কাস্পিয়ান সাগর তীরবর্তী রাশিয়ার উত্তর ককেশাস প্রজাতন্ত্র দাগেস্তানে এক সন্ত্রাসী হামলায় কমপক্ষে ২৩ জন নিহত হয়েছেন।
আঞ্চলিক রাজধানী মাখাচকলা ও ডারবান্ট শহরের ইহুদি সম্প্রদায়ের উপাসনালয় (সিনাগগ) ও খ্রিস্টানদের চার্চে রবিবার সন্ধ্যায় ওই হামলা চালায় একদল অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী। হামলার সময় খ্রিস্টানদের একটি ধর্মীয় উৎসব (পেন্টেকস্টের অর্থোডক্স উৎসব) চলছিল।
ঘটনার সময় সন্ত্রাসীরা পুলিশের একটি তল্লাসিচৌকিতেও হামলা চালায়। এতে অন্তত ১৫ পুলিশ নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ।
পুলিশ ছাড়াও চার্চের পুরোহিত ফাদার নিকোলাই কোটেলনিকভ ও একজন নিরাপত্তাকর্মীও সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হয়।
হামলার পরপরই পুলিশ পাল্টা গুলিতে হামলাকারীদের মধ্যে ছয় জন নিহত হয়। বাকী হামলাকারীদের খোঁজে অভিযান চালাচ্ছে দাগেস্তান পুলিশ।
এই হামলার পেছনে কারা রয়েছে, তা এখনও জানা যায়নি। এখন পর্যন্ত কেউ হামলার দায় স্বীকার করেনি। তবে আরটি জানিয়েছে, মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চলটিতে এর আগেও একাধিকবার ইসলামপন্থী সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটেছে।
রাশিয়ার সংবাদমাধ্যম তাস বলছে, সন্দেহভাজন হামলাকারীরা আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী সংগঠনের সদস্য।
টেলিগ্রামে পোস্ট করা ভিডিওতে দাগেস্তানের গভর্নর সের্গেই মেলিকভ বলেন, ‘দাগেস্তান ও পুরো দেশের জন্য এটা খুব দুঃখের দিন। আমরা বুঝতে পারছি, এসব সন্ত্রাসী হামলার পেছনে কোনও সংগঠন জড়িত এবং তারা কোনও লক্ষ্য পূরণে হামলা চালিয়েছে।’
এই হামলার ঘটনায় হতাহতের জেরে সোমবার থেকে বুধবার পর্যন্ত দাগেস্তানে তিন দিনের শোক ঘোষণা করা হয়েছে বলেও জানান গভর্নর সের্গেই মেলিকভ।
তিনি বলেন, “এই তিন দিন জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে। সেই সঙ্গে বিনোদনমূলক সব আয়োজন বাতিল করা হয়েছে।”
সোশাল মিডিয়ায় পোস্ট করা ফুটেজে দেখা গেছে, কালো পোশাক পরা কয়েকজন পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ছে।
ডারবান্টে সন্ত্রাসীরা একটি সিনাগগে ও চার্চে আগুন ধরিয়ে দেয়।
টেলিগ্রাম মেসেজিং অ্যাপ ম্যাশের একটি অনানুষ্ঠানিক চ্যানেলে বলা বলেছে, ডারবান্টের একটি ভবনে বন্দুকধারীদের ব্যারিকেড দিয়ে কোনঠাসা করা হয়েছে।
সেরগোকল নামের একটি গ্রামে পুলিশের গাড়িতে হামলা হয়েছে। এই হামলার পর পুলিশ মাখাচকালার কাছে সার্গোকালিনস্কি জেলার প্রধান মাগোমেদ ওমারভকে আটক করেছে। অভিযোগ উঠেছে, হামলাকারীদের মধ্যে তার দুই ছেলে ছিল।
জর্জিয়া ও আজারবাইজান সীমান্তে অবস্থিত দাগেস্তান রাশিয়ান ফেডারেশনের দরিদ্রতম এলাকাগুলোর একটি।
২০০৭ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে ককেশাস এমিরেট নামে একটি জিহাদি সংগঠন এবং পরে ককেশাসের ইসলামিক এমিরেট দাগেস্তান এবং প্রতিবেশী রাশিয়ান প্রজাতন্ত্র চেচনিয়া, ইঙ্গুশেটিয়া ও কাবারডিনো-বালকারিয়াতে হামলা চালায়।
মস্কোর পাশে ক্রোকাস সিটি হল নামে একটি কনসার্ট হলে হামলায় ১৪৫ জন নিহত হওয়ার ঘটনার প্রায় তিন মাস পর দাগেস্তানে এই হামলার ঘটনা ঘটল। ইসলামিক স্টেট (আইএস) ওই হামলা চালিয়েছিল।
যদিও গত মার্চ মাসে ক্রোকাস সিটি হলের হামলার পর রুশ কর্তৃপক্ষ ইউক্রেন এবং পশ্চিমের দিকে আঙুল তুলেছিল। পরে ইসলামিক স্টেট-খোরাসান (ইএস-তে) ওই হামলায় দায় স্বীকার করে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সেটি ছিল রাশিয়ার ভূখণ্ডে সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী হামলার ঘটনা।
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের যুক্তি ছিল, রাশিয়া ইসলামি সন্ত্রাসী হামলার লক্ষ্যবস্তু হতে পারে না। কারণ দেশটিতে আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতি এবং আন্তঃধর্মীয় ও আন্ত-জাতিগত ঐক্য রয়েছে।
তিন মাস আগে রাশিয়ার অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সংস্থা এফএসবি জানিয়েছে, তারা মস্কোর একটি উপাসনালয়ে হামলায় আইএসের পরিকল্পনা ব্যর্থ করে দিয়েছে।
ইউক্রেনে রাশিয়ার পূর্ণ মাত্রায় অভিযানের পর থেকে রুশদের বিশ্বাস, তাদের প্রধান প্রতিপক্ষ ইউক্রেন এবং ‘সম্মিলিত পশ্চিম’। রুশ কর্তৃপক্ষও এই বার্তা পরিবর্তন করতে অনিচ্ছুক, যাতে সরকারি বয়ান নিয়ে জনগণের মধ্যে সন্দেহ সৃষ্টি না হয়।
তথ্যসুত্র: বিবিসি, আল জাজিরা, রয়টার্স, আরটি, তাস