দ্রুতই সাইবার নিরাপত্তা আইন সংশোধন বা সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। তবে এটি পুরোপুরি বাতিল করা উচিত হবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
রবিবার ঢাকার আগারগাঁওয়ে এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর কার্যালয়ে ‘স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিমূলক সুশাসন প্রতিষ্ঠায় তথ্য অধিকার: এনজিওদের সহায়ক ভূমিকা’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় তিনি একথা বলেন। ‘তথ্য অধিকার ফোরাম’ ও ‘মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন’ এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করে।
আসিফ নজরুল বলেন, “সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্টে একটা রিফর্ম প্রয়োজন, দ্রুতই সে বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হবে।”
বাসস জানিয়েছে, বিগত সরকারের আমলে তথ্য অধিকার আইন হয়েছে আবার তথ্য অধিকার বিনাশ করারও আইন হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “সাইবার নিরাপত্তা আইন পুরোপুরি বাতিল করা উচিত হবে না। কারণ এটি মূলত দুই ধরনের অপরাধ প্রতিরোধের জন্য তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে ‘কম্পিউটার অফেন্স’ (কম্পিউটার ব্যবহার করে অপরাধ সংঘটন) এবং অন্যটি ‘স্পিচ অফেন্স’। ‘স্পিচ ওফেন্স’ বাতিল করা সম্ভব হলেও ‘কম্পিউটার ওফেন্স’ বাতিল করা সঠিক হবে না।”
২০১৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন করা হয়। কিন্তু আইনটি নিপীড়নমূলক এবং নিবর্তনমূলক উল্লেখ করে গণদাবির প্রেক্ষাপটে তা রহিত করা হয়। এরপর বাতিল করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের প্রায় একই আদলে ‘সাইবার নিরাপত্তা আইন, ২০২৩’ প্রণয়ন করা হয়। সেই আইনটি নিয়েই কথা বললেন আইন উপদেষ্টা।
তথ্য অধিকার নিয়ে ‘সচেতনতার অভাব’ রয়েছে বলেও মন্তব্য করে আইন উপদেষ্টা বলেন, “এ অধিকার কিন্তু অন্যান্য অধিকারের মতো নয়। তথ্য অধিকার ছাড়া সব অধিকার মূল্যহীন। তাই তথ্য অধিকার নিয়ে একটি আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।”
রাষ্ট্রের আইন, বিচার ও শাসন বিভাগ যদি ঠিক না থাকে, তাহলে তথ্য কমিশন বা মানবাধিকার কমিশনের কোনও কার্যক্ষমতা থাকবে না। একথা উল্লেখ করে আসিফ নজরুল বলেন, “যারা তথ্য অধিকারের কথা বলেন, তাদের সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা বলতে হবে, গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যার বিরুদ্ধেও কথা বলতে হবে। বিচার বিভাগের স্বাধীনতার কথা বলতে হবে। জনগণ জানে, বিগত সরকার বিচার বিভাগকে কীভাবে নির্যাতনের হাতিয়ার হিসেবে তৈরি করে ফেলেছিল, সংসদকে লুটপাটের, অন্যায়-অবিচারের ফোরাম হিসেবে তৈরি করেছিল।”
সবার এসব বিষয়ে সোচ্চার হওয়া উচিত বলে মনে করেন আইন উপদেষ্টা। তার মতে, “দুঃশাসনের সময়ে প্রতিবাদ করাটাই সবচেয়ে বড় ব্যাপার। প্রতিবাদ সবসময়ই বজায় রাখতে হবে। এমনকি আমাদেরও যদি কোনও ভুল হয় তারও প্রতিবাদ জানাতে হবে।”