, পরের টেস্টেই ৭ উইকেট নেওয়া….আসলে দেখে মনে হচ্ছে সে গ্রেট বোলার হওয়ার শুরুটা পেয়ে গেল। এখন তাকে প্রচুর শিখতে হবে, সে যদি শান্ত থাকে, নিজের কাজের প্রতি মনযোগী থাকে অবশ্যই সে উইন্ডিজ ঐতিহ্য অনুসোরে সেরা পেসারদের একজন হতে পারবে। তবে সত্যি ওকে দেখে ভালো লেগেছে। মনে হয় খুব ইতিবাচক মানসিকতা নিয়ে মাঠে যায়, বোলিং রানআপ শুরু করে এবং দলেও চমৎকার পরিবর্তন আনতে পারে।
প্রশ্ন : শামারের মাঝে নিজেকে দেখেন কিনা?
অ্যামব্রোস : না না, ওর সঙ্গে আমার যথেষ্ট পার্থক্য আছে। প্রথমত, অবশ্যই উচ্চতা, আমি তার চেয়ে বেশ লম্বা। তবে সে এমন একজন পেসার যাকে ম্যালকম মার্শালের সঙ্গে তুলনা করা যায়। শামারের উচ্চতা ওর (ম্যালকম) মতোই উচ্চতা। তার বল মাটিতে পড়ে স্কিড করে, এজন্য ব্যাটাররা খেলার যথেষ্ট সময় পায় না। তাছাড় ও বেশ ফিট, এটা দেখে ভালো লাগে, ওকে এই ফিটনেসটা ধরে রাখতে হবে। আমি ওকে শুভকামনা জানাই।
প্রশ্ন : টেস্টে এই সাফল্যকে কেউ কেউ উইন্ডিজ ক্রিকেটের উত্থান বলছেন…
অ্যামব্রোস : এটা আসলে বলা মুশকিল। মজার ব্যাপার হল, আমরা লম্বা সময় কোন টেস্টই খেলতে পারব না। ডিসেম্বরে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আর জানুয়ারিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলল। কিন্তু এরপর টেস্ট সেই জুলাইতে। এর মানে হলো লম্বা বিরতির পর ক্রিকেটারদের আবার নতুন করে শুরু করতে হবে। এভাবে ধারাবাহিকতা ধরে রাখা কঠিন। ভালো ক্রিকেটের জন্যও সেটা বাধা। আমাদের ঘরোয়া চারদিনের ক্রিকেট আছে কিন্তু আন্তর্জাতিক টেস্ট ছাড়া ক্রিকেটারদের উন্নতি সম্ভব না। তখন দলও নিয়মিত ভালো করতে পারে না। তবে আমি আশাকরি এই জয়টা এই গ্রুপকে যথেষ্ট উজ্জীবিত করবে এবং বিশ্বাস যোগাবে।
প্রশ্ন : একদিনের বিশ্বকাপে উইন্ডিজকে না দেখার নিশ্চয়ই কষ্টের ছিল।
অ্যামব্রোস : অবশ্যই, একজন ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান হিসেবে শুধু আমি না, সব ক্যারিবিয়ানদের জন্য ওয়ানডে বিশ্বকাপে খেলতে না পারাটা দুঃখজনক। উইন্ডিজের প্রথম ও দ্বিতীয় ওয়ানডে বিশ্বকাপ জয়ের গৌরব আছে। সেই দল এখন ওয়ানডে বিশ্বকাপ কোয়ালিফাই করতে পারবে না… এটা ক্যারিবিয়ান ক্রিকেটের জন্য বিরাট ধাক্কা। তবে এখন যে দলটা দেখছি, এই গ্রুপটা দারুণ খেলছে। আমি খুবই ইতিবাচক মানুষ, ওদের ওপর বিশ্বাস রেখে বলতে পারি সামনের ওয়ানডে বিশ্বকাপে অবশ্যই ওয়েস্ট ইন্ডিজ খেলতে পারবে।