ঢাকার ভিকারুননিসা নূন স্কুলের প্রথম শ্রেণির ১৬৯ শিক্ষার্থীর ভর্তি বাতিলের সিদ্ধান্ত বহাল রেখে রায় দিয়েছে হাইকোর্ট। একই সঙ্গে স্কুলটির ভর্তি প্রক্রিয়ায় কিংবা অনলাইন সিস্টেমে কোনও অনিয়ম ছিল কিনা তা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটিও গঠন করে দেওয়া হয়েছে।
১৬৯ শিক্ষার্থীর ভর্তি বাতিল প্রশ্নে জারি করা রুল যথাযথ ঘোষণা করে মঙ্গলবার রায় দেয় বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক-আল-জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ।
রায়ে অপেক্ষায় থাকা শিক্ষার্থীদের ভর্তি আগামী ১৫ দিনের মধ্যে নিশ্চিত করতে বলা হয়।
রিট আবেদনকারীর পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন আইনজীবী শামীম সরদার, ১৬৯ শিক্ষার্থীর পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার মুস্তাফিজুর রহমান খান ও ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কাজী মঈনুল হাসান।
শামীম সরদার বলেন, এই রায়ের ফলে ১৬৯ শিক্ষার্থীর ভর্তি বাতিল হয়ে গেল। এখন শূন্য আসনে অপেক্ষায় থাকা শিক্ষার্থীদের আগামী ১৫ দিনের মধ্যে ভর্তি করতে হবে।
পরে সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন সাংবাদিকদের বলেন, ১৬৯ শিক্ষার্থীর ভর্তি বাতিল করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে ভর্তি প্রক্রিয়ায় জটিলতা কী আছে তা খতিয়ে দেখতে কমিটিও গঠন করে দিয়েছেন আদালত।
“এখন আমাদের বক্তব্য হলো-গাফিলতি বা দুর্নীতি থাকলে সেটি থাকতে পারে মাউসির, থাকতে পরে ভিকারুননিসা স্কুলের। এই ১৬৯ শিক্ষার্থী কিন্তু লটারির মাধ্যমে এসেছে। এখানে অভিভাবকদের পক্ষ থেকে কোনও ধরনের জালিয়াতি ছিল এমনটি কেউ বলেওনি।
“কিন্তু রায়ের নির্দেশনায় বোঝা যায়, অনিয়ম বা দুর্নীতির জন্য প্রতিষ্ঠানগুলো কেউ দায়ী হলো না, দায় হলো ১৬৯ শিক্ষার্থী এবং তাদের অভিভাবকের।”
এই ১৬৯ শিক্ষার্থী যারা এরই মধ্যে ক্লাস শুরু করেছে তাদের কী হবে সে প্রশ্নও তোলেন তিনি।
এই আইনজীবী বলেন, “এই ঘটনা বিশ্বের অন্য কোনও দেশে হলে শিশুপ্রতি অন্তত এক মিলিয়ন ডলার করে ক্ষতিপূরণ আদায় করা যেত।”
এসব শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা চাইলে আপিলে যাবেন বলেও জানান তিনি।
এর আগে গত ৬ মার্চ বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক-আল-জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ শূন্য আসনে অপেক্ষমান তালিকা থেকে ভর্তির নির্দেশ দেয়। পরে এ আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে যায় ভর্তি বাতিল হওয়া শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা।
২০ মার্চ ওই শিক্ষার্থীদের ভর্তির ক্ষেত্রে স্থিতবস্থা জারি করে দুই মাসের মধ্যে হাইকোর্টকে এ সংক্রান্ত রুল নিষ্পত্তি করতে নির্দেশ দিয়েছিল দেশের সর্বোচ্চ আদালত আপিল বিভাগ। সেই আদেশের ধারাবাহিকতায় রুল শুনানি শেষে আজ রায় ঘোষণা করা হলো।
ভিকারুননিসা নূন স্কুলে ভর্তির ক্ষেত্রে বয়সের নিয়ম না মানার অভিযোগ এনে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তিচ্ছু দুই শিক্ষার্থীর মা গত ১৪ জানুয়ারি হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন। ওই আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২৩ জানুয়ারি হাইকোর্ট রুলসহ আদেশ দেয়।
হাইকোর্টের আদেশ অনুযায়ী ২৮ ফেব্রুয়ারি মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) একটি স্মারক হাইকোর্টে উপস্থাপন করে।
এতে ভিকারুননিসার চারটি শাখায় ২০২৪ শিক্ষাবর্ষে প্রথম শ্রেণিতে বিধিবহির্ভূতভাবে ১৬৯ শিক্ষার্থীর ভর্তি বাতিল করে জরুরি ভিত্তিতে মাউশিকে জানাতে বলা হয়। সেদিন শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট মাউশির ওই সিদ্ধান্ত (স্মারক) বাস্তবায়ন (কমপ্লায়েন্স) বিষয়ে হলফনামা আকারে ভিকারুননিসার অধ্যক্ষকে ৬ মার্চের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেয়।
এর ধারাবাহিকতায় মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৪ শিক্ষাবর্ষে প্রথম শ্রেণির ১৬৯ শিক্ষার্থীর ভর্তি বাতিল করা হয়েছে বলে আদালতকে জানায় স্কুল কর্তৃপক্ষ। এরপরে হাইকোর্ট ১৬৯ শিক্ষার্থীর শূন্য আসনে অপেক্ষমান তালিকা থেকে ভর্তির নির্দেশ দিয়েছিল।