দ্বাদশ জাতীয় ভোট বানচাল করতে ট্রেনে-বাসে আগুন দেওয়াসহ নাশকতা পরিকল্পনার বেশ কয়েকটি ‘ছক’ হাতে পাওয়ার দাবি করেছে গোয়েন্দা পুলিশ।
নাশকতার তথ্য পাওয়া গেলেও সময় ও স্থান জানা না থাকায় কয়েকটি ঘটনা প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়নি বলে শনিবার (৬ ডিসেম্বর) এক ব্রিফিংয়ে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত ব্রিফিংয়ে তিনি দাবি করেন, শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) রাতে বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে অগ্নিসংযোগকারীদের সঙ্গে বিএনপি নেতারা ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত ছিলেন।
পুলিশের অতিরিক্ত এই কমিশনার জানান, বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মোহাম্মদ নবী উল্লাহ নবীসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
তিনি বলেন, “গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনের অগ্নিকাণ্ডে সরাসরি জড়িত ছিলেন। ট্রেনে আগুন লাগার আগে বিএনপির ১০/১১ জন ভিডিও কনফারেন্স করেন। তারা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সবকিছুর পরিকল্পনা করেন।”
ভোট ঘিরে ‘শঙ্কা আছে’, পুলিশও প্রস্তুত
ভিডিও করফারেন্সে মহানগর দক্ষিণ যুবদলের আহ্বায়ক খন্দকার এনাম প্রথমে যুক্ত হন দাবি করে হারুন অর রশীদ বলেন, “এরপর আসেন সদস্য সচিব রবিউল ইসলাম নয়ন, যুগ্ম আহ্বায়ক এম এ গাফফার, ইকবাল হোসেন বাবলু, একজন দফতর সম্পাদক ও কাজী মনসুর।
“তারা ভিডিও কনফারেন্সে এসে বৃহত্তর ময়মনসিংহ থেকে ঢাকাগামী ট্রেনে, বিশেষ করে নরসিংদীর কাছে সুবিধাজনক স্থানে অগ্নিসংযোগ করার কথা বলেন। আরেকটি স্থান কমলাপুর থেকে নারায়ণগঞ্জ লাইনে আপ-ডাউনে সুবিধাজনক স্থানে যাত্রীবাহী ট্রেনে আগুন লাগিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে মিডিয়ার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চান।”
দক্ষিণ যুবদল নেতা রবিউল ইসলাম নয়নের তত্ত্বাবধানে যুবদলের কয়েকটি টিম লালবাগের কয়েকজন দাগি সন্ত্রাসীর মাধ্যমে বেনাপোল এক্সপ্রেসে আগুন লাগায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, “ভিডিও কনফারেন্সে বলা হয়, ট্রেনে কে আগুন লাগাবেন? কনফারেন্সে থাকা একজন বলেন, তিনি আগুন লাগাতে পারবেন।”
তবে তদন্তের স্বার্থে এই মুহূর্তে নামটি উল্লেখ করেননি ডিবির এই কর্মকর্তা।
তিনি বলেন, “কনফারেন্সে থাকা আরও তিন জন আগুন লাগাতে পারবে বলে জানান। তারা ২০১৩-১৪ সালে বিভিন্ন এলাকায় বোমা নিক্ষেপ ও অগ্নিসংযোগ করেছিলেন। তারা যাত্রাবাড়ীর আশপাশের এলাকায় থেকে ট্রেনটিতে অগ্নিসংযোগ করে।”
যে মোবাইল থেকে ভিডিও কনফারেন্স করা হয়েছিল সেটি জব্দ করা হয়েছে জানিয়ে ব্রিফিংয়ে বলা হয়, মোবাইলটি কাজী মনসুরের। তাকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ভোটের দুদিন আগে ট্রেনে আগুন, ৪ জন নিহত
গোয়েন্দাদের কাছে নাশকতার তথ্য থাকলেও স্থান নিশ্চিত হতে না পারায় ট্রেনে আগুনের ঘটনা প্রতিরোধ করা যায়নি বলে জানিয়েছেন র্যাব মহাপরিচালক এম. খুরশীদ হোসেন।
মিরপুর কলেজ ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “রাজধানীতে নাশকতা ঘটবে, র্যাবের কাছে এমন গোয়েন্দা তথ্য ছিল। কিন্তু কোথায় নাশকতা ঘটবে, তা নিশ্চিত করে জানা ছিল না।”
ট্রেনে কারা আগুন লাগিয়েছে, সে বিষয়ে এখনই মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।
বলেন, “এ বিষয়ে তদন্ত ও অনুসন্ধান চলছে। আমরা তিনজনকে আটক করেছি। তাদের কাছে পেট্রোল বোমা পাওয়া গেছে ২৮টি, ককটেল পাওয়া গেছে ৩০টি। তাদের আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করছি।”
নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সম্পন্ন করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার সমন্বয়ে র্যাব পর্যাপ্ত নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নিয়েছে বলে জানান বাহিনীটির মহাপরিচালক।
তিনি বলেন, “সবাই যেন নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারেন, সে জন্য র্যাব প্রস্তুত রয়েছে। সারা দেশে র্যাবের সব ইউনিট স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে টহল শুরু করেছে, সাদা পোশাকে গোয়েন্দা নজরদারি অব্যাহত রেখেছে। গুজব প্রতিরোধে সাইবার জগতে নজর রাখছে র্যাব। র্যাবের ডগ স্কোয়াড, বোমা উদ্ধার ও নিষ্ক্রিয়করণ ইউনিট কাজ করছে। বিশেষ প্রয়োজনে ব্যবহারের জন্য র্যাবের হেলিকপ্টার প্রস্তুত রয়েছে।”
র্যাব বিশেষ ধরনের নতুন ডিভাইস চালু করেছে জানিয়ে এম. খুরশীদ হোসেন বলেন, নির্বাচনের দিন এক এলাকার মানুষ অন্য এলাকায় গেলে ওই যন্ত্র তাকে শনাক্ত করবে। যৌক্তিক কারণ ছাড়া এক এলাকার মানুষ অন্য এলাকায় যেতে পারবেন না।
ভোট দিতে বাধা বা প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা বেআইনি ও অসাংবিধানিক উল্লেখ করে তিনি বলেন, “যারা এই বেআইনি কাজ করবেন, তাদের কঠোর হাতে দমন করা হবে।”
নির্বাচনের জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা নেয়া হয়েছে জানিয়ে আতঙ্ক-ভয় উপেক্ষা করে নাগরিকদের ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোটাধিকার প্রয়োগের আহ্বান জানান তিনি।