বঙ্গোপসাগরের লঘুচাপটি এরই মধ্যে নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে, যা শনিবার দুপুর নাগাদ প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে হয়ে দেখা দিতে পারে বলে আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
শুক্রবার বিকালে আবহাওয়াবিদ হাফিজুর রহমান সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে নিম্নচাপকে বেশ কিছু ধাপ পার হতে হয়। এজন্য কিছুটা সময় লেগে যায়। ধারণা করছি, শনিবার দুপুর নাগাদ নিম্নচাপটি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপান্তরিত হতে পারে।”
তবে ভারতের আবহাওয়া বিভাগ (আইএমডি) বলছে, রবিবার মধ্যরাতে পশ্চিমবঙ্গের দ্বীপ ‘সাগর’ ও বাংলাদেশের খেপুপাড়ার মধ্যে ঘূর্ণিঝড় রেমাল আছড়ে পড়বে।
সাগরে অবস্থানরত নিম্নচাপটি যদি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়, তাহলে তার নাম হবে ‘রেমাল’। এবারের নামটি দিয়েছে ওমান। এর অর্থ ‘বালু’।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, নিম্নচাপটির অভিমুখ এখন রয়েছে বাংলাদেশের দিকে। বর্তমানে পূর্ব মধ্য বঙ্গোপসাগর এবং এর কাছাকাছি পশ্চিম মধ্য বঙ্গোপসাগরের অংশ জুড়ে এর অবস্থান। এটি আরও উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর ও ঘণীভূত হতে পারে। বাংলাদেশ উপকূলের সুন্দরবন ও খেপুপাড়ার দিকে এর গতিপথ রয়েছে বলে জানাচ্ছে আবহাওয়াবিদরা।
শুক্রবার দুপুরে নিম্নচাপটি পায়রা ও মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে যথাক্রমে ৭৩০ ও ৭৬৫ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল। এছাড়া, চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৮০৫ কিলোমিটার এবং কক্সবাজার থেকে ৭৪০ কিলোমিটার দক্ষিণ পশ্চিমে ছিল।
নিম্নচাপের কারণে সাগর উত্তাল থাকায় শুক্রবার দেশের চার সমুদ্রবন্দরে ১ নম্বর দূরবর্তী সতর্কসংকেতও দেখতে বলে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এসময়ে মাছ ধরার যানগুলোকে গভীর সমুদ্রে না যাওয়ার কথা বলা হয়।
তবে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বেশি পড়বে বলে জানান আবহাওয়াবিদ হাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, “কাল থেকেই উপকূলীয় অঞ্চলে বৃষ্টি শুরু হবে এবং পরেরদিন সারা দেশেই বৃষ্টি হবে।”
আবহাওয়ার হিসাব অনুযায়ী, ঘূর্ণিঝড়ের কারণে সৃষ্ট বাতাসের গতিবেগ যদি ঘণ্টায় ৬২ থেকে ৮৮ কিলোমিটার হয়, তখন তাকে ‘ঘূর্ণিঝড়’ বা ট্রপিক্যাল সাইক্লোন বলা হয়। এই গতিবেগ যদি ৮৯ থেকে ১১৭ কিলোমিটার হয়, তখন তাকে ‘প্রবল ঘূর্ণিঝড়’ বলা হয়। আর বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ১১৮ থেকে ২১৯ কিলোমিটার হলে সেটিকে ‘অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড়’ বলা হয়। গতিবেগ ২২০ কিলোমিটার বা তার বেশি হলে তা হয় ‘সুপারসাইক্লোন।
নিম্নচাপ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হলে, বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাস, দমকা ও ঝোড়ো হাওয়ার পাশাপাশি বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে বলেও জানান হাফিজুর রহমান।
যদিও ঘূর্ণিঝড়ের সঙ্গে উপকূলে জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা আপাতত দেখছে না আবহাওয়া অধিদপ্তর।
তারপরও যে কোনও প্রতিকূল পরিস্থিতি থেকে বাঁচতে এরই মধ্যে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে উপকূলের বিভিন্ন জেলা প্রশাসন।
উপকূলীয় এলাকাগুলোতে প্রস্তুত করা হচ্ছে আশ্রয়কেন্দ্র। বাগেরহাটেও দুর্যোগকালে নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য ৩৫৯টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তত রাখার খবর পাওয়া গেছে।
ঘূর্ণিঝড় আসার আগেই দেশজুড়ে চলছে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ।
বৃহস্পতিবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা পাওয়া যায় রাজশাহীর ঈশ্বরদীতে, ৩৮ দশমিক ২ ডিগ্রী সেলসিয়াস।
শুক্রবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা পাওয়া গেছে চুয়াডাঙ্গায়, ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সেইসঙ্গে সেখানে আর্দ্রতা ছিল ৪২ শতাংশ।