Beta
রবিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৫
Beta
রবিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৫

শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ভিন্ন খাতে নিতেই নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত : জামায়াত

জামায়াতের একটি বিক্ষোভ মিছিল।
জামায়াতের একটি বিক্ষোভ মিছিল।
[publishpress_authors_box]

সারাদেশে চলমান শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতেই বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে বলে মনে করে জামায়াত আমির শফিকুর রহমান।

তার মতে, নির্বাহী আদেশে জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধে সরকারের এই ঘোষণা সংবিধানের লঙ্ঘন।

বৃহস্পতিবার জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ করে  স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের প্রজ্ঞাপন জারির পর গণমাধ্যমে বিবৃতি পাঠায় জামায়াতে ইসলামী।

বিবৃতিতে দলটির আমির শফিকুর রহমান বলেন, “আমরা সরকারের এই অসাংবিধানিক, অগণতান্ত্রিক ও অন্যায় সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।”

সরকার নিজেদের অপকর্ম ঢাকতে জামায়াত ও ছাত্রশিবিরকে নির্বাহী আদেশবলে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে চলমান আন্দোলনকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে চাচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

এর আগে ১৯৭১ সালের ১২ ডিসেম্বর মুজিবনগর সরকারও নির্বাহী আদেশে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করেছিল। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর পুনর্বাসন করা হয় দলটি ও এর নেতাদের। যাদের বড় অংশের বিরুদ্ধেই ছিল মুক্তিযুদ্ধের সরাসরি বিরোধীতা করার অভিযোগ।

জিয়াউর রহমানের আমলে জামায়াত সক্রিয় ওঠা জামায়াতে ইসলামী এরশাদের আমলে সংসদেও আসন নেয়। এরপর ২০০১ সালে খালেদা জিয়ার সরকারে মন্ত্রী হন দলটির দুই নেতা। তাদের গাড়িতে ওঠে বহু রক্তের বিনিময়ে পাওয়া জাতীয় পতাকা।

বিবৃতিতে শফিকুর রহমান সেই মন্ত্রীত্বের প্রসঙ্গও টেনেছেন। তিনি বলেন, “বাংলাদেশে গ্রহণযোগ্য প্রতিটি নির্বাচনে জামায়াত অংশগ্রহণ করেছে ও নির্বাচিত হয়ে সংসদে প্রতিনিধিত্ব করেছে। জামায়াতের দুইজন মন্ত্রী গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় পরিচালনায় সততা, নিষ্ঠা ও স্বচ্ছতার অনন্য নজির স্থাপন করেছেন। বন্যাসহ দেশের যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগে জামায়াত সবসময়ই ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে ।”

জামায়াতে ইসলামী জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ ও চরমপন্থার বিরুদ্ধে সবসময় শক্ত অবস্থান নিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ায় জামায়াতের ছয়জন নেতাকে জঙ্গিদের বোমা হামলায় প্রাণ হারাতে হয়েছে। জামায়াতের সাথে সন্ত্রাসবাাদ ও নৈরাজ্যবাদের কোনও সম্পর্ক নেই।”

এরশাদ আমলে পাকিস্তার থেকে বাংলাদেশে ফিরলেও দলটির শীর্ষনেতা গোলাম আযম ১৯৯১ সালের নির্বাচনে বিএনপি সরকার গঠনের পর আমিরের দায়িত্ব নেন। যার প্রতিবাদে এবং যুদ্ধাপরাধীর বিচারের দাবিতে শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে আন্দোলন গড়ে ওঠে। জোরাল হয় জামায়াত নিষিদ্ধের দাবি।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের বিচারের উদ্যোগ নিলে একে একে ধরা পড়েন জামায়াতের শীর্ষনেতারা। বিচারে মৃত্যুদণ্ড হয় দলটির আমির মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মো. মুজাহিদসহ কয়েকজন শীর্ষনেতার। গোলাম আযম ও দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী আমৃত্যু কারাভোগের মধ্যে মারা যান।

যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে ২০১৩ সালে গড়ে ওঠা শাহবাগ আন্দোলন থেকে জামায়াত এবং দলটির ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবির নিষিদ্ধের দাবি আবার জোরেশোরে ওঠে।

এর মধ্যেই উচ্চ আদালতের রায়ে জামায়াত নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন হারায় ২০১৩ সালে। তখন থেকে তারা দলীয়ভাবে কোনও নির্বাচনে অংশ নিতে পারছিল না। এখন নিষিদ্ধই হলো দলটি।

তবে রাজনীতিতে নিষিদ্ধ হলেও দলের মূল কাজ ইসলামের আদর্শ প্রতিষ্ঠার লড়াই কখনও বন্ধ হবে না বলে বিবৃতিতে তুলে ধরেছেন বর্তমান আমির।

তিনি বলেন, “সরকার নিষিদ্ধ ঘোষণা করলেই জামায়াতে ইসলামীর মূল কাজ ইসলামের দাওয়াত, মানুষের চরিত্র সংশোধন ও ইসলামের সুমহান আদর্শ প্রতিষ্ঠার কাজ কখনও বন্ধ হবে না।”

জামায়াতের সব স্তরের জনশক্তিকে ধৈর্য্য ও সহনশীলতার সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবেলার আহ্বানও জানান তিনি।

দেশবাসীর উদ্দেশে তিনি বলেন, “সরকার দেশে গণহত্যা চালিয়ে বিরোধী রাজনৈতিক দলের উপর দোষ চাপানোর যে প্রচেষ্টা চালিয়েছে তা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে। সরকার বিভিন্ন অঘটন ঘটিয়ে জামায়াতের উপর দোষ চাপানোর চেষ্টা চালাতে পারে। এই ব্যাপারে দেশবাসী সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। সরকারের পাতা ফাঁদে পা দেওয়া যাবে না।”

যুগে যুগে ইসলামের উপর কোনও আঘাতই আন্দোলনকে স্তব্ধ করে দিতে পারেনি উল্লেখ করে তিনি বলেন, “বর্তমান সরকারসহ কারো আঘাতেই ইসলামী আন্দোলন স্তব্ধ হবে না।

“আমি দেশের প্রতিটি নাগরিককে সরকারের গণহত্যা, মানুষের অধিকার হরণ, জুলুম-নিপীড়ন ও ‘বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী’ ও ‘বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির’ কে নিষিদ্ধ করার অসাংবিধানিক সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে নিয়মতান্ত্রিকভাবে প্রতিবাদে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।

“সেই সঙ্গে বিশ্বের গণতান্ত্রিক দেশ, প্রতিষ্ঠান, মানবাধিকার সংস্থা ও সংগঠন এবং বিশ্ববিবেককে বাংলাদেশের ডামি সরকারের সকল অগণতান্ত্রিক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছি।”

কেবল বাংলাদেশেই নয়, অখণ্ড ভারতে জামায়াতে ইসলামীর প্রতিষ্ঠা হলেও যে পাকিস্তানকে ভিত্তি করে এই দলটি সংগঠিত হয়েছিল, সেই দেশেও একাধিকবার নিষিদ্ধ হয়েছিল ইসলামী দলটি।

১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের পর পাকিস্তানে অন্তত দুই বার জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। দলটির প্রতিষ্ঠাতা আবুল আলা মওদুদীর মৃত্যুদণ্ডও হয়েছিল আদালতের রায়, যদিও তাকে সেই শাস্তি ভোগ করতে হয়নি।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত