সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারের লাশের অংশবিশেষ উদ্ধার না হলে নিষ্পত্তি হবে না হত্যা মামলার। তাই তার লাশ বা লাশের কিছু অংশ হলেও উদ্ধারে ভারতের কলকাতায় গিয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল। পাশাপাশি এ ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া অভিযুক্তদের জিজ্ঞাসাবাদও করবে ডিবি পুলিশ।
রবিবার সকালে কলকাতায় পৌঁছে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। তিন সদস্যের ডিবি পুলিশের দলটির তিনিই নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
দলের অন্য সদস্যরা হলেন ডিবি ওয়ারী বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) আব্দুল আহাদ ও অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মো. শাহিদুর রহমান।
সকালে নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বের হওয়ার সময় সাংবাদিকদের মুখোমুখি বাংলাদেশি গোয়েন্দাদের দলটি। এক প্রশ্নের জবাবে হারুন অর রশীদ বলেন, “লাশের অংশবিশেষ উদ্ধার না হলে মামলা নিষ্পত্তি করা যাবে না। সে কারণে আমাদের মূল কাজ দুটি—লাশ বা অংশবিশেষ উদ্ধার ও অপরাধীদের জিজ্ঞাসাবাদ করা। তাদের সঙ্গে অন্য কোনও চক্র জড়িত কিনা সেটি খুঁজে বের করা।
“আমাদের কাজ হচ্ছে, অপরাধ যেখান থেকে শুরু হয়েছে এবং শেষ হয়েছে তা খুঁজে বের করা। ক্রিমিনাল প্রসিডিওর অনুযায়ী, তদন্তকারী দলকে দুটি স্থানই পরিদর্শন করতে হয়।”
আনোয়ারুল আজীম বাংলাদেশের জনপ্রিয় সংসদ সদস্য ছিলেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, “সেই এমপিকে নৃশংসভাবে হত্যা করে বিদেশের মাটিতে কোথাও ফেলে দেওয়া হয়েছে। এই হত্যার মাস্টার মাইন্ড আখতারুজ্জামানসহ যারা হত্যাকারী সবাই বাংলাদেশি। এরই মধ্যে বাংলাদেশে ৩৬৪ ধারায় অপহরণের মামলা করা হয়েছে। মামলা অনুযায়ী, বাংলাদেশে খুনের পরিকল্পনা হয়েছে এবং কলকাতায় সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হয়েছে। পরে গুম করার জন্য এমপি আনারের মরদেহের টুকরো বিভিন্ন জায়গায় ফেলে দেওয়া হয়েছে।”
এ হত্যার বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ ও বাংলাদেশের মধ্যে তথ্য আদান-প্রদান হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “পূর্ববঙ্গ কমিউনিস্ট পার্টির নেতা শিমুল বিশ্বাস, যিনি আমানুল্লাহ নামে ভারতে প্রবেশ করেছিলেন। তিনিই এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কাজ করেছেন। তার কাছে অনেক তথ্য পেয়েছি।”
কলকাতায় সিআইডির হাতে গ্রেপ্তার হওয়া জিহাদ হাওলাদারকে বাংলাদেশে নিয়ে যাওয়া হবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে হারুন অর রশীদ বলেন, “যদি অপরাধ একই দেশে সংঘটিত হতো; সেক্ষেত্রে আমরা আসামিদের মুখোমুখি বসিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারতাম। কিন্তু যেহেতু দেশ ভিন্ন; তাই হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে আমরা বিভিন্ন কথা বলেছি। এক্ষেত্রে দুই দেশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে আমরা পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব।”
এই হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী আখতারুজ্জামান ঘটনার পর ১০ তারিখ বাংলাদেশে গিয়েছিলেন জানিয়ে তিনি বলেন, “এরপর নেপাল, দুবাই হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে চলে গেছেন। আমরা বাংলাদেশের ঊর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি, ইন্টারপোলের সঙ্গেও কথা বলে তাকে কীভাবে ফেরানো যায়, সে ব্যাপারে আলোচনা চলছে।”
এসময় এমপি আনারের লাশ খুঁজে পাওয়ার ব্যাপারে আশা প্রকাশ করেন ডিএমপির ডিবি প্রধান। তিনি বলেন, “পশ্চিমবঙ্গের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সিআইডি অনেক কাজ করছে অনেকদূর এগিয়েছে। আমরা আশা করি, খুব দ্রুত তারা এ হত্যার সব তথ্য পেয়ে যাবে।”
পশ্চিমবঙ্গের গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, বিমানবন্দর থেকে কলকাতার নিউ টাউনের ওয়েস্টিন হোটেলে যান বাংলাদেশের ডিবি সদস্যরা। সফরে তারা নিউ টাউনের সঞ্জীবা গার্ডেন, ভাঙ্গরে কৃষ্ণ মাটি এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শনে যেতে পারেন।
গত ১৩ মে সঞ্জীবা গার্ডেন নামের অভিজাত আবাসিক এলাকাতেই এমপি আনারকে খুন করা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে সিআইডি। তদন্তে নেমে গত বৃহস্পতিবার বনগাঁ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে জিহাদ হাওলাদার নামে এক বাংলাদেশিকে।
পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ জানিয়েছে, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জিহাদ জানিয়েছে এমপি আনারের লাশের টুকরো ফেলা হয়েছিল ভাঙ্গড়ের কৃষ্ণমাটি এলাকায়। ফলে লাশের অংশবিশেষের সন্ধান পেতে গত তিন ধরে দফায় দফায় কৃষ্ণমাটি এলাকার জিরান গাছা বাগজোলা খাল ও সংলগ্ন এলাকায় তল্লাশি চালাচ্ছে সিআইডি। অভিযুক্ত জিহাদ হাওলাদারকেও সঙ্গে নেওয়া হচ্ছে এই অভিযানে।
যদিও এখন পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া যায়নি লাশের অংশ বিশেষ। ফলে খুনের মামলা এখনো দায়ের করা যায়নি।