গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের লিফটে দীর্ঘ সময় আটকে থাকার পর এক রোগীর মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ছয় সদস্যের এই কমিটিকে আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে হবে।
রবিবার হাসপাতালটির ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা. মো. জাহাঙ্গীর আলমের সই করা এক চিঠিতে তদন্ত কমিটি গঠনের কথা জানানো হয়।
সেখানে বলা হয়, “আজ (১২ মে) এই কার্যালয়ের (শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল) জরুরি বিভাগে সকাল সাড়ে ছয়টায় ৫০ বছরের মমতাজ বেগম বি ব্লকের মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি হন। পরবর্তীতে তাকে আইসিইউ (নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র) স্থানান্তর করা হয়। রোগীকে আইসিউতে নেবার সময় হঠাৎ লিফট নষ্ট হয়ে যায়। রোগীকে আইসিইউতে শিফট করার আগেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
“প্রকৃতপক্ষে কী ঘটেছিল, ওয়ার্ডে কর্তব্যরত চিকিৎসক, নার্স, কর্মচারী বা লিফট অপারেটরদের রোগী ব্যবস্থাপনায় অবহেলা ছিল কিনা সংশ্লিস্ট বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করে এবং তদন্ত করে পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ছয় সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হলো।”
শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. রুবীন ইয়াসমীনকে প্রধান করে গঠিত এই তদন্ত কমিটিতে আরও রয়েছেন মেডিসিন বিভাগের ডা. শেখ কামরুল করিম, উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী নিয়াজুর রহমান, ওয়ার্ড মাস্টার মো.রাতুল ইসলাম এবং সদস্য সচিব হিসেবে রয়েছেন মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. মোস্তাফিজুর রহমান।
অফিস আদেশে এই কমিটিকে আগামী তিনদিনের মধ্যে লিখিত তদন্ত প্রতিবেদন পরিচালকের কার্যালয়ে জমা দিতে বলা হয়েছে।
সকালে গাজীপুরের এই হাসপাতালটির লিফটে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে আটকে থাকার সময় মমতাজ বেগম নামে এক রোগীর মৃত্যু হয়। পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, লিফটের ভেতরে আটকে পড়া অবস্থায় লিফটম্যানদের ফোন করা হলে উদ্ধার না করে তারা দুর্ব্যবহার করেন। পরে জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯–এ টেলিফোন করলে ফায়ার সার্ভিস সদস্যরা গিয়ে তাদের উদ্ধার করেন।
মমতাজের মেয়ে শারমিন আক্তার বলেন, “আমার মা সকালে অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে সকাল ৬টায় হাসপাতালে নিয়ে যাই। প্রথমে মেডিসিন বিভাগে ভর্তি করে পরীক্ষা–নিরীক্ষা করা হয়। সেখানে পরীক্ষার পর জানা যায়, হার্টের কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছে। পরে হাসপাতালের ১১ তালা থেকে ৪ তলার হৃদ্রোগ বিভাগে নেওয়ার কথা বলে।
“মাকে নয়ে লিফটের ওঠার পর ৯ তলার মাঝামাঝি হঠাৎ সেটি বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় মামা-ভাইসহ আমরা কয়েকজনও ভেতরে ছিলাম। আমাদের দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল। আমরা লিফটে থাকা তিনজন লিফটম্যানের নম্বরে কল দিই। তারা গাফিলতি করেন। ফোনে আমাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেন।”
৪৫ মিনিট ভেতরে অবস্থান করেছেন দাবি করে শারমিন জানান, উপায় না পেয়ে তারা জাতীয় জরুরি সেবা নম্বরে ফোন দেন। ফোন পেয়ে ফায়ার সার্ভিস সদস্যরা গিয়ে তাদের উদ্ধার করে।
‘ধাক্কাধাক্কির কারণে কাজ করেনি লিফটের ডোর সেফটি’
লিফটে আটকে থাকার সময়ের বিষয়ে রোগীর মেয়েসহ স্বজনদের দাবির সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছেন শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক।
তার দাবি, ১০ থেকে ১৫ মিনিটের মধ্যেই লিফট থেকে রোগী ও তার স্বজনদের বের করা গেছে।
সেইসঙ্গে লিফটে সমস্যার জন্য রোগীর স্বজনদের দায়ী করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
রোগীর মৃত্যুর বিষয়টি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে জানাতে রবিবার চিঠি দিয়েছেন শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা. মো. জাহাঙ্গীর আলম। সেখানেই এসব উঠে এসেছে।
সেখানে তিনি বলেন, “বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত ‘৪৫ মিনিট লিফটে আটকে’ থাকার তথ্য সঠিক নয়।”
চিঠিতে বলা হয়, শহীদ তাজউদ্দিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মেসার্স রওশন এলিভেটরসের সরবরাহ করা মোভি ব্র্যান্ডের একটি লিফট আনুমানিক বেলা সোয়া ১১ টার দিকে নবম ও দশম তলার মাঝামাঝি রোগী ও রোগীর দর্শনার্থীসহ আটকে যায়। প্রাথমিকভাবে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের জন্য আটকে গেলে লিফটের এআরডি কাজ করতে এক মিনিট সময় নেয়। কিন্তু ভেতরে থাকা রোগীসহ লোকজন দরজা ধাক্কাধাক্কি করায় লিফটের ডোর সেফটি কাজ করেনি। পরবর্তীতে অপারেটর মেশিন রুমে গিয়ে ম্যানুয়ালি লিফটটি একটি ফ্লোরে স্থির করার আগেই রোগীসহ লোকজন দরজা খুলে বের হয়ে আসে। এসব কাজ শেষ হতে ১০ থেকে ১৫ মিনিট সময় চলে যায়।
মৃত রোগীর হার্টের সমস্যা ছিল জানিয়ে চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, “তৎক্ষণাৎ রোগীকে জরুরি বিভাগে নিয়ে যাওয়া হয় এবং কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।”
লিফটটি নিয়মিত সার্ভিসিং ও মেইন্টেন্যান্স করা হয় জানিয়ে ভারপ্রাপ্ত পরিচালক চিঠিতে বলেছেন, “আটকে পড়া রোগীসহ অন্য সবাই লিফটে ধাক্কাধাক্কি করায় লিফটটির সমস্যা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। ঘটনাটির সঠিক কারণ অনুসন্ধান করতে এরই মধ্যে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।”