সরকারি কর্মচারীদের মহার্ঘ ভাতার দাবি মেটাতে গিয়ে উন্নয়ন খাতে অর্থ বরাদ্দ কমাতে যাচ্ছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার এরই মধ্যে সরকারি চাকুরেদের মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এখন বাজেট সংশোধন করে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার কমানোর সিদ্ধান্ত নিচ্ছে বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে সোমবার একনেক সভার পর সংবাদ সম্মেলনে ওয়াহিদ উদ্দিন বলেন, “সরকারি কর্মচারীদের বহু ধরনের দাবি-দাওয়া মেটাতে গিয়ে কিছু কিছু বেতন-ভাতা, মহার্ঘ ভাতা বাড়ানোর বিষয় আছে। কাজেই রাজস্ব খাতে ব্যয় কমিয়ে রাখা খুব কঠিন।
“আমাদের ওপর সমন্বয়ের দায়িত্ব এসে পড়েছে উন্নয়ন বাজেটের ওপর। অন্য জায়গা তো ঠিক রাখতে হবে। কারণ সামগ্রিক স্থিতিশীলতার জন্য বেশি ঘাটতি বাজেট করা যাবে না।”
চলতি অর্থ বছরের বাজেট ঘোষণার এক মাস পরই ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে পতন ঘটে আওয়ামী লীগ সরকারের। এরপর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচন দিয়ে বিদায় নেবে। তবে সেজন্য তারা আরও অন্তত দেড় বছর সময় নিতে চাইছে। ফলে পুরো অর্থবছরই এই সরকার যে ক্ষমতায় থাকছে, তা অনুমান করা যায়।
দেশে প্রায় ১৪ লাখ সরকারি কর্মচারীদের নতুন বেতন কাঠামো আসেনি প্রায় এক দশক হলো। এই অবস্থায় অন্তর্বর্তী সরকার তাদের মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে একটি কমিটি গঠন করেছে।
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বাবদ ৮১ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে।
মহার্ঘ ভাতা কত শতাংশ হবে, তা এখনও জানা যায়নি। তবে যদি ২০ শতাংশ মহার্ঘ ভাতা ঘোষণা হয়, তবে সরকারের অতিরিক্ত প্রায় ১৬ হাজার ৩১৬ কোটি টাকা খরচ করতে হবে।
আর ৩০ শতাংশ মহার্ঘ ভাতা দিতে চাইলে অতিরিক্ত ২৪ হাজার ৪৭৪ কোটি টাকা প্রয়োজন হবে সরকারের।
বাড়তি এই অর্থের সংস্থানের জন্যই এডিবি বরাদ্দ কমিয়ে সমন্বয় করতে চাইছে অন্তর্বর্তী সরকার।
চলতি বাজেটে এডিপিতে ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। প্রতি বছরই সংশোধিত বাজেটে এই বরাদ্দ কমাতে দেখা যায়।
উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন বলেন, বাজেট সংশোধন সাধারণত মার্চ মাসে করা হলেও তারা তা এগিয়ে আনতে চান।
তিনি বলেন, “এই বাজেটটা আমাদের তৈরি নয়, পূর্ববর্তী সরকারের তৈরি। এই বাজেটটা আমরা আরও আগে সংশোধন করতে চাই।
“কিন্তু তার জন্য কিছু প্রাক্কলন লাগবে। এনবিআর থেকে আমাদের রাজস্ব সংগ্রহ কতদুর হচ্ছে, বৈদেশিক সাহায্য কত দূর পাওয়া গেছে। এর ওপর নির্ভর করবে সহনীয় পর্যায়ে বাজেটের ঘাটতি রেখে উন্নয়ন বাজেটের আকার কী করব?”
উন্নয়ন খাতে বরাদ্দ কমালে তার নেতিবাচক প্রভাব প্রবৃদ্ধিতে পড়তে পারে বলে শঙ্কা থাকলেও অর্থনীতিবিদ ওয়াহিদউদ্দিন তেমনটা মনে করেন না।
তিনি বলেন, “উন্নয়ন বাজেটের আকার ছোট থাকলেই যে এটা প্রবৃদ্ধিতে খুব ক্ষতি করে, তা না।”
বড় বিনিয়োগ কমে গেলেও ছোট ছোট বিনিয়োগ প্রবৃদ্ধি নামার গতি ঠেকিয়ে দিতে পারে বলে মনে করেন ওয়াহিদউদ্দিন।
তিনি বলেন, “আমাদের দেশে দারিদ্র্য দূরীকরণের জন্য এবং কর্মসংস্থানের জন্য বিশেষ করে স্থানীয়ভাবে গ্রামাঞ্চলে খুব বেশি বিনিয়োগের দরকার হয় না। যেটা দরকার হয় প্রকল্পগুলো যাতে কর্মসংস্থান দিতে পারে। যাতে স্থানীয় মানুষের উপকার হয়।
“বাজেটের আকার কত দূর হলো, তার থেকে বড় কথা হলো প্রকল্পগুলো মানুষের কাজে আসছে কি না? কর্মসংস্থান হচ্ছে কি না এবং তাদের জীবিকায় লাভ হচ্ছে কি না?”
আওয়ামী লীগের দেড় দশকের শাসনকালে অপ্রয়োজনীয় অনেক বড় উন্নয়ন প্রকল্পও নেওয়া হয়েছিল বলে অন্তর্বর্তী সরকারের দাবি।
বর্তমানে মূল্যস্ফীতিকেই বড় চ্যালেঞ্জ মনে করছেন উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন।
তবে তিনি একইসঙ্গে বলেন, “মূল্যস্ফীতি এবং মূল্যস্তর এক কথা নয়। আলুর দাম অনেক বেশি। কিন্তু আলুর দাম যদি এখানেই থাকে, তাহলে আলুর মূল্যস্ফীতি শূন্য। এটা অনেকে বোঝে না।”