কুটির, অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পখাতে (সিএমএসএমই) ঋণ প্রবাহ বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে আহ্বান জানিয়েছে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই)।
মঙ্গলবার ঢাকার মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে গিয়ে গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের সঙ্গে দেখা করে এই আহ্বান জানান ডিসিসিআইর পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা।
এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ডিসিসিআই জানায়, গভর্নরকে সুদের হার বৃদ্ধি পেলে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) খাতে ঋণ প্রবাহ বাধাগ্রস্থ হওয়ার ঝুঁকি দেখা দেয় বলে জানান ঢাকা চেম্বারের সভাপতি আশরাফ আহমেদ।
তিনি গভর্নরকে বলেন, এসএমইদের অর্থায়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের বেশ কিছু স্কিম রয়েছে, যেগুলোর কার্যক্রম বেগবান করতে পারলে এসএমইদের অর্থায়ন প্রক্রিয়া আরও সহজ হবে।
এছাড়াও সভায় বৈদেশিক বাণিজ্য প্রক্রিয়া ও বৈদেশিক ঋণ প্রক্রিয়া সহজ করা এবং ব্যাংকগুলো ঋণ প্রবাহ বাড়ানোর জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরকে অনুরোধ করেন ঢাকা চেম্বার সভাপতি।
সর্বোপরি এসএমইদের ঋণ প্রাপ্তিতে বিদম্যান সুদের চাপ কীভাবে আরও কমানো যায়, সে বিষয়ে উদ্যোগী হওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতি আহ্বান জানান ঢাকা চেম্বার সভাপতি।
গত ৫ অগাস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ৮ আগস্ট নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়।
এরপর অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুরকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর করার পর রবিবার প্রথমবারের মত নীতি সুদহার ৫০ বেসিস পয়েন্ট বাড়ানো হয়।
এ প্রসঙ্গে ডিসিসিআই সভাপতি বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নীতিসুদহার বাড়ানো একটি প্রচলিত প্রক্রিয়া, তবে এটি সাময়িক সময়ের জন্য প্রযোজ্য বলে আমরা মনে করি।
আশরাফ আহমেদ বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রিত থাকুক এটা আমাদেরও প্রত্যাশা। কারণ মূল্যস্ফীতির ফলে সাধারণ জনগণের জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির পাশাপাশি ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডের পরিচালন ব্যয়ও বৃদ্ধি পায়।
তবে ব্যাংকের মন্দঋণের পরিমাণ কমানো সম্ভব হলে নীতি সুদহারও কমবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
দেশের আর্থিক খাতকে স্থিতিশীল করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে ঢাকা চেম্বার সভাপতি বলেন, এসএমই খাতের বিকাশের লক্ষ্যে সুদের হার বৃদ্ধির চাপ মোকাবিলা এবং ঋণের প্রবাহ বজায় রাখায় সহায়তা প্রয়োজন।
বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর আহসান এইচ মনসুর ডিসিসিআই নেতাদের বলেন, বিদ্যমান মূল্যস্ফীতি আগামী ৬-৭ মাসের মধ্যে সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনা সম্ভব হলে নীতি সুদহার এবং ব্যাংক ঋণের সুদের হার কমানোসহ অন্যান্য বিষয়গুলোতে ইতিবাচক প্রভাব দেখা দেবে।
ব্যাংকের আমানত সংগ্রহের প্রবৃদ্ধি দুই অঙ্কে উন্নীত করা একান্ত অপরিহার্য বলেও মত দেন গভর্নর। এসএমইদের ক্রেডিট গ্যারান্টি ফেসিলিটিগুলোকে আরও সচল করার উপর গভর্নর জোরারোপ করেন। এক্ষেত্রে বেসরকারিখাতে ঋণ প্রবাহ বাড়াতে সরকারি ঋণ গ্রহণের হার সীমিতকরণের উপর গুরুত্ব দেন আহসান এইচ মনসুর।
গভর্নর ট্রেড ক্রেডিট পাওয়ার জন্য উদ্যেক্তাদের সময় মতো ঋণ পরিশোধের রেকর্ডের উন্নয়ন এবং বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়ানোর আহ্বান জানান।
গভর্নর আরও বলেন, শীঘ্রই একটি ব্যাংকিং কমিশন গঠন করা হবে, যার ভিত্তিতে আর্থিক খাতে স্থিতিশীলতা আনতে প্রয়োজনীয় রোডম্যাপ প্রণয়ন করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এছাড়াও তিনি নতুন বিনিয়োগকারীদের অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে বিনিয়োগ করার পরামর্শ দেন।