দেশে সাইবার অপরাধে প্রতিনিয়ত যুক্ত হচ্ছে নতুন মাত্রা। এই অপরাধের শিকার ভুক্তভোগীদের প্রায় ৮০ শতাংশেরই বয়স ১৮ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। ভুক্তভোগীদের মধ্যে মাত্র ১২ শতাংশ আইনের আশ্রয় নেয়। আর আইনের আশ্রয় নেওয়া ভুক্তভোগীদের মাত্র সাড়ে ১২ শতাংশ শেষ পর্যন্ত সুফল পায়।
শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত ‘বাংলাদেশে সাইবার অপরাধ প্রবণতা ২০২৪ এবং স্মার্ট বাংলাদেশ উদীয়মান প্রযুক্তির চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদনে উঠে আসে এসব তথ্য।
সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশনের (সিক্যাফ) উদ্যোগে অনুষ্ঠিত সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রতিষ্ঠানটির উপদেষ্টা প্রকৌশলী মো. মুশফিকুর রহমান। গবেষণা প্রতিবেদন পেশ করেন সিক্যাফ গবেষণা দলের প্রধান ইনডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশের সামাজিক বিজ্ঞান ও মানবিক বিভাগের জ্যেষ্ঠ প্রভাষক ওবায়দুল্লাহ আল মারজুক।
গবেষণা প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গত এক বছরে দেশে সাইবার অপরাধের পরিমাণ দ্বিগুণের বেশি বেড়ে দেশে মোট সংঘটিত অপরাধের ১১ দশমিক ৮৫ শতাংশে পৌঁছেছে। তবে শিশুদের সাইবার অপরাধের শিকার হওয়ার হার কিছুটা কমে ১৩ দশমিক ৬৫ শতাংশ নেমেছে।
দেশে সংঘটিত সাইবার অপরাধের বেশিরভাগই তরুণ জনগোষ্ঠীকে লক্ষ্য করে হচ্ছে – এমনটাই উঠে এসেছে সিক্যাফ-এর গবেষণায়। তাদের প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, দেশে সাইবার অপরাধের ভুক্তভোগীদের মধ্যে ৭৮ দশমিক ৭৮ শতাংশের বয়স ১৮ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে।
এ ছাড়া ভুক্তভোগীদের অর্ধেকের বেশি বা প্রায় ৫৯ শতাংশ নারী সাইবার অপরাধীদের লক্ষ্যের কেন্দ্রে থাকে বলেও উঠে এসেছে গবেষণায়।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, দেশে সংঘটিত সাইবার অপরাধের শীর্ষে রয়েছে সোশাল মিডিয়া ও অনলাইন অ্যাকাউন্ট হাতিয়ে নেওয়া (হ্যাকিং) সংক্রান্ত, যা মোট সংঘটিত সাইবার অপরাধের ২১ দশমিক ৬৫ শতাংশ।
সিক্যাফ বলছে, গত পাঁচ বছরের মধ্যে ২০২৩ সালে দেশে সাইবারজগতে পর্ণোগ্রাফি সংক্রান্ত অপরাধের প্রবণতা বেড়েছে। ভুক্তভোগীদের ১১ দশমিক ৩৫ শতাংশ শিকার হয়েছে পর্ণোগ্রাফি সংক্রান্ত অপরাধের।
সাইবার অপরাধের শিকার ১৩২ জন ভুক্তভোগীর স্ব-প্রণোদিত হয়ে জানানো অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে এই গবেষণা প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সিক্যাফ।
এই ভুক্তভোগীদের ৪৭ দশমিক ৭২ শতাংশ সামাজিক মর্যাদাহানির শিকার হওয়ার কথা জানিয়েছেন। এ ছাড়া ৪০ দশমিক ১৫ শতাংশ আর্থিক ক্ষতি এবং প্রায় সবাই মানসিক যন্ত্রণার শিকার হওয়ার কথা বলেছেন। এদের মধ্যে মাত্র ১২ শতাংশ ভুক্তভোগী আইনের আশ্রয় নেওয়ার কথা জানিয়েছেন। তাদের মধ্যে ৮১ দশমিক ২৫ শতাংশ সাধারণ ডায়েরি (জিডি) ও ১৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ লিখিত অভিযোগ করেছেন।
আর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে অভিযোগ নিয়ে যাওয়া ভুক্তভোগীদের মধ্যে মাত্র ১২ দশমিক ৫ শতাংশ জানিয়েছেন, অভিযোগ করে সুফল পেয়েছেন তারা।
প্রতিবেদনে আরও উঠে এসেছে, সাইবার অপরাধের শিকার ভুক্তভোগীদের বেশিরভাগই শিক্ষিত। সর্বোচ্চ ৪০ দশমিক ৯০ শতাংশ ভুক্তভোগী উচ্চ মাধ্যমিক, ২১ দশমিক ২১ শতাংশ স্নাতক/সম্মান, ১৬ দশমিক ৬৬ শতাংশ মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত পড়োশানা করেছেন। আর ১২ দশমিক ৮৭ শতাংশের পড়াশোনা মাধ্যমিকের নিচের স্তরের।
সভায় প্যানেল আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিটিআরসির মহাপরিচালক (ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড অপারেশন) ব্রিগে. জে. কাজী মুস্তাফিজুর রহমান, ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের গ্লোবাল স্টাডিজ অ্যান্ড গভর্নেন্স (জি.এস.জি) বিভাগের অধ্যাপক ও ইমতিয়াজ এ হুসেইন, বিশ্বব্যাংকের পরামর্শক ও আইডিয়া ফাউন্ডেশনের প্রধান গবেষক হুসেইন সামাদ, বাংলাদেশ উইমেন ইন টেকনোলজির কোষাধ্যক্ষ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার নাজমুস সালিহিন এবং ঢাকা মহানগর পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগের (সিটিটিসি) অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার ইশতিয়াক আহমেদ।
সভায় সাইবার অপরাধ মোকাবিলায় গণ সাইবার স্বাক্ষরতার পাশাপাশি দেশের সাইবার সার্বভৌমত্ব অক্ষুণ্ণ রাখতে সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে নিজস্ব সাইবার সল্যুশন তৈরির ওপর গুরুত্বারোপ করেন বক্তারা।