স্বাগতিক নেপালকে হারিয়ে অনূর্ধ্ব-২০ সাফে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশ। দলের কোচ মারুফুল হক এই জয় উৎসর্গ করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত শহীদদের উদ্দেশ্যে।
ফাইনাল শেষে সংবাদ সম্মেলনে মারুফুল বলেন, “আমাদের এই ট্রফি উৎসর্গ করতে চাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতা আন্দোলনে যারা আত্মত্যাগ করেছেন তাদের উদ্দেশ্যে।”
স্বাগতিক নেপালের বিপক্ষে দর্শকভর্তি মাঠে খেলাটা কঠিন ছিল বাংলাদেশের জন্য। এই ম্যাচে বাংলাদেশকে জেতানোয় সব কৃতিত্ব তিনি ফুটবলারদের দিয়েছেন, “ এই ম্যাচ শুরুর আগে মাত্র ১ দিন প্রস্তুতির জন্য সময় পেয়েছি। রিকভারি হয়নি সেভাবে। তারপরও ম্যাচ শুরুর আগে ওদের বলেছি স্লো খেলার জন্য। ঘরের মাঠের সুবিধা নিয়ে ওরা আক্রমণে উঠেছে আগে। আমরা চেয়েছি কাউন্টার অ্যাটাক করতে। কিন্তু এক সময় দেখি ওরা চাপ নিয়ে ফেলেছে। এরপর কৌশল বদলে আমরাই অ্যাটাকে চলে যাই। ছেলেদের পাসিং ফুটবল খেলানোর চেষ্টা করেছি। ফাইনাল ম্যাচে যেমনটা চেয়েছি তেমন করতে পেরেছে ওরা। ফুটবলাররাই তাই এই জয়ে ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য।”
বাংলাদেশ এই টুর্নামেন্টের শুরুই করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রয়াতদের স্মরণ করে। টুর্নামেন্টে নিজেদের প্রথম গোল করে গোলদাতা মিরাজুল ইসলাম আলাদা একটি টি শার্ট পরেন। সেই টি শার্ট ছিল আবু সাঈদ ও মুগ্ধর স্মরণে। বুধবার ফাইনালে গোলের পরও এই শহীদদের স্মরণ করে গোল উদযাপন করেন ফুটবলাররা।
মিরাজুল ইসলাম ফাইনালে জোড়া গোল ছাড়াও টুর্নামেন্টে আরও দুই গোল করেছেন। ৪ গোল করে টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ গোলদাতার পুরস্কার জেতেন তিনি। বাফুফের এলিট একাডেমি থেকে উঠে আসা এই ফুটবলার ফ্রি কিক থেকে দুর্দান্ত এক গোল করেন। এমন একটি গোল করে নিজেও অবাক মিরাজুল। বিস্ময়ের ঘোর যেন কাটছিলই না মিরাজুলের, “সর্বোচ্চ গোলদাতার পুরস্কার পাবো এটা মোটেও ভাবিনি। তাছাড়া সেট পিসে যে গোল করেছি, সেটা যে গোল হবে নিজেও ভাবিনি আমি। আমি শুধু গোল করে দলকে সাহায্য করতে চেয়েছিলাম। সেই চেষ্টা করেছি।”
বাংলাদেশ দলের প্রধান গোলরক্ষক মেহেদি হাসান শ্রাবণ দুর্ভাগ্যজনকভাবে চোট পেয়ে টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে গেছেন। কিন্তু বদলি হিসেবে নেমে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করে সেমিফাইনালে টাইব্রেকারে দুটি শট ঠেকিয়ে বাংলাদেশকে ফাইনালে তোলেন বদলি গোলরক্ষক মোহাম্মদ আসিফ। এরপর নেপালের বিপক্ষে ফাইনালেও দুর্দান্ত কিছু সেভ করেছেন তিনি। হয়েছেন টুর্নামেন্টের সেরা গোলরক্ষক। এই পুরস্কার পাওয়ার পর আসিফ বলেন, “মাত্র ২ ম্যাচ খেলে সেরা গোলরক্ষক হয়েছি। আমার তো বিশ্বাসই হচ্ছে না। আসলে বয়স ভিত্তিক সব টুর্নামেন্টে খেলেও কখনও চ্যাম্পিয়ন হতে পারিনি। গত সাফে ভারতের কাছে হেরে কেঁদেছিলাম। এবার চেয়েছিলাম জয় নিয়ে ফিরতে। সেটা করতে পেরেছি বলে খুশি।”
বাংলাদেশের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার অন্যতম নায়ক রাব্বি হোসেন রাহুল। নেপালের বিপক্ষে ফাইনালে করেছেন ১ গোল। যশোরের বেনাপোলের এই ফুটবলার বলেন, “এই ট্রফি আমার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় অর্জন। সবাই চেয়েছিল আমি যেন আজ গোল করি। বিশেষ করে মিরাজকে ধন্যবাদ। ও সহযোগিতা করেছে বলে গোল করতে পেরেছি। নেপাল যেহেতু গ্রুপ পর্বে হারিয়েছিল আমাদের, জানতাম ওদের আত্মবিশ্বাস তুঙ্গে থাকবে। আমরা ওই সুযোগটা নিতে চেয়েছি। মাঠে অনেক দর্শক ছিল। কিন্তু এত দর্শকের মাঝে খেলাটা দারুণভাবে উপভোগ করেছি।”