দেশের পূর্বাঞ্চল এবং দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের ১১ জেলায় চলমান বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৫২ জনে দাঁড়িয়েছে বলে জানিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। তার মধ্যে পুরুষ ৩৯ জন, নারী ৬ জন ও শিশু ৭ জন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কেএম আলী রেজা একথা জানান।
তিনি জানান, এই ৫২ জনের মধ্যে কুমিল্লায় ১৪, ফেনীতে ১৭, চট্টগ্রামে ৬, খাগড়াছড়িতে ১, নোয়াখালীতে ৮, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ১, লক্ষ্মীপুরে ১, কক্সবাজারে ৩ ও মৌলভীবাজারে ১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া মৌলভীবাজারে আরও একজন নিখোঁজ রয়েছেন।
মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে মন্ত্রণালয়ের উপসচিব সানজিদা ইয়াসমিন জানান, মৃতদের বেশিরভাগই পানিতে ডুবে মারা গেছে। তাছাড়া বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে, সাপের কামড়ে, হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়েও কারও কারও মৃত্যু হয়েছে।
আগস্ট মাসের শুরু থেকেই অতিবৃষ্টি ও উজানের ঢলের কারণে মুহুরী নদী সংলগ্ন বেশ কিছু এলাকা তলিয়ে যায়। আগস্টের মাঝামাঝি এসে সে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়। ফেনী-নোয়াখালীতে প্রবল বৃষ্টির পাশাপাশি সীমান্ত সংলগ্ন ত্রিপুরাতেও ব্যাপক বৃষ্টি হওয়ায় দ্রুত পরিস্থিতির অবনতি হয়।
তবে বর্তমানে সিলেটসহ দেশের ১১ জেলার চলমান বন্যা পরিস্থিতির সার্বিক উন্নতি হয়েছে বলেও জানিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়।
কেএম আলী রেজা জানান, আক্রান্ত ১১ জেলার ৬৮ উপজেলায় প্লাবিত ও ক্ষতিগ্রস্ত ইউনিয়ন/পৌরসভা ৮৯২টি। পানিবন্দি ও ক্ষতিগ্রস্তদের আশ্রয় দিতে মোট ৩ হাজার ৪০৩টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে মোট ৫ লাখ ২ হাজার ৫০১ জন ও ৩৬ হাজার ৪৪৮ গবাদি পশুকে আশ্রয় দেওয়া হয়।
বাসস জানিয়েছে, ১১ জেলায় পানিবন্দি হয়ে পড়ে মোট ১০ লাখ ৭২ হাজার ৫৭৯টি পরিবার। ক্ষতিগ্রস্ত হয় ৫৪ লাখ ৮০ হাজার ৪৬৩ জন। ক্ষতিগ্রস্তদের চিকিৎসা দিতে মোট ৫৯৫টি মেডিকেল টিম কাজ করে বলেও উঠে এসেছে মন্ত্রণালয়ের তথ্যে।
অতিরিক্ত সচিব বলেন, ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য নগদ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৪ কোটি ৫২ লাখ টাকা। বন্যাকবলিত এলাকায় সরকারি-বেসরকারিসহ সব পর্যায় থেকে ত্রাণ বিতরণ চলছে। বন্যা আক্রান্ত জেলাগুলোতে মোবাইল ও টেলিফোন যোগাযোগ পুনঃস্থাপন করা হয়েছে।
বন্যাপরবর্তী পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে বলেও জানান আলী রেজা।