ইরান ও ইসরায়েলের পাল্টাপাল্টি হামলায় উত্তেজনা চলছে মধ্যপ্রাচ্যে। তৈরি হয়েছে আঞ্চলিক সংঘাত ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা।
ইসরায়েল গত শুক্রবার ইরানের ইস্পাহান প্রদেশে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে বলে যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে। তবে এতে কোনও ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে কি না, তা জানাতে পারেনি দেশটি।
ইসরায়েলও কিন্তু ওই হামলা নিয়ে মুখ খোলেনি। ইরান বলছে, হামলার চেষ্টা তারা প্রতিহত করে দিয়েছে।
এমন ধোঁয়াশার মধ্যেই বিবিসির প্রকাশিত দুটি স্যাটেলাইট ইমেজ নতুন আলোচনা তৈরি করেছে। ছবিতে ইরানের একটি বিমানবন্দরের কিছু অংশে ক্ষয়ক্ষতির প্রমাণ মিলেছে।
শুক্রবার ইস্পাহানে ধারণ করা অপটিক্যাল ও সিন্থেটিক অ্যাপারচার রাডার (এসএআর) স্যাটেলাইট ছবি বিশ্লেষণ করেছে বিবিসি। তাতে দেখা যাচ্ছে, ইস্পাহানের বিমানবন্দরের একটি বিমান-প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার আংশিক ক্ষতি হয়েছে।
ইরানে হামলায় কেমন অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে, তা স্পষ্ট নয়।
এসএআর প্রযুক্তি রেডিও তরঙ্গ ব্যবহার করে পৃথিবীর পৃষ্ঠের একটি বিস্তারিত ছবি তৈরি করে। এটি সাধারণ উপগ্রহ প্রযুক্তির তুলনায় অনেক বেশি কার্যকর। কারণ এটি রাতের বেলায় বা মেঘের মধ্যেও ছবি তুলতে পারে।
এর মাধ্যমে তোলা ছবি হয় সাদা-কালো। কিন্তু খুব উচ্চ রেজ্যুলেশনের। অর্থাৎ ছবিগুলোতে থাকা ছোট ছোট বস্তুও স্পষ্টভাবে খুঁজে বের করা যায়।
তবে ছবি রঙিন না হওয়ায় এটি মাটিতে রং পরিবর্তন যেমন পোড়া দাগ, শনাক্ত করতে পারে না। এটি ভবন, যানবাহন ইত্যাদির কাঠামোগত ক্ষতি স্পষ্টভাবে দেখাতে পারে।
গত ১৫ এপ্রিল উমব্রা স্পেসের তোলা ছবিতে ইস্পাহানের শিকারি বিমানবন্দরের উত্তর-পশ্চিম কোণে একটি এস-৩০০ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দেখা যাচ্ছে। সেখানে রাডার, ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপক যন্ত্রসহ অন্য সরঞ্জামে সজ্জিত কয়েকটি যানবাহনও দেখা যায়।
ছবিতে রাডারের পাশে ধ্বংসাবশেষ দেখা গেছে। উমব্রা স্পেসের এমন দাবি নিশ্চিতে নতুন করে ছবি তোলা হয় প্লানেট নামের স্যাটেলাইট দিয়ে। সেখানেও ধ্বংসাবশেষ দেখা যায়।
কী বলছে ইরান
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আবদুল্লাহিয়ান জানান, বিমানবন্দরে মোতায়েন থাকা আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গত শুক্রবার তিনটি কোয়াডকপ্টার (খেলনা ড্রোন) ধ্বংস করেছে। এতে কোনও ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।
তিনি বলেন, “জায়নবাদের সমর্থক মিডিয়াগুলো তাদের ক্রমাগত পরাজয় থেকে বের হওয়ার জন্য বিজয়ী হওয়ার চেষ্টা করছে।”
শীর্ষ এই কূটনীতিক হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ইসরায়েল ইরানের স্বার্থের বিরুদ্ধে কাজ করলে তেহরানের পরবর্তী প্রতিক্রিয়া হবে তাৎক্ষণিক, দৃঢ় ও সর্বোচ্চ মাত্রার।
তবে শুক্রবারের আগে থেকেই ইরানের সেনাবাহিনীর একাধিক শাখা সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করছে। দেশটির পারমাণবিক স্থাপনাগুলো সাময়িক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
শুক্রবার ইরানের স্থানীয় সময় সকালে ইস্পাহান ও তাবরিজ শহর থেকে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। ঘটনার কয়েক ঘণ্টা পরেই যুক্তরাষ্ট্র দাবি করে, ইসরায়েলে ইরানে হামলা চালিয়েছে।
সিরিয়ার এক ইরানি কনস্যুলেটে গত ১ এপ্রিল ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইসরায়েল। এতে ইরানের ইসলামিক রেভ্যুলেশনারি গার্ড কর্পসের কয়েকজন সেনা নিহত হন।
ওই ঘটনারই প্রতিক্রিয়ায় গত ১৩ এপ্রিল ইসরায়েলে সাড়ে তিনশ ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করে ইরান। তবে ইসরায়েলের তেমন একটা ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি।
তথ্যসূত্র : বিবিসি, ফার্স নিউজ