শুল্ক বেড়ে যাওয়ায় খেজুর আমদানি করতে উৎসাহ পাচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা। এ কারণে আসন্ন রমজান মাসে খেজুরের সরবরাহে ঘাটতি দেখা দিতে পারে। একই সঙ্গে এর দামও অনেক বেড়ে যেতে পারে।
ঢাকায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের আবদুস সালাম হলে সোমবার আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ফ্রেশ ফ্রুটস ইম্পোর্টার অ্যাসোসিয়েশন।
সংগঠনটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, খেজুরের ওপর শুল্ক আগে প্রতি কেজিতে ছিল ৫ টাকা ৪৫ পয়সা থেকে ২১ টাকা ৮৪ পয়সা। এই শুল্ক বেড়ে ফেব্রুয়ারির ৬ তারিখ পর্যন্ত প্রতি কেজিতে দাঁড়ায় ৬৫ থেকে ১৮০ টাকা। পরের দিন ৭ ফেব্রুয়ারি ১০ শতাংশ শুল্ক কমানো হলেও প্রতি কেজিতে শুল্ক থাকে ৫৪ টাকা থেকে ১৪৬ টাকা।
খেজুরের শুল্ক কমানো না হলে গত রমজানে খুচরায় যে খেজুর প্রতি কেজি ৯০-১১০ টাকায় বিক্রি হয়েছে, তা এবার হবে ২০০ টাকা। গত বছর রমজানে হিমায়িত খেজুরের দাম ছিল ২০০ টাকা কেজি। এবার এর মূল্য হতে পারে প্রতি কেজি ৪০০ টাকা।
আন্তর্জাতিক বাজারে খেজুরের দাম ৫০-৬০ ডলার কমলেও দেশের বাজারে শুল্কের কারণে তা আকাশচুম্বী বলে জানিয়েছেন আমদানিকারকরা।
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ফ্রেশ ফ্রুটস ইম্পোর্টার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম বলেন, “আসন্ন রমজান মাসে খেজুরের সরবরাহ ও বাজারমূল্য স্বাভাবিক রাখতে জানুয়ারি মাসে মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুল্ক কমানোর নির্দেশ দেন। এছাড়া বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে খেজুরের বর্ধিত শুল্কায়ন মূল্য ও আমদানি শুল্ক কমিয়ে আগের দরে রাখতে কয়েক দফায় চিঠি দেয়।
“কিন্তু দুঃখের সঙ্গে জানাতে হচ্ছে, ৭ ফেব্রুয়ারি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের প্রজ্ঞাপনে খেজুর আমদানিতে শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশ কমিয়ে ১৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়, যা খেজুরের বিগত সময়ে বর্ধিত শুল্কায়ন মূল্য থেকে অতি সামান্য পরিমাণে কমানো হয়েছে।”
খেজুরের বর্ধিত শুল্কায়ন মূল্য ও আমদানি শুল্ক কমানো হবে ভেবে আমদানিকারকদের অনেকে খেজুরবাহী কনটেইনার চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছার পরও ডেলিভারি নেননি বলে জানান সিরাজুল ইসলাম।
তিনি বলেন, “প্রায় ৪০০-৫০০ খেজুরবাহী কন্টেনার চট্টগ্রাম বন্দরে পড়ে আছে। শুল্ক কমার পরে আমদানিকারকরা খেজুর ডেলিভারি নিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সাম্প্রতিক প্রজ্ঞাপনে যে পরিমাণ শুল্ক কমানো হয়েছে, তা খুব সামান্য। শুল্কায়ন মূল্য কমার আশায় বন্দরে রেখে দেওয়া কন্টেনারগুলোর পোর্ট ও শিপিং লাইনের যে ডেমারেজ চার্জ আসবে, তার চেয়ে অনেক কম এই মূল্য হ্রাস।”
আরও খেজুর আমদানির এলসি করা হয়েছে, যা বর্তমানে পাইপলাইনে আছে বলে জানান বাংলাদেশ ফ্রেশ ফ্রুটস ইম্পোর্টার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি।
তিনি অভিযোগের সুরে বলেন, “ভারতে শুল্ক ১১ টাকা, আমাদের এখানে শুল্ক ২০০ টাকা। এখন যেটা হবে, ভারত থেকে চোরাকারবারি হয়ে খেজুর দেশে আসবে। আমাদের খেজুর কেউ কিনবে না। আমরাও তো দেশের মানুষ। আমাদের সঙ্গে কথা বলে শুল্ক নির্ধারণ করা যেত। এতে দেশের মানুষও লাভবান হতো।”
সিরাজুল ইসলাম বলেন, “ব্যবসায়ীরা একা দ্রব্যমূল্য স্বাভাবিক রাখতে পারবেন না। এক্ষেত্রে সবার কাজ করতে হবে। এমন কিছু সিদ্ধান্ত হয়, যার কারণে চাইলেও দাম ঠিক রাখা যায় না। পরে সবাই দোষ দেয় ব্যবসায়ীদের।”
তিনি বলেন, “আমি কাস্টমস ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের উদ্দেশে বলব, খেজুরকে তারা যেন বিলাসী পণ্য হিসেবে না দেখেন। এটা সুন্নতি খাবার। এর ওপর শুল্ক কমানো হোক এটাই আমাদের দাবি, যাতে দেশের সবাই রমজান মাসে কম দামে খেজুর খেতে পারে।”
বাংলাদেশ ফ্রেশ ফ্রুটস ইম্পোর্টার অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে বলা হয়, আসন্ন রমজানে ৫০-৬০ হাজার টন খেজুরের চাহিদা আছে। বাংলাদেশে আমদানি করা খেজুরের ৯৫ ভাগ আসে ইরাক, দুবাই, তিউনেশিয়া ও আলজারিয়া থেকে। পাঁচ ভাগের মতো আমদানি হয় মিশর ও সৌদি আরব থেকে।