Beta
মঙ্গলবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
Beta
মঙ্গলবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

৫ জেলায় ৬১ জনের লাশ উদ্ধার

ss-dead-thana-6-8-24
Picture of সকাল সন্ধ্যা ডেস্ক

সকাল সন্ধ্যা ডেস্ক

শেখ হাসিনার সরকারের পদত্যাগ দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি ঘিরে এবং তার পদত্যাগের পর দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক সহিংসতা হয়েছে। মঙ্গলবার এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ৫ জেলায় ৬১ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।

আমাদের আঞ্চলিক প্রতিবেদকরা জানিয়েছেন, এর মধ্যে ঢাকার সাভার ও আশুলিয়া ৩৩ জন নিহত হয়েছেন। নোয়াখালী সোনাইমুড়ীতে মারা গেছে চার পুলিশসহ ৭ জন। ঝিনাইদহে এক চেয়ারম্যানসহ ৬ জন নিহত হয়েছেন। কুষ্টিয়ায় প্রাণ গেছে ৯ জনের। লালমনিরহাটে এক আওয়ামী লীগ নেতার বাড়িতে দেওয়া আগুনে পুড়ে মারা গেছে ৬ জন। ধারণা করা হচ্ছে, তারা সবাই শিক্ষার্থী।

শেখ হাসিনার সরকারের পদত্যাগ দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা সর্বাত্মক অসহযোগ কর্মসূচির প্রথম দিন রবিবার দেশজুড়ে হামলা, সংঘর্ষ ও গুলিতে প্রায় একশ মানুষ নিহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়। সোমবার ছিল তাদের ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি।

এদিন তীব্র ছাত্র-গণআন্দোলনের মুখে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করার পর বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে ভারতে চলে যান শেখ হাসিনা।

সাভার আশুলিয়া ধামরাই থানায় আগুন-লুটপাট, নিহত ৩৩

ঢাকা জেলার সাভার ও আশুলিয়ায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে অন্তত ৩৩ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। আন্দোলনকারীরা সাভার, আশুলিয়া ও ধামরাই থানায় হামলা করে ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়। পরে আগুন ধরিয়ে দেয় এসব থানায়।

এছাড়া সরকারি বিভিন্ন ভবন, আওয়ামী লীগ এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের অফিস এবং নেতাকর্মীদের বাসায় হামলা ও অগ্নিসংযোগের খবর পাওয়া গেছে। অনেকে আহত ও গুলিবিদ্ধ হয়েছে। ফুট ওভার ব্রিজে মরদেহ, পুলিশের পোশাক, রাইফেল ঝুলতে দেখা গেছে।

সোমবারের ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে দুই জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেন- মাছ ব্যবসায়ী রমজান আলী (৪০) ও সাভার পৌর এলাকার ভাগলপুর মহল্লার আবু বক্কর সিদ্দিকের ছেলে রফিকুল (৩০)।

সাভার এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ অন্যান্য হাসপাতাল থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। মৃত্যুর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।

সাভারের গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৬ জন, এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৮ জন এবং আশুলিয়ার নারী ও শিশু হাসপাতালে ৩ জন, হাবিব ক্লিনিকে ৩ জনের মরদেহ আনা হয়। তারা সবাই গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন।

গণস্বাস্থ্য সামাজিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ রাশেদুজ্জামান বলেন, “কাউকে মৃত আনা হয়েছে, কেউ হাসপাতালে এসে মারা গেছেন। যারা মারা গেছেন তাদের সবার বুলেট ইনজুরি। তাদের কারও মাথায়, কারও পেটে গুলি লেগেছে। আমাদের এখানে গুলিবিদ্ধ আরও ৩০ জন ভর্তি রয়েছে।”

আশুলিয়া নারী ও শিশু হাসপাতালের জুনিয়র অফিসার মো. পারভেজ বলেন, “আমাদের হাসপাতালে ৩ জনকেই মৃত অবস্থায় আনা হয়। তাদের সবারই মাথায় গুলি লেগেছিল।”

এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডিউটি ম্যানেজার সজীব রায় বলেন, “৮ জনেরই মৃত্যুর কারণ ফিজিক্যাল অ্যাসল্ট।”

এই ২০ জন ছাড়া আশুলিয়ার হাবিব ক্লিনিকে আছে ৩ জনের রদেহ।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সোমবার বেলা ১১টার দিকে আশুলিয়ার বাইপাইল এলাকায় কয়েকশ আন্দোলনকারী সড়ক অবরোধ করে। এসময় তাদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ বাধে। এক পর্যায়ে বাইপাইল এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। মাছ ব্যবসায়ী রমজান আলী গুলিবিদ্ধ হন।

এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডিউটি ম্যানেজার ইউসুফ আলী জানান, গুলিবিদ্ধ রমজান নামে একজনকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়।

সোমবার দুপুরের পরে সাভার বাসস্ট্যান্ড, রেডিও কলোনি ও আশুলিয়ার বাইপাইলে দফায় দফায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয় আন্দোলনকারীদের। এসময় অনেকেই গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

বিকালে সাভার, আশুলিয়া ও ধামরাই থানার সামনে জড়ো হয় আন্দোলনকারীরা। একপর্যায়ে তারা ধামরাই উপজেলা, ধামরাই থানা, পৌরসভায় ভবনে আগুন ধরিয়ে দেয়। ধামরাই উপজেলা র্নিবাহী অফিসারের বাসভবন ও গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়। আগুনে ধামরাই থানা ১০টি গাড়ি পুড়ে যায়।

এসময় থানা পুলিশের রেশন লুট করা হয়। জীবন বাঁচাতে ধামরাই থানা পুলিশের সদস্যরা সাধারণ পোশাকে সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশে বেরিয়ে যায়। এছাড়া আন্দোলনকারীরা ধামরাইয়ের বিভিন্ন স্থানে অন্তত ২০টি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয়।

সন্ধ্যায় আশুলিয়া থানার রান্না ঘরে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এর আগে আশুলিয়া থানা পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। পুলিশ জানমাল রক্ষার্থে গুলি চালায়। এক পর্যায়ে সেনাবাহিনীর সদস্যরা এসে আশুলিয়া থানা পুলিশ সদস্যদের উদ্ধার করে নিয়ে যান।

কয়েকশ আন্দোলনকারী বিকাল ৩টার দিকে সাভার থানা রোড়ে স্লোগান দিতে দিতে প্রবেশ করেন। এসময় সাভার প্রেসক্লাবে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ এবং লুটপাট করা হয়। পরে তারা সাভার মডেল থানার দিকে এগিয়ে যায়। আন্দোলকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়লে পুলিশও গুলি ছোড়ে।

এ সময় ১০ গুলিবিদ্ধ হয়। নিহত হয় রফিকুল নামে এক যুবক। সন্ধ্যার দিকে আন্দোলনকারীরা থানা ও পোস্ট অফিসের ভেতরে ঢুকে লুটপাট ও ভাঙচুর চালায়। এক পর্যায় আগুন ধরিয়ে দেয়। এ সময় পুলিশ সদস্যরা গুলি ছুড়তে ছুড়তে গাড়ি নিয়ে পালিয়ে যান। পরে আন্দোলনকারীরা থানা থাকা সব যানবাহনে আগুন ধরিয়ে দেয়।

এছাড়া সাভার পৌর কমিউনিটি সেন্টারে থাকা পুলিশের রিজার্ভ ফোর্সদের মালামাল, রেশন লুটপাট করে আগুন ধরিয়ে দেয় আন্দোলনকারীরা।

মঙ্গলবার সকালে আশুলিয়ার বাইপাইলের কাছে ফুট ওভার ব্রিজে দুই জনের মরদেহ ঝুলানো অবস্থায় দেখতে পান প্রত্যক্ষদর্শীরা। তারা জানান, পুলিশের পোশাক, রাইফেলও ব্রিজের রেলিংয়ে ঝুলছিল তখন। বাইপাইলে একটি পোড়া গাড়িতে তিনটি লাশ পাওয়া গেছে।

নোয়াখালী সোনাইমুড়ীতে ৪ পুলিশসহ নিহত ৭

নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী থানায় হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ৪ পুলিশ নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

সোমবার বিকাল পৌনে ৫টা থেকে সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এ সময় ৩ জন সাধারণ মানুষ নিহত হয়। তাদের পরিচয় জানা যায়নি। এসব তথ্য নোয়াখালীর এসপি মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান ও ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন নিশ্চিত করেছেন। 

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সোমবার দুপুরে আন্দোলনরীরা সোনাইমুড়ী বাইপাস এলাকায় জড়ো হন। বিকাল পৌনে ৫টার দিকে আনন্দমিছিল থেকে কয়েকজন সোনাইমুড়ী থানায় ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এ সময় থানার ভেতর থেকে পুলিশ গুলি ছুড়লে একজন নিহত হন। এরপর আন্দোলনকারীরা সংঘবদ্ধ হয়ে থানা ঘেরাও করে হামলা-ভাঙচুর চালালে অনেকেই গুলিবিদ্ধ হন। এক পর্যায়ে থানায় আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এ সময় আহতদের মধ্যে ৩৪ জন ২৫০ শয্যা নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। এর মধ্যে এক পুলিশ সদস্যও রয়েছেন।

হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন বলেন, “সন্ধ্যার দিকে ৩৭ জনকে গুরুতর জখম অবস্থায় আনা হয়। এর মধ্যে ৩ জন ছিলেন মৃত।”

এসপি আসাদুজ্জামান বলেন, “এখন পর্যন্ত চার পুলিশ সদস্যের মরদেহ পাওয়া গেছে। সব মিলিয়ে তখন ১৩ জন পুলিশ সদস্য ছিলেন। এর মধ্যে ৪ জনকে মৃত পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে তিনজনকে জবাই করা হয়।”

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “শুনতেছি সাধারণ মানুষ ৩ জন মারা গেছে। তাদের পরিচয় পাওয়া যায়নি।”

নিহতের পুলিশ সদস্যদের মধ্যে রয়েছে এএসআই মো. নাছির, এসআই মো.বাছির, কনস্টেবল মোশারফ ও গিয়াস। সোনাইমুড়ী থানার ওসি বখতিয়ার উদ্দিনের শরীরে ৫টি গুলি লেগেছে বলেও জানান এসপি আসাদুজ্জামান।  

বিকেল ৫টার দিকে একদল বিক্ষোভকারী আনন্দ মিছিল নিয়ে চাটখিল থানায় হামলা চালান। থানার প্রায় প্রতিটি কক্ষে হামলা-ভাঙচুরের পর অগ্নিসংযোগ করা হয়।

ঝিনাইদহে চেয়ারম্যানসহ ৬ জন নিহত

ঝিনাইদহে আন্দোলনকারীদের হামলায় ও আগুনে পুড়ে সদর উপেজলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ইউপি চেয়ারম্যান শহীদুল ইসলাম হীরণসহ ৬ জন নিহত হয়েছেন।

প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়রা জানান, সোমবার বিকালে শহরের আদর্শ পাড়ায় বিক্ষুদ্ধ জনতা জেলা সদরের ৯নং পোড়াহাটি ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহীদুল ইসলাম হিরণের বাড়িতে হামলা চালিয়ে আগুন দেয়। আগুনে পুড়ে চেয়ারম্যানসহ তিন জন নিহত হন।

এ সময় চেয়ারম্যানের গাড়ি চালক আক্তার হোসেন গণপিটুনিতে মারা যান। আহত হন ৯ জন। তাদের ঝিনাইদহ হাসপতালে ভর্তি করা হয়। এরমধ্যে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ৬ জনকে অন্যত্রে পাঠানো হয়েছে। আওয়ামী লীগ নেতা হীরণের মরদেহ জেলা শহরের পায়রা চত্বরে ঝুলিয়ে রাখা হয় গভীর রাত পর্যন্ত।

বিকালে কালীগঞ্জ উপজেলা শহরের ঢাকালে পাড়ায় আন্দোলনকারীরা একটি বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দিলে সেখানে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে দুই জন নিহত হন।

তাদের একজন রাব্বি হোসেন (১৫)। আরেকজনের নাম জানা যায়নি। তার বয়স ১৬ বছর।

বিকালে সেনাপ্রধানের ভাষণের পর জেলা সদরসহ বিভিন্ন উপজেলায় ছাত্র-জনতার ঢল নামে। তারা রাস্তায় এসে বিজয় মিছিল করতে থাকে।

এ সময় ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শফিকুল ইসলাম অপুর বাসায় হামলা চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এছাড়া কোটচাঁদপুর উপজেলা চেয়ারম্যান শরিফুন্নেছা মিকি, পৌর মেয়র সহিদুজ্জামানের বাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে।

কুষ্টিয়ায় নিহত ৯

কুষ্টিয়ায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে ৮ জন নিহত হয়েছেন। সোমবার দুপুরে কুষ্টিয়া মডেল থানা ও পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে হামলাকে কেন্দ্র করে এ ঘটনা ঘটে। এছাড়া সোমবার রাতে শহরের আমলা পাড়ায় আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংঘর্ষে সবুজ নামে এক বিএনপিকর্মী নিহত হন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে শহরের মজমপুর গেটে পুলিশের সঙ্গে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতার ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। এ সময় পুলিশ টিয়ার শেল ও ফাঁকা গুলি ছুড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। দুপুর ১টার দিকে তাদের আরেকটি একটি অংশ কুষ্টিয়া মডেল থানায় হামলা চালায়।

পুলিশ প্রথমে টিয়ার শেল ও ফাঁকা গুলি ছোড়ে। এক পর্যায়ে গুলি চালানো শুরু করে। এ পরিস্থিতিতেও আন্দোলনকারীরা পিছু হটেনি। খবর পেয়ে সেনা সদস্যরা এসে মডেল থানার সব পুলিশ সদস্যকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়। এরপর পরপরই আন্দোলনকারীরা থানা ভবন ও ৮-১০টি মোটরসাইকেলে আগুন লাগিয়ে দেয়। পরে ফায়ার সার্ভিস এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

দুপুর ২টার পর আন্দোলনকারীদের আরেকটি অংশ কুষ্টিয়া পুলিশ লাইন্সে ঢুকে ইট পাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ টিয়ার শেল ও শটগানের গুলি চালায়। এ সময় অনেকে গুলিবিদ্ধ হন। তাদের কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা ৮ জনকে মৃত ঘোষণা করেন।

নিহতদের মধ্যে রয়েছেন শহরের থানাপাড়া এলাকার এলাকার ইউসুফ আলী (৭০) ও লোকমানের ছেলে আব্দুল্লাহ (১৩), সদর উপজেলার হরিপুর এলাকার নওশের আলীর ছেলে বাবু (৪০) ও কফিলুদ্দিনের ছেলে আশরাফ (৪২)। বাকিদের পরিচয় জানা যায়নি।

সোমবার রাতে শহরের আমলা পাড়ায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ অফিসে হামলাকে কেন্দ্র করে দলটির কর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয় বিএনপি কর্মীদের। এতে সবুজ (৩২) নামে এক বিএনপিকর্মী নিহত হন।

কুষ্টিয়া ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. নাসির উদ্দিন ৯ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন।

সোমবার দুপুরের পর শেখ হাসিনার পদত্যাগের খবরে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজগর আলী, শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি তাইজাল আলী খান, যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মানব চাকী, কুষ্টিয়া-২ আসনের সাংসদ কামারুল আরেফিনের বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর চালানো হয়।

এছাড়া দলটির বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীদের বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর চালানো হয়। লুটপাট চালানো হয় আওয়ামী লীগ সমর্থকদের কয়েকটি দোকানে।

সন্ধ্যার দিকে মডেল থানায় লুটপাট চালানো হয়। থানার ওসি মাহফুজুল হক চৌধুরী জানিয়েছেন, শুধু আসবাবপত্র ও মূল্যবান সম্পাদ্য নয় থানা থেকে বেশ কিছু অস্ত্র ও গোলাবারদও লুট করা হয়েছে।

কাছাকাছি সময়ে কুষ্টিয়া শহরের বিভিন্ন স্থানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ভেঙে ফেলা হয়।

এছাড়া জেলার ছয় উপজেলার বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুরের খবর পাওয়া গেছে।

লালমনিরহাটে আওয়ামী লীগ নেতার বাড়িতে আগুন, ৬ ‘ছাত্রের’ মৃত্যু

লালমনিরহাটে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা সোমবার সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাশে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন সুমন খানের ৫তলা বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। সেই আগুনে ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, তারা সবাই ছাত্র।

নিহতদের মধ্যে পাঁচজনের পরিচয় জানা গেছে। তারা হলেন- শহরের খাতাপাড়া এলাকার সাইদুর রহমান মিঠুলের ছেলে শ্রাবণ, হাড়িভাঙ্গা এলাকার মৃত জাহেদুল ইসলাম খোকনের ছেলে তন্ময়, বানভাষা এলাকার রেজাউল করিম রেজার ছেলে রাজিব, পিংকির মোড় এলাকার বিজিবি কর্মকর্তা জিয়াউর রহমানের ছেলে রুশো এবং নবীনগর এলাকার সেকেন্দারের ছেলে জনি।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, শেখ হাসিনার পদত্যাগের খবরে ছাত্র-জনতার আনন্দ মিছিল শুরু হয় জেলার বিভিন্ন জায়গায়। এসময় বিক্ষুব্ধ কিছু শিক্ষার্থী আওয়ামী লীগ নেতাদের বাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেন।

এরই ধারাবাহিকতায় সন্ধ্যায় জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন সুমন খানের পাঁচতলা বাড়িতে যান কয়েকশ ছাত্র। তারা প্রথমে ভাঙচুর চালান। পরে আগুন ধরিয়ে দেন। এ সময় পঞ্চম তলায় ৬ জন আটকা পড়েন। সেখানেই পুড়ে মারা যান তারা।

হামলার আগেই আওয়ামী লীগ নেতা সুমন খান পরিবারের সবাইকে নিয়ে আত্মগোপনে চলে যান।

ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার শহিদার রহমান জানান, আগুন নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার পর পঞ্চম তলায় ছয়জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।

এর আগে বিকালে বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা লালমনিরহাট সদর-৩ আসনের এমপি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মতিয়ার রহমানের বাড়ি ও জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে ভাঙচুর চালান। পরে আগুন ধরিয়ে দেন। এ সময় বেশ কিছু গাড়িও পুড়িয়ে দেওয়া হয়।

বগুড়া সদর থানায় তাণ্ডব

শেখ হাসিনার পদত্যাগের খবরে বগুড়া শহরে শুরু হয় বিজয় উল্লাস। উল্লাসের মাঝেই সন্ধ্যায় শহরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় ব্যাপক তাণ্ডব চালানো হয়।

তাণ্ডবে ভাঙচুর হয়েছে সদর থানা, ফাঁড়ি, সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের কার্যালয়। দেওয়া হয় আগুন, চালানো হয় লুটপাট।

মঙ্গলবার সকালে থানার সামনে উৎসুক জনতার ভিড় দেখা গেছে। থানা বা ফাঁড়িতে দেখা যায়নি কোনও পুলিশ।

জানা গেছে, বগুড়া সদর উপজেলার সব পুলিশ প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইন্সে সংযুক্ত করা হয়েছে। থানা ও ট্রাফিক বিভাগের সব পুলিশ এখন ব্যারাকে। জরুরি প্রয়োজনেও জেলা সদরের কোনো পুলিশের কাছে সেবা পাওয়া সুযোগ নেই। পুলিশ সুপার কার্যালয়েও তালা ঝুলছে।

একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, বগুড়া সদরের সাতটি পুলিশ ফাঁড়ির সব পুলিশকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

বগুড়া সদর থানার এক কর্মকর্তা জানান, থানায় দফায় দফায় অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। ফাইলপত্র পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত