Beta
বুধবার, ১৫ জানুয়ারি, ২০২৫
Beta
বুধবার, ১৫ জানুয়ারি, ২০২৫

ডেঙ্গুতে এত মৃত্যুর কারণ দেরি করে হাসপাতালে আসা : স্বাস্থ্য অধিদপ্তর

ss-dengue-dhaka-hospital-11112024-02
[publishpress_authors_box]

ভয়ঙ্কর অক্টোবরের পর নভেম্বরে রেকর্ড সংখ্যক মানুষের প্রাণ গেছে ডেঙ্গুতে। এখনও চোখ রাঙাচ্ছে এইডিস মশাবাহিত এ রোগ। প্রতিদিনই বাড়ছে ভর্তি রোগী ও প্রাণহানির সংখ্যা। সরকারি হিসাবে সোমবার ২ ডিসেম্বর সকাল ৮টা পর্যন্ত চলতি বছর দেশে ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে মোট ৯৩ হাজার ৫৬ জন। এ রোগে প্রাণ গেছে ৪৯৭ জনের। 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলেও গুরুত্ব না দেওয়া এবং সময়মতো হাসপাতালে না আসাই এ রোগে এত মৃত্যুর কারণ।

সোমবার অধিদপ্তরের সভাকক্ষে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, বর্তমানে এইডিস মশা বাহিত এই রোগের পাশাপাশি জিকা ও চিকুনগুনিয়ার রোগীও পাওয়া যাচ্ছে।

সংবাদ সম্মেলনে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবু জাফর বলেন, চলতি বছর ডেঙ্গুতে মৃতদের মধ্যে ২০ থেকে ৪০ বছর বয়সী মানুষ বেশি। তাদের বেশিরভাগই ঢাকার বাসিন্দা। চট্টগ্রাম বিভাগে বৃদ্ধ ও শিশু মৃত্যুহার অপেক্ষাকৃত বেশি।

আর এসব মৃত্যুর কারণ হিসেবে ডেঙ্গুকে মানুষের কম গুরুত্ব দেওয়াকে দায়ী করেন তিনি।

অধ্যাপক আবু জাফর বলেন, জলবায়ু পরিবতর্নের কারণে এই সময়ে ডেঙ্গু সংক্রমণ অব্যাহত থাকলেও ডেঙ্গু হলে মানুষ কম গুরুত্ব দিচ্ছে, তাই মৃত্যুটা বাড়ছে।

তিনি বলেন, মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছে, কিন্তু পরিস্থিতি জটিল না হওয়া পর্যন্ত সাধারণত তারা হাসপাতালে আসছে না। যার কারণে খুব অল্প সময়ের মধ্যে অবস্থা জটিল হয়ে যাচ্ছে, রোগী শকে চলে যাচ্ছে। পেটে ও ফুসফুসে পানি জমে যাচ্ছে।

এমন একটা সময়ে রোগীরা হাসপাতালে আসছে যে তাদের জন্য আর কিছু করার থাকছে না, করা যাচ্ছে না। শুধু দেরি করে হাসপাতালে হাসপাতালে আসার কারণেই মৃত্যুটা বেশি হচ্ছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সংবাদ কর্মীদের ডেঙ্গু বিষয়ক সংবাদ সম্মেলনের কথা আগের দিন জানায়। সংবাদ সম্মেলনে উঠে আসে এইডিস মশাবাহিত অন্য দুই রোগ জিকা এবং চিকুনগুনিয়ার কথাও।

অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবু জাফর বলেন, “ডেঙ্গু জ্বরের পাশাপাশি বর্তমান সময়ে ‍চিকুনগুনিয়া এবং জিকা ভাইরাস নিয়েও আতঙ্ক তৈরি হয়েছে।”

তবে জিকা ও চিকুনগুনিয়া নিয়ে এখন অনেক বেশি দুশ্চিন্তার কারণ নেই বলে মনে করেন তিনি।

অধ্যাপক আবু জাফর জানান, জিকা ভাইরাসে আক্রান্তদের ৯০ শতাংশের বেলাতেই কোনও লক্ষণই দেখা যায় না, সেইসঙ্গে এখানে মৃত্যুহার শূন্য।

তিনি বলেন, “ডেঙ্গু ভাইরাস শনাক্ত করতে গিয়ে এই দুইটি ভাইরাসের রোগী মিলেছে। জিকা ও চিকনগুনিয়ায় মৃত্যুহার কম। তাই আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। তবে আমাদের সচেতন থাকতে হবে।”

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক জানান, রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান ( আইইডিসার) চলতি বছরে দেশে ১১ জন জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করেছে। চিকুনগুনিয়া শনাক্ত হয়েছে ৬৭ জনের।

জিকা ও চিকুনগুনিয়া সংক্রমিতদের অধিকাংশই ঢাকার বাসিন্দা বলেও জানান তিনি।

ডেঙ্গু : ভর্তি রোগী ছাড়াল ৯৩ হাজার, মৃত্যু ৫০০ ছুঁইছুঁই 

ডেঙ্গু এবার ভোগান্তি দেবে। বিশেষজ্ঞদের এ আশঙ্কা সত্যি প্রমাণ করে চলতি বছরের আগস্টে বাড়তে থাকে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীর সংখ্যা। বাড়তে থাকে মৃত্যুর সংখ্যাও। ফলে অক্টোবরের ভয়ঙ্কর রূপের পর নভেম্বরে হয়েছে সর্বোচ্চ মৃত্যু।

আর চলতি মাসের দ্বিতীয় দিনেই হাসপাতালে ভর্তি ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে ৯৩ হাজার। এ রোগে প্রাণ গেছে প্রায় ৫০০ জনের।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, রবিবার সকাল ৮টা থেকে সোমবার সকাল ৮টা পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৭০৫ জন ডেঙ্গু রোগী। এ সময়ে মৃত্যু হয়েছে তিন জনের।

তাদের নিয়ে চলতি মাসের (ডিসেম্বর) প্রথম দুই দিনে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে এক হাজার ৫৮৭ জন; মারা গেছে ৯ জন। এনিয়ে চলতি বছরে হাসপাতালে ভর্তি হলো ৯৩ হাজার ৫৬ জন ডেঙ্গু রোগী। আর মৃত্যু হলো ৪৯৭ জনের।

অধিদপ্তর জানাচ্ছে, সর্বশেষ যে তিনজন মারা গেছে তারা ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন, ঢাকা বিভাগ এবং খুলনা বিভাগের হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিল। তাদের মধ্যে দুই জন নারী; এক জন পুরুষ। তাদের সবার বয়স ৫১ থেকে ৫৫ বছরের মধ্যে।

অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় সবচেয়ে বেশি রোগী ভর্তি হয়েছে ঢাকা বিভাগের হাসপাতালে ১৫৯ জন। এরপর ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ২৪৪ জন, খুলনা বিভাগে ৯৬ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৭৩ জন, বরিশাল বিভাগে ৬০ জন, রাজশাহী বিভাগে ৪৩ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ১৮ জন, রংপুর বিভাগে ১০ জন এবং সিলেট বিভাগে দুই জন।

অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছে ৮৯ হাজার ৭৮০ জন। মোট রোগীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি রোগী ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে ১৯ হাজার ৭১৩ জন। মোট মৃত্যুর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে ২১০ জন।

অধিদপ্তরের হিসাবে, ডেঙ্গুতে গত মাস নভেম্বরে ১৭৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। মশাবাহিত এই রোগে এক মাসে এত মৃত্যু এই বছরে আর হয়নি। এর আগে সবচেয়ে বেশি ১৩৫ জনের মৃত্যু হয় অক্টোবরে।

বাংলাদেশে ডেঙ্গুতে এই পর্যন্ত এক মাসে সবচেয়ে বেশি রোগীর মৃত্যু ঘটেছিল ২০২৩ সালের আগস্টে, সেই মাসে ৩৪২ জন মারা গিয়েছিল। বছরে মৃত্যুর রেকর্ডও ২০২৩ সালের, সংখ্যাটি ১ হাজার ৬৯৭।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত